পঞ্চানন কর্মকার
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পঞ্চানন কর্মকার বাংলা মুদ্রণাক্ষরের স্রষ্টা ও মুদ্রণশিল্পের প্রযুক্তিবিদ।
[সম্পাদনা] জন্ম
হুগলী জেলার ত্রিবেণীতে। তাঁর পূর্বপুরুষ পেশায় ছিলেন কর্মকার বা লৌহজীবি। কিন্তু বেশ কয়েক পুরুষ আগে তাঁরা ছিলেন লিপিকার। তাম্রপটে, অস্ত্রশস্ত্রে অলঙ্করণ বা নামাঙ্কনের কাজে তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ। তাঁর চরিত্রেও পূর্বপুরুষদের এই শিল্পবৃত্তির গুনপনার প্রকাশ ঘটে।
[সম্পাদনা] কর্মজীবন
১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে চার্লস উইলকিন্স যখন হুগলীতে নাথানিয়াল ব্রাসি হ্যালহেডের লেখা এ গ্রামার অব দ্যা বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ বইটি মুদ্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তখন পঞ্চানন তাঁর প্রযুক্তি জ্ঞান নিয়ে বাংলা হরফ প্রস্তুতের কাজে উইলকিন্স কে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। বইটির মুদ্রণে ছেনিকাটা, ঢালাই করা চলনশীল বা বিচল যে ধাতব হরফ ব্যবহার করা হয়, তা উইলকিন্স এবং পঞ্চাননের যৌথ প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছিলো। ১৭৭৯ সালে তদানীন্তন গভর্ণর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের উৎসাহে উইলকিন্সের পরিচালনাধীনে কলিকাতায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ছাপাখানায় তিনি কাজ শুরু করেন। আঠারো শতকের শেষ দিকে উইলিয়াম কেরীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। ১৭৯৯ সালে তিনি কেরীর প্ররোচনায় শ্রীরামপুর মিশনের প্রেসে যোগদান করেন। একটি পুরানো মেশিন নিয়ে এই প্রেসের কাজ শুরু হয়। কিন্তু পঞ্চাননের মেধা, অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অল্প দিনের মধ্যে এটি এশিয়ার বৃহত্তম অক্ষর তৈরীর কারখানা অর্থ্যাৎ টাইপ ফাউন্ড্রিতে পরিণত হয়। ১৮০১ সালে তাঁর তৈরী হরফে বাংলায় বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট এর কেরীকৃত অনুবাদ ছাপা হয়। ১৮০৩ সালে তিনিই প্রথম ভারতবর্ষে নাগরী ভাষায় হরফ নির্মাণ করেন। কেরীর সংস্কৃত ব্যকরণ মুদ্রণের জন্য তিনি নাগরী ভাষায় হরফ তৈরী করেন। পরে তিনি আরও ছোট ও সুন্দর এক সাঁট বাংলা হরফ তৈরী করেন। বাংলা মুদ্রণশিল্পে দীর্ঘকাল তাঁর তৈরী হরফের প্রচলন ছিলো।
[সম্পাদনা] মৃত্যু
১৮০৪ সালে তিনি পরলোক গমন করেন।