মহা বিস্ফোরণ তত্ত্ব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মহা বিস্ফোরণ তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব একটি অতি ঘন বিন্দুবৎ অবস্থা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।
মহা বিস্ফোরণ তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব একটি অতি ঘন বিন্দুবৎ অবস্থা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।
ভৌত বিশ্বতত্ত্ব
ভৌত বিশ্বতত্ত্ব

মহাবিশ্ব · মহাবিশ্বের বয়স
মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি

আদি মহাবিশ্ব

মহা বিস্ফোরণ · স্ফীতিশীলতা
মহা বিস্ফোরণ কেন্দ্রীন সংশ্লেষ
ল্যাস্ব্‌ডা-সিডিএম নকশা
মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমি

সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব

লাল অপসারণ · হাবলের নীতি
মহাকাশের মেট্রিক সম্প্রসারণ
ফ্রিদমান সমীকরণ
এফএলআরডব্লিউ মেট্রিক

গাঠনিক পদ্ধতি

মহাবিশ্বের আকৃতি
মহাবিশ্বের গঠন · ছায়াপথ গঠন
বৃহৎ-পরিসর গঠন

উপাদানসমূহ

অদৃশ্য শক্তি · অদৃশ্য বস্তু

ইতিহাস
বিশ্বতত্ত্বের কালপঞ্জি
মহা বিস্ফোরণের কালপঞ্জি...
বিশ্বতাত্ত্বিক পরীক্ষণসমূহ

২ডিএফ গ্যালাক্সি রেডশিফ্ট সার্ভে
এসডিএসএস · কোবে
বুমেরাং পরীক্ষণ · ডব্লিউএমএপি

বিজ্ঞানীবৃন্দ

আলবার্ট আইনস্টাইন · লেমাইট্‌র
ফ্রিদমান · এডুইন হাবল
জর্জ গ্যামো · অ্যালান পেনজিয়াস
উইলসন · ম্যাথার
রবার্ট ডিক · জর্জ স্মুট
জেলদোভিচ · · অন্যান্য

আজ থেকে প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে এই মহাবিশ্ব একটি অতি ঘন এবং উত্তপ্ত অবস্থা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। এই ধারণাটিকেই ভৌত বিশ্বতত্ত্বে মহাবিস্ফোরণ বা বৃহৎ বিস্ফোরণ বলে বোঝানো হয়। বিজ্ঞানী এডুইন হাবল প্রথম বলেন, দূরবর্তী ছায়াপথসমূহের বেগ একসাথে করে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এরা পরষ্পর দূরে সরে যাচ্ছে অর্থাৎ মহাবিশ্ব ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ফ্রিডম্যান-লেমাইট্‌র নকশা অনুসারে এটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই তত্ত্বসমূহের সাহায্যে অতীত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় সমগ্র মহাবিশ্ব একটি সুপ্রাচীন বিন্দু অবস্থা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই অবস্থায় সকল পদার্থ এবং শক্তি একটি অতি উত্তপ্ত এবং ঘন অবস্থায় ছিল। কিন্তু এই অবস্থার আগে কি ছিল তা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে কোন ঐক্য নেই। অবশ্য সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে এর আগের সময়ের ব্যাখ্যার জন্য মহাকর্ষীয় ব্যতিক্রমী বিন্দু নামক একটি শব্দের প্রস্তাব করেছে।

মহাবিস্ফোরণ শব্দটি স্থূল অর্থে প্রাচীনতম একটি বিন্দুর অতি শক্তিশালী একটি বিস্ফোরণকে বোঝায় যার মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল, আবার অন্যদিকে এই বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও গঠন নিয়ে বিশ্বতত্ত্বে যে মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে তাকেও বোঝায়। এর মাধ্যমেই মহাবিশ্বের প্রাচীনতম বস্তুসমূহের গঠন সম্পর্কে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, যার জন্য মহাবিস্ফোরণ মতবাদের পরই আলফার-বেথে-গ্যামো তত্ত্ব প্রণীত হয়েছে। মহাবিস্ফোরণের একটি উল্লেখযোগ্য ফলাফল হল, বর্তমানকালে মহাবিশ্বের অবস্থা অতীত এবং ভবিষ্যতের অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। এই তত্ত্বের মাধ্যমেই ১৯৪৮ সালে জর্জ গ্যামো অনুমান করতে পেরেছিলেন যে মহাজাগতিক ক্ষুদ্র তরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের (cosmic microwave background radiation - CMB) অস্তিত্ব রয়েছে। ১৯৬০-এর দশকে এটি আবিষ্কৃত হয় এবং স্থির অবস্থা তত্ত্বকে অনেকটাই বাতিল করে মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বকে প্রমাণ করতে সমর্থ হয়।

সূচিপত্র

[সম্পাদনা] ইতিহাস

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মহা বিস্ফোরণের ইতিহাস

আরও দেখুন: বিশ্বতত্ত্বের কালপঞ্জি

মহাবিশ্বের গঠন এবং এর সাথে তত্ত্বীয় উপাদানসমূহের সমন্বয় সাধনের চেষ্টা থেকেই মহা বিস্ফোরণ তত্ত্বের উৎপত্তি হয়েছে। মহাকাশ পর্যবেক্ষকরা দেখতে পান যে অধিকাংশ কুণ্ডলাকার নীহারিকা পৃথিবী থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। অবশ্য বিশ্বতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর ব্যাখ্যা আরও পরে হয়েছে, বর্তমানকালে আমরা জানি, যে নীহারিকাগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, সেগুলো আসলে নীহারিকা নয়, বরং আমাদের আকাশগঙ্গার বাইরের ছায়াপথ ছিল[১]। বেলজিয়ামের একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারক জর্জেস লেমাইট্‌র ১৯২৭ সালে প্রথম স্বাধীনভাবে আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণ থেকে ফ্রিডম্যান-লেমাইট্‌র-রবার্টসন-ওয়াকার সমীকরণসমূহ উপপাদন করেন। আইনস্টাইন সাধারণ আপেক্ষিকতার জন্য এই ক্ষেত্র সমীকরণসমূহের গোড়াপত্তন করেছিলেন। ফ্রিডম্যান সমীকরণ উপপাদনের পর কুণ্ডলাকার নীহারিকার ক্রম পশ্চাদপসারণের উপর ভিত্তি করে লেমাইট্‌র প্রস্তাব করেন যে, মহাবিশ্ব একটি সুপ্রাচীন পরমাণু থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে, যে প্রস্তাব বর্তমানে মহা বিস্ফোরণ নামে পরিচিত।[২]

এর দুই বছর পর এডুইন হাবল লেমাইট্‌রের তত্ত্বের সপক্ষে একটি পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণ উপস্থাপন করেন। তিনি আবিষ্কার করেন যে পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান ছায়াপথসমূহ থেকে নিঃসৃত আলোর লাল অপসারণ হচ্ছে এবং এই অপসারণ পৃথিবী থেকে তাদের দূরত্বের সমানুপাতিক। অর্থাৎ একটি ছায়াপথ পৃথিবী থেকে যত দূরে তা থেকে নিঃসৃত আলোর বর্ণালীর মধ্যে ততই লাল আলো প্রকট হয়ে উঠছে। এই ঘটনাটি বর্তমানে হাবলের নীতি নামে পরিচিত।[৩][৪]বিশ্বতাত্ত্বিক নীতি অনুসারে মহাবিশ্বকে যখন যথেষ্ট বৃহৎ স্কেলের দূরত্বের সাপেক্ষে দেখা হয় তখন এর কোন নির্দিষ্ট দিক বা বিশিষ্ট দিক ও স্থান পাওয়া যায় না। এই নীতিকে সত্য মেনেই হাবল প্রমাণ করেছিলেন যে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু এই তত্ত্ব স্বয়ং আইনস্টাইন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অসীম এবং অপরিবর্তনীয় বিশ্বের তত্ত্বের সম্পূর্ণ বিরোধী। [৫]

ডব্লিউএমএপি নামক কৃত্রিম উপগ্রহ মহা বিস্ফোরণ বোঝার জন্য তথ্য সংগ্রহ করছে- শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি
ডব্লিউএমএপি নামক কৃত্রিম উপগ্রহ মহা বিস্ফোরণ বোঝার জন্য তথ্য সংগ্রহ করছে- শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি

দুইটি স্বতন্ত্র সম্ভাবনা রয়েছে। একটি ফ্রেড হয়েলের স্থির অবস্থা নকশা, যা অনুসারে মহাবিশ্ব যখন সম্প্রসারিত শুরু করে তখন এখানে নতুন পদার্থ সৃষ্টি হতে পারে। এই নকশা অনুসারে সময়ের যে কোন বিন্দুতে মহাবিশ্ব একইরকম থাকে।[৬] অন্যটি হল লেমাইট্‌রের মহা বিস্ফোরণ তত্ত্ব যা মূলত জর্জ গ্যামো কর্তৃক পূর্ণতা লাভ করেছে। লেমাইট্‌রের এই তত্ত্বটির নাম কিন্তু হয়েলই দিয়েছিলেন। হয়েল ১৯৪৯ সালের ২৮ মার্চ তারিখে বিবিসিতে প্রচারিত থার্ড প্রোগ্রাম নামক অনুষ্ঠানে অনেকটাই শ্লেষের বশে লেমাইট্‌রের এই তত্ত্বটিকে "বিগ ব্যাং" বলে আখ্যায়িত করেন যার দ্বারা একটি বিশাল গণ্ডগোলই বুঝায়। এর পরেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে এই নামটি ব্যবহার করতে দেখা যায়। বিশেষত ১৯৫০ সালে "বস্তুর ধর্মের" উপর প্রদত্ত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতায় লেমাইট্‌রের তত্ত্বকে বোঝানোর জন্য তিনি এই নাম ব্যবহার করেন। বক্তৃতা প্রচারিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই এর প্রতিটি দ্য লিসেনার পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। এই পত্রিকাতেই "বিগ ব্যাং" নামটি প্রথম ছাপার অক্ষরে ব্যবহৃত হয়।[৭] হয়েল এবং লেমাইট্‌র কর্তৃক প্রস্তাবিত এই দুটি নকশা ছাড়াও মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে আরো বেশ কিছু নকশা প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মাইন নকশা (Milne model)[৮], রিচার্ড টলম্যান কর্তৃক প্রস্তাবিত কম্পনশীল মহাবিশ্ব[৯] এবং ফ্রিট্‌জ জুইকি প্রস্তাবিত দুর্বল আলো প্রকল্প।[১০]

কিছু সময়ের জন্য স্থির অবস্থা এবং মহা বিস্ফোরণ দুইটি তত্ত্বেরই যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা ছিল বিধায় বিতর্কেরও অবকাশ ছিল প্রচুর। কিন্তু সময়ের আবর্তে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ সাধিত হয় যার অধিকাংশই প্রথমটির বদলে দ্বিতীয় তত্ত্বের গ্রহণযোগ্যতার সাক্ষ্য প্রদাণ করে। ১৯৬৪ সালে মহাজাগতিক ক্ষুদ্র তরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ আবিষ্কৃত হওয়ার পর মহা বিস্ফোরণ তত্ত্ব মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও বিবর্তন ব্যাখ্যার জন্য সবচেয়ে উপযোগী তত্ত্ব হিসেবে গৃহীত হয়। আধুনিক কালে বিশ্বতাত্ত্বিক গবেষণার অন্যতম একটি বিষয়ই হচ্ছে মহা বিস্ফোরণ তত্ত্বের আলোকে ছায়াপথসমূহের সৃষ্টি ও বিবর্তন প্রক্রিয়া উদ্‌ঘাটন করা। এছাড়াও ঠিক কি কারণে এবং কিভাবে মহা বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়েছিলো তাও বিশ্বতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা হয়। মহা বিস্ফোরণের মূল তত্ত্বের সাথে বাস্তব পর্যবেক্ষণের সমন্বয় সাধনের উপরই বর্তমান বিশ্বতত্ত্বের অগ্রগতি অনেকাংশে নির্ভর করছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে মহা বিস্ফোরণ সংশ্লিষ্ট গবেষণা অনেক সহজ হয়ে দাড়িয়েছে। মূলত অতি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দূরবীক্ষণ যন্ত্র এবং এর সঠিক কার্যকারিতা একে সম্ভব করে তুলেছে। বর্তমানে মানুষের রয়েছে কোবে, হাবল স্পেস টেলিস্কোপ এবং ডব্লিউএমএপি 'র মত উচ্চ ক্ষমতার দূরবীন। ফলে বর্তমান বিশ্বতাত্ত্বিকরা অনেক সহজে মহা বিস্ফোরণের বিভিন্ন প্যারামিটার পরিমাপ করতে পারে। এর ফলে একটি অনাকাংখিত আবিষ্কার হয়েছে; আর তা হলো সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের ত্বরিত হওয়ার প্রমাণ। (see dark energy).

[সম্পাদনা] সাধারণ আলোচনা

আরও দেখুন: মহা বিস্ফোরণের কালপঞ্জি
বহিঃস্থ কালপঞ্জি
এই বিষয়ের একটি চিত্রলৈখিক কালপঞ্জি এখানে ক্লিক করলে পাওয়া যাবে:

তিনটি পরিমাপের উপর ভিত্তি করে মহাবিশ্বের যে বয়স পাওয়া গেছে তা হল প্রায় ১৩.৭ ± ০.২ বিলিয়ন বছর। এই পরিমাপ তিনটি হচ্ছে: প্রথম ধরণের অতি নব তারা ব্যবহার করে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের পরিমাপ, মহাজাগতিক ক্ষুদ্র তরঙ্গ পটভূমিতে তাপমাত্রার উঠানামার পরিমাপ এবং ছায়াপথসমূহের কোরিলেশন ফাংশন পরিমাপ। এই তিনটি পরিমাপ স্বাধীনভাবে করা হয়েছে এবং তিনটি পরিমাপই তথাকথিত ল্যাম্ব্‌ডা-সিডিএম নকশাকে গভীরভাবে সমর্থন করেছে। এই নকশা মহাবিশ্বের অভ্যন্তরস্থ সবকিছুর সুন্দর বর্ণনা দিতে সক্ষম।

সৃষ্টির প্রাথমিক কালে মহাবিশ্ব সুষম এবং সমতাপীয় রুপে একটিই অতি উচ্চ শক্তি ঘনত্ব এবং উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপবিশিষ্ট পদার্থ দ্বারা পূর্ণ ছিল। মহাবিশ্ব সৃষ্টির ১০−৪৩ সেকেন্ড পর পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো কার্যকারিতা লাভ করে। তাই এই সময়কে প্ল্যাংকের সময় বলা হয়। প্ল্যাংকের সময়ের প্রায় ১০−৩৫ সেকেন্ড পর একটি দশা পরিবর্তন তথা অবস্থান্তর অবস্থার সূচনা ঘটে যার ফলে মহাজাগতিক স্ফীতি শুরু হয়। এই সময় মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হতে শুরু করে। এ সময় থেকে মূলত মহাবিশ্বের exponential সম্প্রসারণ শুরু হয়।

মহাজাগতিক স্ফীতি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মহাবিশ্বে কোয়ার্ক-গ্লুওন প্লাসমা নামক পদার্থ ছিল। বর্তমানে সম্ভবত এই ধরণেরই একটি পদার্থ বিজ্ঞানী প্রস্তুত করেছেন যা কোয়ার্ক গ্লুওন তরল হিসেবে পরিচিত। এই তরলের মধ্যস্থিত সকল উপাদান একে অপরের সাপেক্ষে চলমান -- এ তরলের মধ্যকার সকল মৌলিক কণিকাও এভাবে তরলের মধ্যে চলমান থাকে।[১১] স্থান-কালের কোন একটি বিন্দুতে এই পদার্থের মধ্যে একটি বিক্রিয়া ঘটে যার স্বরুপ এখন পর্যন্ত মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি। এই বিক্রিয়ার ফলে বেরিয়ন সংখ্যার সংরক্ষণ নীতি লংঘিত হয় এবং কোয়ার্ক ও লেপ্টন কণিকার পরিমাণ এদের প্রতিকণিকার চেয়ে সামান্য বেড়ে যায়। অর্থাৎ প্রতি-কোয়ার্ক এবং প্রতি-লেপ্টনের চেয়ে কোয়ার্ক এবং লেপ্টনের পরিমাণ সামান্য বৃদ্ধি পায়। এর হার ছিল প্রতি ১০১০ ভাগের এক ভাগ। এই প্রক্রিয়াকে বেরিওজেনেসিস বলা হয়।

মহাবিশ্বের আয়তন যত বৃদ্ধি পেতে থাকে ততই এর তাপমাত্রা কমতে থাকে। তাপমাত্রা হ্রাসের সময়ই কোন এক পর্যায়ে দশার অবস্থান্তর অবস্থা সৃষ্টি হয় যার ফলে শুরু হয় প্রতিসাম্য ভাঙন। এই ভাঙনের কারণে পদার্থবিজ্ঞানের আলোচ্য মৌলিক বলসমূহ পৃথক পৃথক স্বাধীন অস্তিত্ব লাভ করে। এ সময়ই মৌলিক কণিকাসমূহ সৃষ্টি হয় যা এখনও সেই আদি অবস্থাতেই রয়েছে। কোয়ার্ক এবং গ্লুওন একত্রিত হয়ে বেরিয়ন, যেমন প্রোটন এবং নিউট্রন তৈরী করে। কোয়ার্কের পরিমাণ প্রতি-কোয়ার্কের চেয়ে সামান্য বেড়ে যাওয়ার কারণে বেরিয়নের পরিমাণও প্রতি-বেরিয়নের চেয়ে সামান্য বেড়ে যায়। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার নিচে কোন নতুন প্রোটন/প্রতিপ্রোটন জোড়া তৈরী হতে পারেনা। এরই সাথে অবশিষ্ট প্রোটন এবং প্রতিপ্রোটনের মধ্যে শুরু হয় ভরের পূর্ণবিলয় (annihilation)। ফলে প্রতিপ্রোটন সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায়; আর প্রোটন প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায়। তবে কিছু প্রোটন থেকে যায়। নিউট্রন/প্রতিনিউট্রন জোড়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। ইলেকট্রন ও প্রতিইলেকট্রন বা পজিট্রনের ক্ষেত্র এই ঘটনা আরও নিম্ন তাপমাত্রায় সংঘটিত হয়।

এর কিছুকাল পরে প্রোটন ও নিউট্রন একত্রিত হয়ে মহাবিশ্বের একেবারে প্রথমদিককার উপাদান ডিউটেরিয়ামহিলিয়াম কেন্দ্রীন তৈরী করে। সৃষ্টির এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মহা বিস্ফোরণ কেন্দ্রীন সংশ্লেষ। মহাবিশ্বের শীতলায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে; এক সময় এই প্রক্রিয়ার ফলস্বরুপ পদার্থের কণাসমূহের মধ্যে যে আপেক্ষিক গতিবেগ ছিল তার পরিমাণ হ্রাস পায়। এই কণাসমূহের মাঝে দুই ধরণের শক্তি ঘনত্ব ছিল: নিশ্চল ভর শক্তি ঘনত্ব এবং বিকিরণ শক্তি ঘনত্ব। আপেক্ষিক বেগ কমে যাওয়ার ফলে নিশ্চল ভরজনিত শক্তি ঘনত্ব মহাকর্ষীয়ভাবে বিকিরণজনিত শক্তি ঘনত্বের উপর আধিপত্য বিস্তার করে। মহা বিস্ফোরণের প্রায় ৩৮০,০০০ বছর পর ইলেকট্রন এবং নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে পরমাণু তৈরী করে; এর মধ্যে মূলত হাইড্রোজেন পরমাণু সৃষ্টি হয়। এর সূত্র ধরে পদার্থ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া শক্তি বিকিরণ আকারে সমগ্র মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে; কারণ একে তেমন কোন বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়না। এই সুপ্রাচীন বিকিরণের নাম মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ।

সম্প্রসারণের সাথে সাথে মহাবিশ্বের বন্টন প্রায় সুষম হয়েছিলো। কিন্তু এর মাঝেও কিছু অসামঞ্জস্যতা ছিল। এর কারণে যে অঞ্চলগুলো অন্যান্য অঞ্চল থেকে খানিকটা ঘন সেখানের পদার্থগুলো আশেপাশের অন্যান্য বস্তুকে মহাকর্ষ বলের মাধ্যমে আকর্ষণ করে। এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয় তারা, ছায়াপথ এবং অন্যান্য জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুর যা আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি। তবে এই প্রক্রিয়াটি অত সহজ নয়। এর মূল বিষয়গুলো নির্ভর করে মহাবিশ্বের ওই অঞ্চলের পদার্থের ধরণ এবং পরিমাণের উপর। তখন মহাবিশ্বে সম্ভাব্য তিন ধরণের পদার্থ বিরাজমান ছিল: শীতল অদৃশ্য বস্তু, উত্তপ্ত অদৃশ্য বস্তু এবং বেরিয়নীয় বস্তু। ডব্লিউএমএপি নামক কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে যে মহাবিশ্বে শীতল অদৃশ্য বস্তুর পরিমাণ সবচেয়ে বেশী, প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ। অন্যান্য দুই ধরণের বস্তুর পরিমাণ মাত্র ২০%।

বর্তমান মহাবিশ্বের অধিকাংশ স্থান জুড়ে একটি রহস্যময় ধরণের শক্তি বিরাজ করছে। মহাবিশ্বের বিপুল ভর ও শক্তির জন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী এই শক্তিকে অদৃশ্য শক্তি বা dark energy বলা হয়। বর্তমান মহাবিশ্বের মোট শক্তি ঘনত্বের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ জুড়োই রয়েছে এই অদৃশ্য শক্তি। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে একটি বেগ-দূরত্ব সম্পর্কিত লেখের মাধ্যমে প্রকাশ করলে লেখচিত্রের রেখাটি সরলরৈখিক হয়না। অদৃশ্য শক্তির কারণেই এমনটি হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই শক্তির কারণে দূরত্ব যখন অনেক বেশী হয় তখন উক্ত বস্তুর বেগ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। অর্থাৎ দূরত্ব যত বাড়ে বেগ বৃদ্ধির পরিমাণও ততই বেড়ে যায়। একেবারে সাধারণ বিষয় ধর্তব্যের মধ্যে আনলে অদৃশ্য শক্তির এই পরিমাণটি আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণে একটি মহাজাগতিক ধ্রুবকের রুপ নেয়, যদিও এই শক্তির প্রকৃত রুপ এখনও উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। বলতে গেলে এই শক্তির অবস্থার সমীকরণ এবং কণা পদার্থবিজ্ঞানের আদর্শ নকশার সাথে এর সম্পর্ক বিষয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় ক্ষেত্রে অনেক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা এখনও বাকি রয়ে গেছে।

এই সবগুলো পর্যবেক্ষণ বিশ্বতত্ত্বের ল্যাম্ব্‌ডা-সিডিএম নকশায় সংযুক্ত করা হয়েছে। সবগুলো নকশার নির্যাস নিয়ে গঠিত এই নকশাটি মূলত গাণিতিক যাতে ছয়টি মুক্ত স্থিতিমাপ (parameter) রয়েছে। তবে রহস্যজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন আমরা মহাবিশ্বের সৃষ্টির গোড়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। সেই সময় পদার্থ কণিকার শক্তি এতো বেশী ছিল যে বর্তমান কালের পরীক্ষণেও তা নিয়ে বাস্তবমুখী গবেষণা করা যায়না। মহা বিস্ফোরণের পর ১০−৩৩ সেকেন্ড পর্যন্ত পরিস্থিতি ব্যাখ্যার জন্য উপযোগী কোন সূত্র পদার্থবিজ্ঞানে আজ অবধি আবিষ্কৃত হয়নি। দশা পার্থক্যের এই সময়ের পূর্বের অবস্থা ব্যাখ্যা করার জন্য মহা একীভূত তত্ত্বের কোন বিকল্প নেই। বিস্ফোরণের একেবারে প্রথম বিন্দুতে আইনস্টাইনের মহাকর্ষ তত্ত্বমতে একটি মহাকর্ষীয় ব্যতিক্রমী বিন্দুর কল্পনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে এই বিন্দুতে ঘনত্ব অসীম ছিল।[১২] এই ভৌত হেঁয়ালি সমাধান করার জন্য একটি কোয়ান্টাম মহাকর্ষ তত্ত্ব প্রয়োজন। এই বিষয়টি বোঝার জন্য যুগোপযোগী তত্ত্ব প্রণয়নই বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞানের বৃহত্তম সমাধানহীন সমস্যা।

[সম্পাদনা] তত্ত্বের মৌলিক ভিত্তি

মহা বিস্ফোরণ তত্ত্ব নিম্নলিখিত অনুমিতিগুলোর উপর নির্ভর করে:

প্রথমদিকে এই আদর্শ নীতিগুলোকে স্বীকার্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানকালে এগুলো প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভৌত নীতিসমূহের সর্বজনীনতা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, মহাবিশ্বের বয়সের উপর সূক্ষ্ম কাঠামো ধ্রুবকের সবচেয়ে বেশী যে ব্যাত্যয়টি দেখা যায় তার পরিমাণ ১০-৫ -এর মত।[১৩] মহাবিশ্বের আইসোট্রপি যা মহাজাগতিক মূলনীতিকে সংজ্ঞায়িত করে তার পরিমাপ করা হয়েছে ১০-৫ মাত্রার বিশুদ্ধরুপে; বৃহৎ পরিসর গঠনে মহাবিশ্বকে শতকরা ১০ ভাগ মাত্রার বিশুদ্ধতায় সমসত্ব হিসেবে পাওয়া গেছে।[১৪] বর্তমানে কোপারনিকান মূলনীতি পরিমাপের চেষ্টা চলছে। ছায়াপথ শ্রেণী ও স্তবকগুলোর সাথে সিএমবি'র মিথস্ক্রিয়ার দিকে লক্ষ্য করার মাধ্যমে এই পরিমাপ করা হচ্ছে। মিথস্ক্রিয়াটি লক্ষ্য করার জন্য Sunyaev-Zel'dovich ক্রিয়া বিবেচনা করা হচ্ছে। এক্ষ্রতে শতকরা ১ ভাগ বিশুদ্ধতার আশা করা যায়।[১৫]

এই অনুমিতিগুলোকে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সাথে একীভূত করলে বোঝা যায় যে, স্থান-কালকে একটি সমসত্ব ও আইসোপট্রপীয় মেট্রিক হিসেবে বর্ণনা করতে হবে। এ থেকে সহজেই বোঝা যায় যে এই মেট্রিকটি হবে এফআরডব্লিউ মেট্রিক। এই মেট্রিকগুলো একটি স্থানাংক ছকের উপর নির্ভর করে যা স্থান-কালের সকল স্থানে ছড়িয়ে আছে এবং যার মাধ্যমে আমরা মহাশূন্যে যেকোন একটি বিন্দু চিহ্নিত করতে পারি। এক্ষেত্র নির্দিষ্টভাবে ব্যবহৃত ছকটির হচ্ছে কমোভিং স্থানাংক ব্যবস্থা। এই ছকের রেখাগুলো মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের সাথে সাথে একটি হারে এবং একই নির্দেশনায় সম্প্রসারিত হয়। ফলে কোন একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুর স্থানাংক সকল সময়ে একই থাকে। যেকোন দুটি বিন্দুর কমোভিং দূরত্ব তথা স্থানাংক দূরত্ব একই থাকলেও এই কমোভিং বিন্দুসমূহের ভৌত দূরত্ব মহাবিশ্বের স্কেল উৎপাদকের সাথে সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়।

মহাবিশ্বকে এই স্থানাংকসমূহ দ্বারা ব্যাখ্যা করলে দেখা যায়, মহা বিস্ফোরণ একি শূন্য মহাবিশ্ব পূর্ণ করার জন্য কিছু পদার্থের নিছক একটি বিস্ফোরণ নয়, বরং মহাশূন্য নিজেই সম্প্রসারিত হয়েছে নির্দিষ্ট নিয়মে এবং এর ফলে কমোভিং বিন্দুসমূহের ভৌত দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। যে বস্তুসমূহ একীভূত থাকে (যেমন: পরমাণু, মানুষ, তারা, সৌর জগত, ছায়াপথ) তারা স্থান-কালের প্রসারণের সাথে প্রসারিত হয়ে একে অন্যের থেকে দূরে সরে যায়না; কারণ যে বল তাদেরকে একীভূত করে রেখেছে তা হাবল সম্প্রসারণের জন্য দায়ী বলের চেয়ে শক্তিশালী।

আমরা এখানে কনফরমাল সময় (η) নামক শব্দটির অবতারণা করতে পারি, এহেন ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্থান-কাল মেট্রিক একটি স্থিতিশীল মেট্রিকের রুপ নেয় এবং এটি এই মেট্রিককে সামগ্রিক স্কেল উৎপাদক দ্বারা গুণ করে মূল মেট্রক পাওয়া যায়। কনফরমাল সময় স্থানাংক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি নির্দিষ্ট ভ্রমণে আলোক রশ্মি যে পরিমাণ কমোভিং দূরত্ব অতিক্রম করে তা উক্ত ভ্রমণের মধ্যবর্তী কনফরমাল সময়ের সমান। এই থেকেই স্থান-কালের কসাল গঠন বোধগম্য হয়। উদাহরণস্বরুপ; মহা বিস্ফোরণ অতীতের একটি নির্দিষ্ট কনফরমাল সময়ে সংঘটিত হয়েছিল। ধরি এই কনফরমাল সময়টি η0। এখন যে সকল বস্তুর কমোভিং দূরত্ব η0 -এর চেয়ে বেশী তাদের আমাদের থেকে এতো বেশী যে সেখান থেকে আলো কখনই আমাদের কাছে পৌঁছুতে পারবেনা। অর্থাৎ আমরা অতীত মহাবিশ্বের সমগ্র অংশ কখনই দেখতে পারবোনা। এথেকে উদ্ভূত হয়েছে অতীত দিগন্তের ধারণা। মহাবিশ্ব যদি ত্বরণ সহকারে সম্প্রসারিত হতে থাকে তাহলে কেবল একটি সুনির্দিষ্ট সংখ্যাক কনফরমাল সময় ভবিষ্যতের জন্য রয়েছে। একে ηF দ্বারা প্রকাশ করা গয়ে থাকে। অবশ্য এই কনফরমাল সময়টি আমাদের ঘড়ির তুলনায় প্রায় অসীম যাকে সঠিক সময় (proper time) বলা হয়। যে বস্তুর কমোভিং দূরত্ব এই cηF -এর চেয়ে বেশী সেখান থেকে আলোক রশ্মি কখনই আমাদের কাছে আসতে পারবেনা। অর্থাৎ আমরা সমগ্র মহাবিশ্বকে প্রভাবান্বিত করতে পারবোনা। অর্থাৎ এর একটি ভবিষ্যৎ দিগন্ত -ও রয়েছে।

[সম্পাদনা] পর্যবেক্ষণিক প্রমাণ

বিশ্বতত্ত্ব মহা বিস্ফোরণের প্রমাণ হিসেবে তিনটি পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণকে উল্লেখ করা হয়। এগুলো হল: ছায়াপথসমূহের লাল অপসারণ দেখে গৃহীত হাবল-ধরণের সম্প্রসারণ, মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমির বিস্তৃত পরিমাপ এবং আলোক উপাদানসমূহের প্রাচুর্য। উপরন্তু মহাবিশ্বের বৃহৎ-পরিসর গঠনে পর্যবেক্ষণযোগ্য কোরিলেশন ফাংশন আদর্শ মহা বিস্ফোরণ তত্ত্বের সাথে বেশ ভাল রকম খাপ খায়।

[সম্পাদনা] হাবলের নীতি

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: হাবলের নীতি

হাবলকৃত ১৯২৯ সালের একটি গবেষণাপত্র থেকে প্রাপ্ত হাবলের মূল গবেষণা।
হাবলকৃত ১৯২৯ সালের একটি গবেষণাপত্র থেকে প্রাপ্ত হাবলের মূল গবেষণা।[১৬]

দূরবর্তী ছায়াপথ ও কেয়াসার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে এরা লাল অপসারণ প্রদর্শন করে -- তাদের থেকে নিঃসরিত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য তুলনামূলক বর্ধিত তরঙ্গদৈর্ঘে রুপ নেয়। বস্তুসমূহের কম্পাংক বর্ণালী গ্রহণ করার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে। আলোর সাথে মিথস্ক্রিয়ারত রাসায়নিক মৌলসমূহের পরমাণুর বিশোষণ রেখা এবং নিঃসরণ রেখার বর্ণালীবীক্ষণগত গড়নের সাথে পর্যবেক্ষণযোগ্য এই বর্ণালীর সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। এর ফলেই মূলত লাল অপসারণের প্রমাণ মিলেছে। এই বিশ্লেষণ থেকে বোঝা গেল, একটি লাল অপসারণ যা কোন ধরণের বিকিরণের জন্য একটি ডপলার অপসারণকে নির্দেশ করে তাকে পরিমাপ করা সম্ভব। প্রাস্থানিক বেগ দ্বারা বিষয়টির ব্যাখ্যা করা যায়। যখন বস্তুসমূহের দূরত্বের সাথে এদের প্রাস্থানিক বেগের একটি লেখ অংকন করা হয় তখন একটি সরলরেখা পাওয়া যায়, যা হাবলের নীতি নামে পরিচিত।

v = H_0 D \,

যেখানে

v হল ছায়াপথ বা অন্যান্য জ্যোতিষ্কের প্রাস্থানিক বেগ (recessional velocity)
D হল বস্তুটির দূরত্ব এবং
H0 হল হাবলের ধ্রুবক, ডব্লিউএমএপির মাধ্যমে পরিমাপকৃত এর আপাত মান হচ্ছে (৭০ +২.৪/-৩.২) কিমি//Mpc। [১৭]

হাবলের নীতি পর্যবেক্ষণের দুটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা রয়েছে -- একটি হল: আমরা ছায়অপথের একটি বিস্ফোরণের ঠিক কেন্দ্রে আছি । কোপারনিকান মূলনীতি মেনে নিলে এই পর্যবেক্ষণটিকে সমর্থন করা যায়না। অন্য ব্যাখ্যাটি হল: মহাবিশ্ব স্থান-কালের একটি সুষম ধর্ম হিসেবে সকল স্থানে একটি হারে সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই পর্যবেক্ষণটি হাবলে তার নীতি উপস্থাপনের অনেক আগেই করা হয়েছিলো। তখন আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বকে একটি কাঠামো হিসেবে ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিলো। এই পর্যবেক্ষণটিই এখন পর্যন্ত মহা বিস্ফোরণ তত্ত্বের মৌলিক ভিত্তিভূমি হিসেবে স্বীকৃত। এটি প্রস্তাব করেছিলেন ফ্রিদমান-লেমাইট্‌র-রবার্টসন-ওয়াকার।

[সম্পাদনা] মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ

ডব্লিউএমএপি থেকে প্রাপ্ত মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের চিত্র
ডব্লিউএমএপি থেকে প্রাপ্ত মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের চিত্র

মহা বিস্ফোরণ তত্ত্ব মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের অস্তিত্বের কথা বলেছিল। এর অপর নাম সিএমবি যা প্রথম বেরিওজেনেসিসের সময় নিঃসরিত ফোটন দ্বারা গঠিত। আদি মহাবিশ্বে যেহেতু তাপীয় সাম্যাবস্থা বিরাজ করছিল সেহেতু প্লাসমাগুলো পুনরায় একত্রিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিকিরণের তাপমাত্রা ও প্লাসমার পরিমাণ সমান ছিল। পরমাণু গঠিত হওয়ার আগে বিকিরণ স্থিতিশী়লভাবে পালাক্রমে নিঃসরিত এবং পুনরায় শোষিত হচ্ছিলো যাকে কম্পটন বিক্ষেপন বলা হয়। অর্থাৎ আদি মহাবিশ্ব আলোর প্রতি অনচ্ছ ছিল। যাহোক, মহাবিশ্ব প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি ধীরে ধীরে শীতল হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তাপমাত্রা ৩,০০০ কেলভিনের নিচে নেমে আসে। এই বিন্দুতে কেন্দ্রীন ও ইলেকট্রন একত্রিত হয়ে পরমাণু তৈরী করে। একই সাথে প্রাথমিক যুগের প্লাসমাগুলো একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাসে রুপান্তরিক হয়। এই প্রকিয়ার নাম ফোটন ডিকাপলিং। তখন মহাবিশ্বে কেবল নিরপেক্ষ পরমাণু এবং বিভিন্ন গ্যাসীয় বস্তুর সমন্বয়ে একটি নিষ্ক্রিয় পরিবেশ বিরাজ করছিল। ফলে পদার্থ থেকে নিঃসরিত বিকিরণ কোন বাঁধা ছাড়াই সমগ্র মহাবিশ্ব পরিভ্রমণের সুযোগ পায়। আদি মহাবিশ্বে যেহেতু তাপীয় সাম্যাবস্থা বিরাজ করছিল সেহেতু তখনকার বিকিরণের বর্ণালী ছিল কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ বর্ণালী ধরণের। পরবর্তীতে হাবলের নীতিতে লাল অপসারণের কারণে এদের তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং কৃষ্ণবস্তুর আচরণ থেকে বিচ্যুতি দেখা দেয়।

১৯৬৪ সালে আরনো পেনজিয়াস এবং রবার্ট উড্রো উইলসন অনেকটা আকস্মিকভাবেই পটভূমি বিকিরণ আবিষ্কার করেন। তারা এ সময় বেল ল্যাবরেটরিসের মালিকানাধীন একটি ক্ষুদ্রতরঙ্গ গ্রাহক যন্ত্র দিয়ে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের মান নিরুপণ করছিলেন।[১৮] তারা যে বিকিরণ আবিষ্কার করেন তা আইসোট্রপীয় ছিল এবং এর মধ্যে কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণের ধর্ম বাদ্যমান ছিল; এর তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৩ কেলভিন। এই আবিষ্কার মহা বিস্ফোরণ মতবাদের পক্ষে একটি যুক্তেই হয়ে দাঁড়ায় এবং পেনজিয়াস ও উইলসনকে এনে দেয় নোবেল পুরস্কার

১৯৮৯ সালে নাসা পটভূমি বিকিরণ অনুসন্ধানের জন্য একটি মহাকাশযান প্রেরণ করে যার নাম কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এক্সপ্লোরার উপগ্রহ বা কোবে (COBE)। এই কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে ১৯৯০ সালে প্রাপ্ত তথ্য পটভূমি বিকিরণ সম্বন্ধে মহা বিস্ফোরণ তত্ত্বের ধারণাকে সমর্থন করে। কোবে কর্তৃক প্রাপ্ত অবশেষ তাপমাত্রার (residual temperature) পরিমাণ ছিল ২.৭৩৬ কেলভিন। আরো জানা যায় সিএমবি প্রতি ১০ ভাগে এক ভাগ মাত্রায় আইসোট্রপীয়।[১৯] ২০০৩ সালে ডব্লিউএমএপি নামক কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে আরো নিখুঁত তথ্য পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে মহাজাগতিক স্ফীতিশীলতা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি নকশা ভুল প্রমাণিত হয়। তবে এর তথ্যগুলো মূল মহাজাগতিক স্ফীতিশীলতা তত্ত্বের পক্ষেই থাকে।

[সম্পাদনা] প্রাথমিক মৌলসমূহের প্রাচুর্য

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মহা বিস্ফোরণ কেন্দ্রীন সংশ্লেষ

মহা বিস্ফোরণ নকশা ব্যবহার করে মহাবিশ্বে উপস্থিত সাধারণ হাউড্রোজোনের সাথে হিলিয়াম-৪, হিলিয়াম-৩, ডিউটেরিয়াম এবং হিলিয়াম-৭ এর অনুপাত পরিমাপ করা সম্ভব।[২০] এই মৌলগুলোর প্রাচুর্য মূলত ফোটন এবং বেরিয়নের অনুপাতের উপর নির্ভর করে। এই নকশায় যে অনুপাতের (ভর অনুসারে) আশা করা হয়েছে তা অনেকটা এরকম:

  • He/H -এর জন্য প্রায় ০.২৫
  • H/H -এর জন্য প্রায় ১০-৩
  • He/H -এর জন্য প্রায় ১০-৪
  • Li/H -এর জন্য প্রায় ১০-৯

এই সকল অনুপাত একটিমাত্র সংখ্যার মাধ্যমে আগেই বলে দেয়া যায়। সেই সংখ্যাটি হল বেরিয়ন এবং ফোটনের অনুপাত। এই অনুসিদ্ধান্তটি Li এবং He -এর জন্য অনেকটা শীথিল; কারণ এই দুটি মৌলের পদ্ধতিগত অনিশ্চয়তা সম্বন্ধে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যায়না। যাহোক, এই প্রাচুর্য মহা বিস্ফোরণ তত্ত্বের পক্ষে একটি সুষ্পষ্ট প্রমাণ; কারণ মহা বিস্ফোরণ ছাড়া অন্য কোন তত্ত্ব দ্বারা এই প্রাচুর্যের পরিমাণ ব্যাখ্যা করা যায়না।[২১] আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যায় নবীন মহাবিশ্বে ডিউটেরিয়াম অপেক্ষা হিলিয়ামের পরিমাণ বেশী অথবা হিলিয়মের (He) চেয়ে ডিউটেরিয়াম বেশী; এবং এরা সর্বদা ধ্রুব অনুপাত বজায় রাখে।

[সম্পাদনা] ছায়াপথীয় বিবর্তন ও বন্টন

[সম্পাদনা] আরও দেখুন

[সম্পাদনা] টীকা

  1. ভি. স্লিফার, আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত একটি পেপার, (১৯১৫).
  2. জি. লেমাইট্‌র (১৯২৭). "Un Univers homogène de masse constante et de rayon croissant rendant compte de la vitesse radiale des nébuleuses extragalactiques". Annals of the Scientific Society of Brussels ৪৭এ: ৪১. ইংরেজি অনুবাদ: (১৯৩১) "A homogeneous universe of constant mass and growing radius accounting for the radial velocity of extragalactic nebulae". Monthly Notices of the Royal Astronomical Society ৯১: ৪৮৩–৪৯০.. "সুপ্রাচীন পরমাণু" শব্দটি এখানে উল্লেখিত আছে: G. Lemaître, Nature ১২৮ (১৯৩১) suppl.: ৭০৪।
  3. এডুইন হাবল (১৯২৯). "A relation between distance and radial velocity among extra-galactic nebulae". Proc. Nat. Acad. Sci. ১৫: ১৬৮–১৭৩.
  4. ই. ক্রিশ্চিয়ানসন. এডুইন হাবল: Mariner of the Nebulae.
  5. পি.জে.ই. পিব্‌লস এবং ভারত রাত্র (2003). "The cosmological constant and dark energy". Reviews of Modern Physics 75: 559–606.
  6. এফ. হয়েল, '"A New Model for the Expanding universe", রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মাসিক বিজ্ঞপ্তি, 108 (1948), 372.
  7. The book in question can be downloaded here: [1]
  8. E. A. Milne (1935). Relativity, Gravitation and World Structure. Oxford University Press.
  9. R. C. Tolman (1934). Relativity, Thermodynamics, and Cosmology. Oxford: Clarendon Press. LCCN 340-32023. Reissued (1987) New York: Dover ISBN 0-486-65383-8.
  10. Zwicky, F. 1929. On the Red Shift of Spectral Lines through Interstellar Space. PNAS 15:773-779. Abstract (ADS) Full article (PDF)
  11. http://www.aip.org/pnu/2005/split/728-1.html
  12. S. W. Hawking and G. F. R. Ellis, The large-scale structure of space-time (Cambridge, 1973).
  13. A. V. Ivanchik, et al. "The fine-structure constant: a new observational limit on its cosmological variation and some theoretical consequences", Astronomy and Astrophysics 343 (1999) 439.
  14. J. Goodman Physics Review D, 52 (1995) 1821.
  15. Caltech Submillimeter Observatory has a program underway for measuring detail observations of the CMB to look for Sunyaev-Zel'dovich Effect correlations. [2]
  16. এডুইন হাবল, "A Relation between Distance and Radial Velocity among Extra-Galactic Nebulae" (১৯২৯) যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সাইন্সের একটি অনুষ্ঠানে, খণ্ড ১৫, ইস্যু ৩, পৃষ্ঠা. ১৬৮ - ১৭৩ (সম্পূর্ণ নিবন্ধ, পিডিএফ)
  17. D. N. Spergel, et al. "First-year Wilkinson Microwave Anisotropy Probe (WMAP) observations: Determination of cosmological parameters", Astrophysical Journal Supplement Series, 148 (2003) 175.
  18. N.W. Boggess, et al. "The COBE Mission: Its Design and Performance Two Years after the launch," Astrophysical Journal, 397 (1992), 420.
  19. Kolb, Edward; Michael Turner (1988). The Early Universe. Addison-Wesley. ISBN 0-201-11604-9.
  20. Steigman, Gary, Primordial Nucleosynthesis: Successes And Challenges Template:Arxiv.

[সম্পাদনা] বহিঃসংযোগ এবং তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা] মহা বিস্ফোরণের সাধারণ আলোচনা

For an annotated list of textbooks and monographs, see physical cosmology.

[সম্পাদনা] ধর্ম এবং দর্শন

  • Leeming, David Adams, and Margaret Adams Leeming, A Dictionary of Creation Myths. Oxford University Press (1995), ISBN 0-19-510275-4.
  • Pius XII (1952), "Modern Science and the Existence of God," The Catholic Mind 49:182–192.
  • Ahmad, Mirza Tahir, Revelation, Rationality, Knowledge & Truth Islam International Publications Ltd (1987), ISBN 1-85372-640-0. The Quran and Cosmology

[সম্পাদনা] গবেষণা সহযোগী নিবন্ধসমূহ