মতিউর রহমান (বীর শ্রেষ্ঠ)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান (২৯ অক্টোবর, ১৯৪১ - ২০ আগস্ট, ১৯৭১) একজন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের আত্মোৎসর্গকারীদের একজন। পরবর্তিতে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি পুরোন ঢাকার আগাসাদেক রোডে জন্মগ্রহন করেন। বাবা মৌলভী আবদুস সামাদ, মা সৈয়দা মোবারকুন্নেসা খাতুন।

[সম্পাদনা] জীবনী

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেনী পাস করার পর সারগোদায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ডিস্টিংকসহ মেট্রিক পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬১ সালে বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালের জুন মাসে রিসালপুর পি,এ,এফ কলেজ থেকে কমিশন লাভ করেন এবং জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসাবে নিযুক্ত হন। এরপর করাচির মৌরীপুরে জেট কনভার্সন কোর্স সমাপ্তি করে পেশোয়ারে গিয়ে জেটপাইলট হন। ১৯৬৫ তে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ফ্লাইং অফিসার অবস্থায় কর্মরত ছিলেন। এরপর মিগ কনভার্সন কোর্সের জন্য পুনরায় সারগোদায় যান। সেখানে ১৯৬৭ সালের ২১ জুলাই তারিখে একটি মিগ-১৯ বিমান চালানোর সময় আকাশে সেটা হঠাৎ বিকল হয়ে গেলে দক্ষতার সাথে প্যারাসুট যোগে মাটিতে অবতরণ করেন। ইরানের রানী ফারাহ দিবার সম্মানে পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত বিমান মহড়ায় তিনি ছিলেন একমাত্র বাঙালি পাইলট। রিসালপুরে দু'বছর ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হিসাবে কাজ করার পর ১৯৭০ এ বদলি হয়ে আসেন জেট ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হয়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৭১ এর ফেব্রুয়ারী মাসে ঢাকায় ছুটিতে আসেন।

[সম্পাদনা] যেভাবে শহীদ হলেন

২৫ মার্চের ঘটনায় তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হন। পরে তিনি দৌলতকান্দিতে জনসভা করেন এবং বিরাট মিছিল নিয়ে ভৈরব বাজারে যান। পাক-সৈন্যরা ভৈরব আক্রমণ করলে বেঙ্গল রেজিমেন্টে ই,পি,আর-এর সঙ্গে থেকে প্রতিরোধ বুহ্য তৈরি করেন। এর পরই কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে একটি জঙ্গি বিমান দখল এবং সেটা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। ১৯৭১ এর ২০ আগস্ট শিক্ষার্থী মিনহাজ রশীদের কাছ থেকে টি-৩৩ বিমানটি ছিনতাই করে উড়ে যাবার সময় ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে থাট্টা এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। তাঁর মৃতদেহ ঘটনাস্থল হতে প্রায় আধ মাইল দূরে পাওয়া যায়।

মিলি রহমান বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন, ফ্লাইট ল্যাফটেনেন্ট মতিউর রহমান শহীদ হবার সময় তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। পাকিস্তানিরা তাঁকে এক অন্ধকার কক্ষে তাঁর শিশু বাচ্চা ও কাজের পরিচারিকাসহ দীর্ঘদিন বন্দী করে রাখে ও অত্যাচার করে। মুক্তি পাবার পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

২০০৬ খ্রীস্টাব্দের ২৩ জুন মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান হতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাঁকে পূর্ণ মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে দাফন করা হয়।


বীর শ্রেষ্ঠ পদক
মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর - হামিদুর রহমান - মোস্তফা কামাল - রুহুল আমিন - মতিউর রহমান - মুন্সি আব্দুর রউফ - নূর মোহাম্মদ শেখ
অন্যান্য ভাষা