কোরআন-হাদিসে বর্ণিত রহস্য ও ঘটনাসমুহ(পর্ব ১-৩)
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আমাদের অন্যতম প্রিয় নবী হযরত ইব্রাহীম(আ:),যিনি খালিলুল্লাহ নামে পরিচিত।তিনি প্রতিদিন একজন মুসাফিরকে সাথে নিয়ে খাওয়া খেতেন যা ছিল আল্লাহসুবহানাতাআলার কাছে খুবই প্রিয়।তো একদিনের ঘটনা;খানা খাওয়ানোর জন্য তিনি মেহমান তালাশ করছিলেন।এমন সময় জনৈক অচেনা লোকের সাথে তার সাক্ষাত্ হল।তিনি তাকে ঘরে নিয়ে এলেন।যখন খানা খেতে শুরু করবেন,তখন হযরত ইব্রাহীম(আ:)আগন্তক মুসাফিরকে বললেন-বিসমিল্লাহ বল।সে বলল-আল্লাহ কাকে বলে আমি জানি না।হযরত ইব্রাহীম(আ:)রাগান্বিত হয়ে তাকে দস্তরখান থেকে তাড়িয়ে দিলেন।যখন লোকটি বের হয়ে গেল,তখনই হযরত জিবরাঈল(আ:)উপস্হিত হলেন ও জানালেন যে,আল্লাহ তাআলা বলেছেন-আমি তার কুফরী সম্পর্কে জানা সত্বেও সারা জীবন তাকে আহার্য-পানীয় দিয়ে আসছি।আর আপনি একে এক বেলা খাবার দিতে পারলেন না।একথা শোনা মাএ হযরত ইব্রাহীম(আ:)ঐ লোকের তালাশে ছুটলেন।অবশেষে তাকে ঘরে নিয়ে এলেন।কিন্ত সে লোক বেকে বসল ও বলল,আপনি প্রথমে আমাকে তাড়িয়ে দিলেন,পরে আবার সাধাসাধি করে আনতে গেলেন কেন?এর কারণ না জেনে আমি খানা খবো না।হযরত ইব্রাহীম(আ:)ঘটনা বর্ণণা করলেন।কাফের লোকটির মধ্যে ভাবান্তর সৃষ্টি হল।সে বলল-যে মহান পালনকর্তা ফেরেশতা পাঠিয়ে আপনাকে একথা জানিয়েছেন,তিনি সত্যিই পরম দয়ালু।আমি তার প্রতি ঈমান আনলাম।অতপর সে বিসমিল্লাহ বলে হযরত ইব্রাহীম(আ:)এর সাথে খানা খেতে আরম্ভ করল।তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মেহমানদারীর প্রথা চালু করেন।(সুরা হুদ;তফসির পৃষঠা ৬৩৭,বাদশাহ ফাহাদ কর্তৃক বিনামূল্যে বিতরণের জন্য অনুদিত পবিত্র কুরআনুল কারীমের বাংলা অনুবাদ ও তফসির থেকে নেয়া)
পর্ব-2 বায়হাকীতে বর্ণিত রাসুল(স:)বলেন: হযরত আদম(আ:)ও বিবি হাওয়ার পৃথিবীতে আগমনের পর আল্লাহ তাআলা জিবরাইলের মাধ্যমে তাদের কাবাগৃহ নির্মাণের আদেশ দেন।এ গৃহ নির্মিত হয়ে গেলে তাদেরকে তা তাওয়াফ করার আদেশ দেয়া হয় ও বলা হয়,আপনি সর্বপ্রথম মানব ও এ গৃহ -যা মানবমন্ডলীর জন্যে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।(ইবনে কাসীর)
কোন কোন হাদিসে আছে,হযরত আদম (আ:)কর্তৃক নির্মিত কাবা নূহের মহাপ্লাবন পর্যন্ত অক্ষত ছিল। মহাপ্লাবনে এ গৃহ বিধবস্ত হয়ে যায়। অতপর হযরত ইব্রাহীম(আ:)প্রাচীন ভিত্তির উপর এ গৃহ পুনরায় নির্মাণ করেন।এই গৃহ নির্মাণের সময় মাকামে ইব্রাহীম যা একটি পাথরের নাম,এর উপর দাড়িয়েই তিনি এ গৃহ নির্মাণ করেন।নির্মাণের উচ্চতার সাথে সাথে এ পাথরটিও আপনা আপনি উচু কিংবা নিচু হয়ে যেত।এ পাথরের গায়ে হযরত ইব্রাহীম(আ:)এর গভীর পদচিন্হ রয়েছে যা হাজী সাহেবরা আজঅব্দি দেখে আসছেন। এটা নিসন্দেহে আল্লাহর অপার কুদরতের নিদর্শন। সুরা আল ইমরানের ৯৭আয়াতে কাবা গৃহের ৩টি বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে।প্রথমত:এতে আল্লাহর কুদরতের অনেক নিদর্শন রয়েছে।তন্মধ্যে একটি হচ্ছে মাকামে ইব্রাহীম।দ্বিতীয়ত:যে ব্যক্তি এতে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ ও বিপদমুক্ত হয়ে যায়;কেউ তাকে হত্যা করতে পারে না।তৃতীয়ত: সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য এতে হজ্জব্রত পালন করা ফরজ;যদি এ গৃহ পর্যন্ত পৌচার শক্তিও সামর্থ্য থাকে।(কোরআনুল করীম,পৃষ্টা নং১৮৯,সুরা ইমরান)
পর্ব- ৩ লুত (আ:)ছিলেন হযরত ইব্রাহীম(আ:)এর ভ্রাতুষ্পুএ।আল্লাহ সুবহানাতাআলা তাকে নবুয়ত দান করে জর্ডান ও বায়তুল মোকাদ্দাসের মধ্যবর্তী সাদূমের অধিবাসীদের পথ প্রদর্শনের জন্য প্রেরণ করেন।এখানকার ভূমি ছিল উর্বর ও সর্বপ্রকার শস্য ও ফলের প্রচুর্য ছিল।তারা ধনৈশ্বর্যের নেশায় মত্ত হয়ে বিলাস-ব্যসন,কাম প্রবৃত্তি ও লোভ লালসার জালে এমনভবে আবদ্ব হয়ে পড়ে যে,ভাল মন্দ,লজ্জা শরমের পার্থক্যও ভূলে যায়।তারা ছিল সমকামীতে বিশ্বাসী।পবিএ কোরআনে যিনা তথা ব্যভিচার এর চাইতেও এহেন কাজকে কঠোর অপরাধ বলা হয়েছে। সুরা আরাফের ৮০ ও ৮১ নং আয়াতে বলা হয়েছে:এবং আমি লুতকে প্রেরণ করেছি।যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বলল:তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ,যা তোমাদের আগে সারা বিশ্বের কেউ করেনি?তোমরা তো কামবশত: পুরুষদের কাছে গমণ কর নারীদের ছেড়ে।বরং তোমরা সীমা ছাড়িয়েছ। এর জবাবে তারা পরষ্পর বলাবলি করতে লাগল:এরা বড় পবিএ ও পরিছন্ন বলে দাবী করে।এদের চিকিত্সা এই যে,এদের বস্তি থেকে বের করে দাও।পরিস্হিতি এমন দাড়িয়ে ছিল যে,লুত(আ:)ও তার ২টি কন্যা ছাড়া কেউ মুসলমান ছিল না।শেষে আল্লাহর শাস্তি তাদের জন্য অবধারিত হলো এভাবে-ফেরেশতারা প্রথমে মানব আকৃতিতে লুত(আ:)এর গৃহে যান ও তার কন্যাদের সালাম দেন ও বলেন:আমরা বিদেশী মুসাফির ও আজ রাত এখানে থাকতে চাই।লুত(আ:)ইবাদতে ব্যস্ত ছিলেন।ইবাদত শেষে তিনি দেখলেন,বার জন কম বয়সী দাড়িবিহীন সুদর্শন যুবক অপেক্ষমাণ।এবার তিনি শংকিত হলেন,আল্লাহ না করুন,এ সম্পরদায়ের লোকেরা যদি মেহমানদের সাথে অশোভন কোন আচরণ করে বসে!সুরা হুদে ৭৭-৭৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন:’’এবং আমার প্রেরিত ফেরেশতা লুতের নিকট পৌছিল,তাদের আগমনে তিনি শংকিত,বললেন,আজকের দিনটি বড়ই কঠিন ও লুতের কওম হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে তাদের কাছে এল,এরা পূর্ব থেকেই দুষ্কর্র্মশীল কওম।’’ লুত (আ:)এর বধু ছিল কাফের। সে কওমের কাছে এই মেহমানদের সংবাদ জানিয়ে দিয়েছিল।যথারীতি ওরা হাজির হল ও মেহমানদেরকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবী করল। লুত(আ:)যখন দেখলেন,তাদেরকে প্রতিরোধ করা দুষ্কর তখন তিনি সর্দারদের নিকট স্বীয় কন্যাদের বিবাহের প্রস্তাব দেন ও আল্লাহকে ভয় করতে বলেন।কিন্ত তারা মেহমানদেরই দাবী করল।পাপিষ্ঠরা দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ ও কপাট ভাংতে যখন উদোগী হল তখন ফেরেশতারা তাদের আসল পরিচয় প্রকাশ করলেন লুত (আ:)এর কাছে এবং দরজা খুলে দিতে বললেন। হযরত জীবরাঈল(আ:)তার পাখার ঝাপতা দিলেন।ফলে ওরা অন্ধ হয়ে গেল ও ভাগতে লাগল। তখন ফেরেস্তাগণ আল্লাহর নির্দেশে লুত(আ:)কে বললেন-আপনি কিছুটা রাত থাকতে লোকজনসহ এখান থেকে অন্যএ সরে যান ও সবাইকে সতর্ক করে দেন যে,তাদের কেউ যেন পিছনে না তাকায়,তবে আপনার নিজ বধু ব্যতীত।কারণ অন্যদের মত তাকেও আযাব গ্রাস করবে।সুরা হিজরের আয়াতে এ আযাবের বর্ণনার পুর্বে বল হয়েছে:সুর্যোদয়ের সময় বিকট নাদ তাদেরকে পাকরাও করল।সুরা হুদে ৮২-৮৩নং এ বলা হয়েছে:যখন আমার আযাব এসে গেল,তখন আমি বস্তিটিকে উল্টে দিলাম ও তাদের উপর স্তরে স্তরে প্রস্তর বর্ষণ করলাম যা আপনার প্রতিপালকের কাছে চিহ্নযুক্ত ছিল।সে বসতিটা এ কাফেরদের থেকে বেশীদুরে নয়।তফসিরকারীরা বলেন:প্রত্যেক পাথরে ঐ ব্যক্তির নাম লিখিত ছিল,যাকে খতম করার জন্যে পাথরটি নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। বর্ণিত আছে,জীবরাইল(আ:)তার পাখা যমীনের তলদেশে প্রবিষ্ট করত এমনভাবে মহাশুন্যে উত্তোলন করলেন যে,সবকিছু নিজ নিজ স্হানে স্হির ছিল।এমনকি পানি ভর্তি পাএ হতে এক বিন্দু পানিও পড়ল না।তখন পশু ও মানুষের বিকট ধ্বনি ভেসে আসছিল।তারপর ঐসব জনপদকে উল্টিয়ে যথাস্হানে নিক্ষেপ করা হল।(পৃষ্টা নং৬৪০)সুরা আরাফে ৮৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন:অতএব দেখ,গোনাগারদের পরিণতি কেমন হয়েছে।’’ আজও এ ভুখন্ডটি লুত সাগর বা ডেড সী বা মৃত সাগর নামে পরিচিত।এর ভুভাগ সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে অনেক নীচে অবস্হিত।এর একটি বিশেষ অংশে নদীর আকারে আশ্চর্য ধরণের পানি বিদ্যমান।এ পানিতে কোন মাছ,ব্যাঙ জীবিত থাকতে পারে না।এমনকি কোন মানুষ সেই পানিতে ডুবেও না, বরং ভাসতে থকে।