তবলা
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তবলা এক ধরনের দুই অংশ বিশিষ্ট আনদ্ধ (চর্মাচ্ছাদিত/membranophone) জাতীয় ঘাতবাদ্য (percussion) যন্ত্র। দুই অংশের মধ্যে ডান হাতে বাজাবার অংশটির নাম ডাহিনা (ডাইনা, ডাঁয়া) বা তবলা এবং বাঁ হাতে বাজাবার অংশটির নাম বাঁয়া বা ডুগি। তবলার বিশেষত্ব এর জটিল অঙ্গুলিক্ষেপনজাত উন্নত বোল।
তবলা বাদক শিল্পীকে বলা হয় তবলিয়া। তবলচি শব্দটি আগে একই অর্থে প্রচলিত ছিল, কিন্তু বাইজীগান বা খেমটানাচের সঙ্গতকারীদের জন্য বেশী ব্যবহৃত হওয়ায় অনেকে একে অশ্রদ্ধাজনক বলে মনে করেন, তাই তবলচির বদলে তবলিয়া শব্দটির চল হয়।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] উৎপত্তি
তবলার জন্ম সম্বন্ধে নানা মতবাদ আছে। একটি হল আমীর খস্রু সম্বন্ধে। মৃদঙ্গ জাতীয় কোন দুইদিক চামড়ায় ছাওয়া যন্ত্র ভেঙে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়, কিন্ত তার পরেও তা থেকে সুন্দর অওয়াজ বের হয়। শুনে মুগ্ধ খস্রু বলেন "তব ভি বোলা"। তবলা শব্দটি "তব ভি বোলা" থেকে এসে থাকতে পারে।
[সম্পাদনা] গঠন
[সম্পাদনা] ডাঁয়া
কাঠের একটিমাত্র টুকড়োকে উপর থকে কুঁদে বাটির মত করা। তার উপর গরুর চামড়া টানটান করে বসান। তাকে ঘিরে গোল ছেদযুক্ত আরেকটি চামড়া দিয়ে কিনারা বা কানি। চামড়া পেঁচিয়ে প্রস্তুত পাগড়ী এদের ধরে রেখেছে। মাঝখানে কালো গাব (গাবগাছের আঠায় কাঠকয়লা মিশিয়ে) বা স্যাহী। কিনারা ও গাবের মধ্যে উন্মুক্ত পাতলা প্রথম চামড়া হল "সুর"। উপরের পাগড়িকে টেনে রাখার জন্য নীচে দ্বিতীয় চামড়ার পাগড়ি। দুটি পাগড়ি "ছট" দিয়ে বাঁধা। ছটের টান কমবেশী করার জন্য ছটে গোঁজা কাঠের "গুলি"।
উঁচু-সুর বাঁধার পদ্ধতি:
- বেশী সংখ্যক ছটকে টেনে গুলির উপর স্থাপন করা
- হাতুড়ি মেরে বা জোরে ঠেলে "গুলি"কটি নীচের দিকে করা
- উপরের পাগড়ীতে উপর হতে হাতুড়ি মেরে নীচে বসানোর চেষ্টা
[সম্পাদনা] ডুগি
দেহ কাঠর নয়, মাটির বা ধাতব; বড় ক্ষেত্রফল, গাব উৎকেন্দ্রিক। গুলি নেই বা খুব পাতলা গুলি, অথবা ছোটগুলি জোড়ায় জোড়ায় একত্রিত করে আংটা লাগানো।
[সম্পাদনা] আনুসঙ্গিক সরঞ্জাম
ডুগি ও তবলার সঙ্গে ব্যবহৃত কয়েকটি আনুসঙ্গিক সরঞ্জাম হল:
- বিড়ি/বিড়ে- যার উপর একএকটি ডুগি বা তবলাকে বসানো হয়।
- হাতুড়ি - সুর বাঁধার জন্য।
- পাউডার: অনেকে হাতে পাউডার' লাগান ঘাম থেকে তবলাকে রক্ষা করার জন্য (গমক বাজাতেও পাউডারের পিচ্ছিলতা সাহায্য করে)।
- তবলার ঢাকা- বাতাসের আর্দ্রতা থেকে তবলাকে রক্ষা করার জন্য।
- নগমা রাখার জন্য সারেঙ্গী কিম্বা হারমোনিয়াম।
[সম্পাদনা] ঘরাণা
আগে তবলা সারেঙ্গীর মত প্রধানতঃ বাইজীগানের সঙ্গতে ব্যবহার হত। তবে উত্তর ভারতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তবলা ধীরে ধীরে এক শ্রদ্ধার আসন লাভ করে। এতে পাঁচটি ঘরাণার ওস্তাদদের মূল্যবান ভূমিকা আছে:
- লক্ষ্ণৌ ঘরাণা
- এলাহাবাদ ঘরাণা
- দিল্লী ঘরাণা
- অজরাড়া ঘরাণা
- ফারুখাবাদ (পাঞ্জাব) ঘরাণা
কয়েকজন বিখ্যাত তবলিয়া:
- উস্তাদ সিদ্দার খান (দিল্লী ঘরাণা)
- হাজী বিলায়েত খান (ফারুখাবাদ ঘরাণার প্রতিষ্ঠাতা)
- উস্তাদ মুনির খান (ফারুখাবাদ ঘরাণা)
- উস্তাদ আহম্মদজান থেরাকুয়া (ফারুখাবাদ ঘরাণা)
- উস্তাদ কেরামতুল্লা খাঁ
- উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ
- পণ্ডিত শামতা প্রসাদ
- পণ্ডিত আনোখেলাল মিশ্র
- কিষণ মহারাজ
- উস্তাদ আল্লারাখা
- উস্তাদ জাকীর হুসেন
[সম্পাদনা] বাঙলার তবলা
বাংলার তবলা ঐতিহ্য অপেক্ষাকৃত নতুন। কলকাতার হিরু (হিরক) গাঙ্গুলী ও জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ বাংলায় তবলাকে জনপ্রিয় করেন। জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ ছিলেন ফারুখাবাদ ঘরাণার মসিত খাঁ সাহেবের ছাত্র।
বাংলার আধুনিক তবলিয়াদের মধ্যে কয়েকজন বিশিষ্ট বক্তিত্ব হলেন:
- শঙ্কর ঘোষ (জ্ঞান প্রকাশ ঘোষের প্রধান শিষ্য )
- অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় (শঙ্কর ঘোষের শিষ্য)
- বিক্রম ঘোষ (শঙ্কর ঘোষের পুত্র)
[সম্পাদনা] তবলা পরিভাষা
তাল (সঙ্গীত), তাল ফেরতা, তালভঙ্গ/ছন্দপতন,
ত্রিতাল, দাদরা, কাহারবা, একতাল, ঝাঁপতাল, রূপক, রূপকড়া, চৌতাল, আড়াচৌতাল, ধামার, যৎ, দীপচন্দী, পাঞ্জাবী (তাল), আদ্ধা, আদিতাল, মত্ততাল, রুদ্র, শিখর, ব্রহ্ম, কুম্ভ, পস্তো, লক্ষ্মী, ফরদোস্ত
লয়, লয়কারী, বিলম্বিত, ঠায় (লয়), দুন (লয়) (দ্বিগুন), ত্রিগুন, চৌদুন, দ্রুত, আড় ((লয়)), বিআড় (লয়), কুআড় (লয়),
বোল (তবলা), সম (সঙ্গীত), তালি (তবলা), খালি (তবলা)
ঠেকা, উপেজ (ঠেকার প্রকার), কায়দা (তবলা), পাল্টা (বিস্তার), রেলা (তবলা), লগ্গী, লড়ী, তিহাই, নবহক্কা তিহাই, চক্রদার, টুকড়া, দমদার ও বেদমদার টুকড়া, মুখড়া, উঠান, গৎ, পরন, পেশকার, লহরা, সঙ্গত, সওয়াল-জবাব,
তালিম, রেওয়াজ, নাড়া বাঁধা, সুর বাঁধা (মেলানো), নগমা,
[সম্পাদনা] তবলার বর্ণমালা
[সম্পাদনা] ডানহাতের
- তে/রে/টে,
- তা/না
- তুন্/থুন্, ড়া
- তিন্
[সম্পাদনা] বামহাতের
- ক/কে
- গ/গে, ঘ/ঘে
- গমক
[সম্পাদনা] দুহাতের
- ধা (তা/না + গ/গে/ঘ/ঘে)
- থা (তা/না + ক/কে)
- ধিন (তিন্ + গ/গে/ঘ/ঘে
- ধে (তে/রে/টে, + গ/গে/ঘ/ঘে )
- ক্রে (কে + তে/রে/টে )
[সম্পাদনা] বিশেষ
- ত্বকত্বক
- ধেরেধেরে
- ধেনেঘেনে, দিঙ্
[সম্পাদনা] বহিঃসংযোগ
বিভিন্ন ঘরাণার সংক্ষিপ্ত বিবরণ