জ্যোতি বসু
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জ্যোতি বসু (জন্ম জুলাই ৮, ১৯১৪) একজন ভারতীয় বাঙালি বামপন্থী রাজনীতিবিদ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নবম মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) (সিপিআইএম) এর পলিটব্যুরোর সদস্য এবং ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
২০০৭-এর ৮ই জুলাই ৯৪ বছরে পা রাখছেলন জ্যোতি বসু। এই দীর্ঘ জীবনে রাজনীতির অনেকটা পথ পরিক্রমণ করে এসেছেন জ্যোতি বসু। ভারতবর্ষের সুপরিচিত জীবিত রাজনীতিবিদদের মধ্যে তিনি সবথেকে প্রবীন। প্রায় শতাব্দীর দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রারম্ভে তাঁর জীবনযাত্রা শুরু। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সাক্ষী থেকেছেন ফ্যাসিবাদের উত্থান, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, সোভিয়েত রাশিয়ার পতন, চীন-ভারত যুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, ভারতের জরুরী অবস্থা, বাবরি মসজিদ ধ্বংস থেকে আমেরিকায় ৯/১১-র বিপর্যয়। কমিউনিস্ট পার্টির শৃংখলা ও তত্ত্বের একনিষ্ঠ অনুগামী হয়েও ঘোর বাস্তববাদী। কংগ্রেস শাসনের অবসানের জন্য বি জে পি-র মত কমিউনিজম বিরোধী রাজনৈতিক দলের হাত ধরতেও দ্বিধা করেননি। পশ্চিম বঙ্গ থেকে তিনিই একমাত্র রাজনীতিবিদ যার নাম ভারতের প্রধানমন্ত্রীত্বের জন্য বারে বারে উঠেছে। সি পি এম দলের নীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীত্বের ডাকে সাড়া না দিতে পারলেও প্রকাশ্যে পার্টির সমালোচনা করতে ছাড়েননি। পার্টির এই ভূমিকাকে 'ঐতিহাসিক ভুল' হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন।
বাবা নিশিকান্ত বসু ছিলেন ডাক্তার। মূল বাসস্থান ছিল বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বারোদি গ্রামে। স্বাধীনতা পূর্ব যুগে বিলেতি শিক্ষার সামাজিক ও পেশগত মূল্য ছিল অসীম। জ্যোতি বসুও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। ১৯৩৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে লন্ডন চলে যান আইন শিক্ষার জন্য। লন্ডনে এসে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে গেল। ভূপেশ গুপ্ত তাঁকে পরিচয় করালেন বৃটেনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে। লন্ডনে থাকাকালীন রজনী পাম দত্ত, বেন ব্রাডলি, হ্যারি পলিট প্রমুখ কমিউনিস্ট নেতাদের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন। জ্যোতি বসু কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়লেন। লন্ডনে ভারত লীগ ও ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টস ইন গ্রেট বৃটেনের সদস্য ও ভারত মজলিসের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহন করেন।
বিশ্ব রাজনীতি তখন তিন ধারায় প্রবাহিত। একদিকে নাৎসি ও ফ্যাসিস্ত শক্তির প্রসার, অন্যদিকে কমিউনিস্টদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বৃদ্ধি। আর একদিকে পুঁজিবাদি গণতান্ত্রিক শক্তির ক্রম বিকাশ। পরাধীন দেশগুলির স্বাধীনতার আকাঙ্খা ক্রমশ প্রবল হয়ে উঠছে। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। ১৯৪০ সালে জ্যোতি বসু দেশে ফিরে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হলেন। রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন শ্রমিক নেতা হিসাবে। জ্যোতি বসুর রাজনৈতিক জীবন ঘটনা বহুল। বিধানসভায় বিরোধী দলের নেতৃত্ব থেকে শুরু করে উপমুখ্যমন্ত্রীত্ব, ১৯৫২ থেকে ১৯৫৭ রাজ্য কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব, ১৯৭৭ সালের ২১শে জুন বাম ফ্রণ্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহন- তার রাজনৈতিক জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই সময়ে ঘটে গেছে বহু পরিবর্তন। দেশ ভাগ হয়েছে, কমিউনিস্ট পার্টি ভাগ হয়েছে, নকশাল রাজনীতির সমর্থন ও বিরোধিতায় বুদ্ধিজীবী থেকে সাধারণ দলীয় কর্মীরা আন্দোলিত হয়েছে।