গ্রহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সৌরজগতের আটটি গ্রহ এবং তিনটি বামন গ্রহের আনুপাতিক চিত্র
সৌরজগতের আটটি গ্রহ এবং তিনটি বামন গ্রহের আনুপাতিক চিত্র

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন ২০০৬ সালে গ্রহের সংজ্ঞা পুনঃনির্ধারণ করেছে। মূলত প্লুটো নিয়ে বাকবিতণ্ডার সূচনা হওয়ার ফলেই এই সংজ্ঞা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিলো। নতুন এই সংজ্ঞা অনুসারে গ্রহ হচ্ছে সৌর জগতের অভ্যন্তরের একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু;[১]

  1. যা সূর্যের চারদিকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান;
  2. যার নিজস্ব অভিকর্ষের জন্য প্রয়োজনীয় যথেষ্ট পরিমাণ ভর রয়েছে যাতে তা দৃঢ় বস্তু শক্তিকে অতিক্রম করতে পারে এবং এর মাধ্যমে একটি তরলস্থৈতিক সাম্যাবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। এবং
  3. যা তার কক্ষপথের চারপাশের প্রতিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারে, অর্থাৎ এর কক্ষপথের ভিতরে কোন কিছুকে থাকতে দেয়না।

অথবা সৌর জগতের বাইরে অন্য কোন তারার ব্যবস্থায় অবস্থিত একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু;[২]

  1. যা একটি তারা বা তারার অবশেষকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান;
  2. যার ভর ডিউটেরিয়াসের তাপ-নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সীমাস্থিত ভরের চেয়ে কম; এবং
  3. যার ভর বা আকার সৌর জগতের ভিতরে গ্রহ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভর বাআকারের সমান বা বেশী।

এই সংজ্ঞা বিবেচনা করলে আমাদের সৌর জগতে মোট আটটি গ্রহ রয়েছে। ২০০৬ সালে আইএইউ সৌর জগতে তিনটি বামন গ্রহ চিহ্নিত করেছে: সেরেস, প্লুটো এবং এরিস। এ পর্যন্ত মোট ২০০ 'র-ও বেশী গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে যার অধিকাংশই সৌর জগতের বাইরে অবস্থিত।[৩] ঐতিহানিকভাবে গ্রহের কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ছিলনা। এ কারণে আমাদের সৌর জগতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংখ্যাক গ্রহ ধরা হয়েছে। এই সমস্যা নিরসনের জন্য আইএইউ ২০০৬ সালে সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে। তবে আইএইউ-এর এই পরিবর্তন অনেকটাই তাৎক্ষণিক এবং এরও পরিবর্তন হতে পারে। তাছাড়া সৌর জগতের বাইরে মুক্তভাবে ভাসমান প্ল্যানেমো এবং নবীন তারা স্তবক বিষয়ে আইএইউ-এর অবস্থান এখনও সুনিশ্চিত নয়।

সূচিপত্র

[সম্পাদনা] ব্যুৎপত্তি

অলিম্পাস দেবতা, যার নামে সৌর জগতের গ্রহগুলোর নামকরণ করা হয়েছে।
অলিম্পাস দেবতা, যার নামে সৌর জগতের গ্রহগুলোর নামকরণ করা হয়েছে।

প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে লক্ষ্য করতেন, কিভাবে নির্দিষ্ট কিছু আলো আকাশের বিভিন্ন স্থানে দেখা যেতো যার সাথে অন্যান্য তারার আলোর পার্থক্য রয়েছে। অথাৎ এই আলোগুলো তারা ছিল না; তারা মনে করতো এগুলো পৃথিবীর চারিদিকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে অবস্থান করছে এবং স্থির অবস্থায় আছে। এই আলোগুলোকে প্রথম প্রথম প্রাচীনকালের গ্রিকরা πλανήτης (planētēs) নামে অভিহিত করতো। এই গ্রীক শব্দটির অর্থ হল বিক্ষিপ্তভাবে পরিভ্রমনকারী। সকলের ধারণা মতে এই শব্দটি থেকেই planet শব্দ উৎপত্তি লাভ করেছে। আর planet শব্দের বাংলা হিসেবে গ্রহ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

পশ্চিমা বিশ্বে নিকট-মহাবিশ্বের পরিমণ্ডলে তথা সৌর জগতে অবস্থিত এই গ্রহগুলোর নামকরণ করা হয়েছে গ্রিকো-রোমান দেবতাদের নামে। গ্রহের এই নামগুলো গ্রীকরাই রেখেছিল। অবশ্য দেবতাদের নামে গ্রহের নামকরণের সূচনা করেছিল প্রাচীন পশ্চিমের সুমেরীয় সভ্যতার মানুষেরা, প্রায় ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বর্তমানে ইরাকে এই সভ্যতার উৎপত্তি ঘটেছিল। পরবর্তীতে মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় এই নামগুলো গৃহীত হয়েছিল যদিও নামগুলোকে তারা উচ্চারণের সুবিধার্থে নিজেদের মত করে নিয়েছিল। উদাহরণস্বরুপ: ব্যাবিলনীয়দের নামকরণ পদ্ধতির উল্লেখ করা যায়। গ্রীকরা তাদের জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং রাশিচক্রের মূল নামকরণগুলো এই ব্যাবিলনীয়দের কাছ থেকেই ধার করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে গ্রিসে ব্যাবিলনিয়ার তত্ত্ব ও নামগুলোর ব্যবহার শুরু হয়।[৪] গ্রীকরা ব্যাবিলনীয় নামের তালিকায় অনেকগুলো নামের পরিবর্তে তাদের নিজেদের দেবতাদের নাম যোগ করে দিয়েছিল। অবশ্য নামের এই অনুবাদে অনেক সন্দেহ রয়ে যায়: যেমন, ব্যাবিলনিয়ার মতে একটি জ্যোতিষ্কের নাম ছিল তাদের যুদ্ধ দেবতা নেরগুল-এর নাম অনুসারে, গ্রীকরা এই জ্যোতিষ্কের নাম রাখে তাদের যুদ্ধ দেবতা এরেসের নামে। কিন্তু এরিস এবং নেরগুলের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে; এরিস শুধু যুদ্ধ দেবতা ছিল, কিনবতু নেরগুল একইসাথে মৃত্যু এবং মহামারীর দেবতা ছিল।[৫]

পরবর্তীতে রোমান সম্রাজ্যের কর্তৃত্ব এবং তারও পরে রোমান ক্যাথলিক চার্চের একাধিপত্যের কারণে কয়েক শতাব্দী জুড়ে গ্রীক নামগুলোর পরিবর্তে রোমান তথা ল্যাটিন নামগুলোই ব্যবহৃত হয়েছে।

[সম্পাদনা] সৌর জগতের অভ্যন্তরে

[সম্পাদনা] গ্রহসমূহের উপাত্ত ও ধর্ম

গ্রহের বৈশিষ্ট্যসমূহ
নাম বিষুবীয়*
ব্যাস
ভর* কক্ষীয়
ব্যাসার্ধ্য (এইউ)
কক্ষীয় পর্যায়
(বছর)
সৌর বিষুবের
সাথে নতি
(°)
কক্ষীয়
উৎকেন্দ্রিকতা
ঘূর্ণন কাল
(দিন)
প্রাকৃতিক উপগ্রহ বলয় পরিবেশ
পার্থিব গ্রহ বুধ ০.৩৯ ০.০৬ ০.৩৯ ০.২৪  ৩.৩৮    ০.২০৬ ৫৮.৬৪ নেই নেই নিম্নতম
শুক্র ০.৯৫ ০.৮২ ০.৭২ ০.৬২  ৩.৮৬    ০.০০৭ -২৪৩.০২ নেই নেই CO2, N2
পৃথিবী** ১.০০ ১.০০ ১.০০ ১.০০  ৭.২৫    ০.০১৭ ১.০০ নেই N2, O2
মঙ্গল ০.৫৩ ০.১১ ১.৫২ ১.৮৮  ৫.৬৫    ০.০৯৩ ১.০৩ নেই CO2, N2
গ্যাসীয় দানব বৃহস্পতি ১১.২১ ৩১৭.৮ ৫.২০ ১১.৮৬  ৬.০৯    ০.০৪৮ ০.৪১ ৬৩ হ্যাঁ H2, He
শনি ৯.৪১ ৯৫.২ ৯.৫৪ ২৯.৪৬  ৫.৫১    ০.০৫৪ ০.৪৩ ৫৬ হ্যাঁ H2, He
ইউরেনাস ৩.৯৮ ১৪.৬ ১৯.২২ ৮৪.০১  ৬.৪৮    ০.০৪৭ -০.৭২ ২৭ হ্যাঁ H2, He
নেপচুন ৩.৮১ ১৭.২ ৩০.০৬ ১৬৪.৮  ৬.৪৩    ০.০০৯ ০.৬৭ ১৩ হ্যাঁ H2, He

[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা] বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা] সংজ্ঞা ও পুনঃশ্রণীকরণ বিতর্ক

সূর্য বুধ শুক্র চাঁদ পৃথিবী Phobos and Deimos মঙ্গল Ceres The asteroid belt বৃহস্পতি Jupiter's natural satellites শনি Saturn's natural satellites ইউরেনাস Uranus' natural satellites Neptune's natural satellites নেপচুন Charon, Nix, and Hydra প্লুটো The Kuiper belt Dysnomia Eris The scattered disc The Oort cloud
সূর্য

সৌর গোলক
সৌর আবরণ
হেলিওপজ
হাইড্রোজেন দেয়াল
গ্রহসমূহ
= চাঁদসমূহ= বলয়সমূহ
বুধ শুক্র পৃথিবী মঙ্গল
বৃহস্পতি শনি ইউরেনাস নেপচুন
বামন গ্রহসমূহ সেরেস প্লুটো এরিস
ক্ষুদ্র
সৌর
জাগতিক
বস্তুসমূহ
গ্রহাণু
(ক্ষুদ্র গ্রহ)
গ্রহাণু শ্রেণী ও পরিবার: ভালকানয়েডসমূহ · পৃথিবীর নিকটবর্তী গ্রহাণু · গ্রহাণু বেষ্টনী
বৃহস্পতি ট্রোজানসমূহ · সেন্টাউর · নেপচুন ট্রোজান · গ্রহাণু চাঁদ · উল্কা
আরও দেখুন: গ্রহাণুসমূহের তালিকা, অর্থ এবং গ্রহাণুসমূহের নামের উচ্চারণ.
নেপচুন-
উত্তর
কুইপার বেষ্টনীপ্লুটিনো: অরকাস · ইক্সিয়ন – Cubewano: ২০০২ ইউএক্স২৫ · ভারুনা ·
১৯৯২ কিউবি · ২০০২ টিএক্স৩০০ · ২০০৩ ইএল৬১ · কোয়াওর · ২০০৫ এফওয়াই · ২০০২ এডব্লিউ১৯৭
বিক্ষিপ্ত চাকতি: ২০০২ টিসি৩০২ · ২০০৪ এক্সআর১৯০ · সেডনা
ধূমকেতু পর্যাবৃত্ত এবং অপর্যাবৃত্ত ধূমকেতুসমূহের তালিকা · ডেমোক্লয়েড · উওর্ট মেঘ
আরও দেখুন: জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু, সৌর জগতের বস্তুসমূহের তালিকা, যার ভিত্তি হচ্ছে; ব্যাসার্ধ্য অথবা ভর, এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রবেশদ্বার