কোরআন-হাদিসে বর্ণিত রহস্য ও ঘটনাসমুহ(পর্ব ৪-৬)
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পর্ব- ৪ কিভাবে মৃত জীবিত হবে?:
সুরা বাকারার ২৬০ নং আয়াতে বলা হয়েছে:¨আর স্মরণ কর,যখন ইব্রাহীম(আ:)বলল,হে আমার পালনকর্তা,আমাকে দেখাও,কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত করবে।বললেন;তুমি কি বিশ্বাস কর না?বলল,অবশ্যই করি,কিন্ত দেখতে এজন্য চাইছি যাতে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি।বললেন,থলে ৪টি পাখী ধরে নাও,পরে সেগুলোকে নিজের পোষ মানিয়ে নাও,অতপর সেগুলোর দেহের একেকটি অংশ বিভিন্ন পাহাড়ের উপর রেখে দাও।তারপর সেগুলোকে ডাক;তোমার নিকট দৌড়ে চলে আসবে।আর জেনে রেখো,নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী,অতি বুদ্ধিসমপন্ন।’’তফসীরে বলা হয় যে,আল্লাহর নির্দেশে তিনি পাখীগুলোকে জবাই করে এর হাড়-মাংস,পাখা ইত্যাদি সবগুলোকেই কিমায় পরিণত করে ও সেগুলোকে ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিজ পছন্দ অনুয়ায়ী কয়েকটি পাহাড়ে এক একটি ভাগ রেখে আসেন। তারপর এদেরকে ডাক দেন।তখন সংগে সংগে হাড়ের সংগে হাড়,পাখার সংগে পাখা,গোশতের সংগে গোশত,রক্তের সংগে রক্ত মিলে পূর্বের রুপ ধারণ করে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার কুদরতে জীবিত হয়ে দৌড়ে তার কাছে ছুটে আসে। তখন আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন-হে ইব্রাহীম!কেয়ামতের দিন এমনিভাবে সবাইকে পুনর্জীবন দেওয়া হবে এবং হিসাব নিকাশের জন্য তার নিকট দাড় করানো হবে।
পর্ব- ৫ বেহেসতী ও দোযগী হওয়া প্রসংগে
ইমাম মালেক,আবু দাউদ,তিরমিযী ও ইমাম আহমদ(রহ:)মুসলিম ইবনে ইয়াসারের বরাতে উদ্ধৃত করেছেন যে,কিছু লোক হযরত ফারুকে আযম(রা:)এর নিকট সুরা আরাফের ১৭২নং আয়াতটির মর্ম সমন্ধে জানতে চাইলে তিনি বালেন-রাসুল(স:)এর কাছে আমি যা শুনেছি তা হলো- আল্লাহসুবহানাতাআলা সর্বপ্রথম আদম(আ:)কে সৃষ্টি করেন।তারপর নিজের কুদরতের হাত যখন তার পিঠে বুলিয়ে দিলেন,তখন তার ঔরসে যত সৎমানুষ জন্মাবার ছিল তারা সব বেরিয়ে এল।তখন তিনি বললেন:আমি এদেরকে সৃষ্টি করেছি জান্নাতের জন্য এবং এরা জান্নাতে যাবার মতই কাজ করবে। পুনরায় দ্বিতীয়বার তার পিঠে কুদরতের হাত বুলালেন।তখন যত পাপী মানুষ তার ঔরসে জন্মাবার ছিল,তাদেরকে বের করা হলো এবং বলা হল,আমি এদেরকে সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য এবং এরা দোযখে যাবার মতই কাজ করবে। তখন সাহাবীদের একজন প্রশ্ন করলেন:ইয়া রাসুলুল্লাহ,প্রথমেই যখন জান্নাতী ও দোযখী সাব্যস্ত করে দেয়া হয়েছে তখন আর আমল করানো হয় কি উদ্দেশ্যে?তিনি এর বিপরীতে যা বললেন তা হলো,মানুষ জানে না যে,সে কোন শ্রেণীভুক্ত,তখন তার পক্ষে নিজের সামর্থ্য,শক্তি ও ইচ্ছাকে এমন কাজেই ব্যয় করা উচিত যা জান্নাতবাসীদের কাজ,আর এমন আশাই পোষণ করা কর্তব্য যে,সেও তাদের অন্তভুর্ক্ত হবে। তিরমিযীতেও আবু হুরাইরা(রা:)একই বিষয় আলোচিত হয়েছে তবে একথাও রয়েছে যে,এভাবে কিয়ামত পযর্ন্ত জন্মাবার মত যত আদমসন্তান বেরিয়ে এল,তাদের সবার ললাটে একটা বিশেষ ধরণের দীপ্তি ছিল! হযরত সাওবান(রা)বলেন,রাসুল(স:)বলেছেন-দোয়া ছাড়া অন্য কিছুই তকদিরকে ফিরাতে পারে না।পুণ্য ছাড়া অন্য কিছুই আয়ুকে বাড়াতে পারে না,আর কৃত পাপই মানুষের জীবিকার পথ রুদ্ব করে।(ইবনে মাজাহ) সুরা হজ্জের ৫নং আয়াতের তফসীরে বলা হয়েছে-রাসুল(স:)বলেন-মানুষের বীর্ষ ৪০ দিন পযর্ন্ত গর্ভাশয়ে জমা থেকে ৪০ দিন পর তা জমাট রক্তে পরিণত হয়।এরপর আরও ৪০ দিন অতিবাহিত হলে তা মাংসপিন্ড হয়ে যায়।অতপর আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেস্তা প্রেরিত হয়।সে তাতে রুহ ফুকে দেয়।এ সময়েই তার সম্পর্কে ৪টি বিষয় লেখে দেয়া হয়:তার বয়স কত হবে,সে কি পরিমাণ রিযিক পাবে,সে কি কি কাজ করবে,পরিনামে সে ভাগ্যবান না হতভাগা হবে।(করতরী)
== এবার আসা যাক, প্রতিটি আত্মার স্বীকারোক্তির কথায়।বলা হয়েছিল,আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই?সবাই সেদিন বলেছিল;হ্যা!কিন্ত প্রশ্ন হলো ,কেন বা তা আর মনে নেই!উদাহরণত:শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে তার ডান কানে আযান আর বাম কানে নামাজের একামত বলার যে সুন্নতটি সব মুসলমানের মাঝে সারা মুসলিম বিশ্বে প্রচলন রয়েছে-যদিও শিশুরা এসব বাক্যের অর্থ কিছুই বুজে না ও বড় হওয়ার পর স্মরণও থাকে না যে,তার কানে কি বলা হয়েছিল? অথচ ঈমানের বীজ ঠিকই বুনা হয়েছিল।আসলে মানুষ হচ্ছে সেই প্রাণী যাকে বার বার স্মরণ করিয়ে দিতে হয়।যে কারণে যুগে যুগে নবী-রাসুলদের আসতে হয়েছিল। বার বার একজনের বাণীই প্রচার করতে হয়েছিল। পবিএ কোরআনে আল্লাহ-জাল্লা শানুহু বলেন-’’অর্থাৎ বিজ্ঞজনদের জন্য এ পৃথিবীতে আল্লাহর বহু নিদর্শন রয়েছে।আর স্বয়ং তোমাদের সত্তার মাঝেও(নিদর্শন রয়েছে),তবুও কি তোমরা দেখছ না?’’ সুতরাং তকদিরের উপড় পূর্ণ বিশ্বাস রাখতেই হবে।
পর্ব- 6
সুরা আল ইমরানের ৫৯ আয়াতে হযরত ঈসা (আ:)সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:¨আল্লাহর কাছে ঈসার উদাহরণ হচ্ছে আদমের অনুরুপ।তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা থেকে। এবং তারপর তাকে বলেছিলেন-হয়ে যাও,সংগে সংগে হয়ে গেলেন।’’ পিতাবিহীন জন্মাবার দরুণ ইহুদীরা তার জন্মবিষয়ে নানা অপবাদ দিত।অথচ আদম(আ:)এর জন্মটা ছিল এর চেয়েও বিস্ময়কর;যিনি পিতামাতাবিহীন জন্ম নিয়েছিলেন। সুরা নিসার ১৫৭নং আয়াতের ব্যাখ্যায় সন্দেহ সম্পর্কে তফসীর হযরত যাহহাক(রাহ:)বলেন-ইহুদীরা যখন হযরত ঈসা(আ:)কে হত্যা করতে বদ্ধপরিকর হলো,তখন তার ভক্ত ও সহচরবৃন্দ এক স্হানে সমবেত হলেন।হযরত ঈসা(আ:)ও সেখানে উপস্হিত হলেন।শয়তান ইবলীস তখন রক্ত পিপাসু ইহুদী ঘাতকদেরকে হযরত ঈসা(আ:)এর অবস্হানের ঠিকানা জানিয়ে দিল।৪০০০ ইহুদী একযোগে গৃহ অবরোধ করল।হযরত ঈসা(আ:)তার ভক্ত ও সহচরবৃন্দকে সম্বোধন করে বললেন,তোমাদের মধ্যে কেউ
এই গৃহ হতে বহির্গত ও নিহত হতে এবং পরকালে বেহেস্তে আমার সাথী হতে প্রস্তত আছো কি?জনৈক ভক্ত আত্মোৎসর্গের জন্যে উঠে দাড়ালেন।হযরত ঈসা(আ:)নিজের জামা ও পাগড়ী তাকে পরিধান করালেন।অতপর তাকে ঈসা (আ:)এর সাদৃশ্ করে দেয়া হলো।যখন তিনি গৃহ থেকে বের হলেন,তখন ইহুদীরা ঈসা(আ:)মনে করে তাকে বন্দী করে নিয়ে গেল ও শুলে চড়িয়ে হত্যা করলো।অপরদিকে ঈসা (আ:)-কে আল্লাহ জাল্লা শানুহু আসমানে তুলে নিলেন(তফসীরে কুরতুবী) অন্য এক বর্ণণায় পাওয়া যায়,যে ইহুদী তাকে হত্যা করতে সর্বপ্রথম ঘরে ঢুকেছিল ,আল্লাহ সেই ব্যক্তির আকার-আকৃতি পরিবর্তন করে হুবহু ঈসা(আ:)এর ন্যায় করে দেন।অতপর আল্লাহ ঈসা(আ:)কে সুকৌশলে আকাশে তুলে আসেন। অন্যদিকে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে সেই লোকটি যখন গৃহ থেকে বেরিয়ে এল তখন অন্যান্য ইহুদীরা তাকেই ঈসা(আ:)মনে করে পাকড়াও করল ও শুলেতে চড়াল। শুলে চড়ানের পর কিছু লোক বললো,আমরা তো নিজেদের লোককেই হত্যা করে ফেলেছি।কেননা,নিহত লোকটির মুখমন্ডল ঈসা(আ:)এর মত হলেও তার অংগ-প্রত্যংগ অন্য রকম।তদুপ এ লোকটি যদি ঈসা হন, তবেআমাদের প্রেরিত লোকটি গেল কোথায়?আর এ লোকটি আমাদের হলে, ঈসা(আ:)ই বা কোথায় গেলেন?সুরা নিসার ১৫৭-১৫৮ আয়াতে এদের এই ধাধার কথাই ব্যক্ত হয়েছে ও সবশেষে আল্লাহ নিজেই বলেছেন-তিনি হচ্ছেন মহাশক্তিমান ও রহস্যময়। তবে এ ২টি বর্ণণার মধ্যে যে কোনটিই সত্য হতে পারে।কোরআন করীমে এ সম্পর্কে সুষ্পষ্ট করে কিছু বলা না হলেও ইমরানের ৫৫নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-এই বিবাদের ফয়সালা করবেন(হাশরের দিন)। যাহোক,তিনি কিয়ামতের আগে পৃথিবীতে আসবেন এবং ইসলামের পথে ডাক দিবেন। ==