ভ্যালেরি টেইলর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ভ্যালেরি টেইলর (ইংরেজি: Valerie Taylor) বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিআরপি (Centre for the Rehabilitation of the Paralysed)-এর পরিকল্পক ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনি মূলত ইংল্যান্ডের নাগরিক। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবা এবং সম্পূর্ণ আপন প্রচেষ্টায় একটি পূর্ণাঙ্গ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে তিনি বিশ্বে এক বিশেষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

[সম্পাদনা] জীবনী

ভ্যালেরি টেইলরের জন্ম, শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ইংল্যান্ডের বাকিংহামশায়ারে। তিনি তরুণ বয়সে ১৯৬৯ সালে Voluntary Service Overseas (VSO) নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজে বাংলাদেশে আসেন। উদ্দেশ্য ছিল ফিজিওথেরাপি প্রদান। তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের নিকটে অবস্থিত চন্দ্রঘোনা হাসপাতালে ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে যোগ দেন। তখনও অবশ্য বাংলাদেশ নামে কোন স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল না। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হওয়ার পর এই দেশ পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিল।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু ১৯৭১ সালেরই সেপ্টেম্বর মাসে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তখনও যুদ্ধ শেষ হতে দুই মাস বাকি ছিল। এ সময় তার কাজ আরও বেড়ে গিয়েছিল। কারণ যুদ্ধের কারণে পঙ্গুত্বের হার বেড়ে গিয়েছিল কয়েকগুণ। তিনি সফলভাবেই একাজ করতে সমর্থ হন। নয় মাস যুদ্ধের পর বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার পর তিনি আরও ২ বছর এদেশে থেকে তার কাজ চালিয়ে যান। ১৯৭৩ সালে আবার ইংল্যান্ডে ফিরে যান। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে একটি সার্থক ফিজিওথেরাপি সংগঠন তৈরীর জন্য উপযুক্ত অর্থ ও অন্যান্য সাহায্যের ব্যবস্থা করা। ১৯৭৫ সালে তিনি আবার বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

এবার বাংলাদেশে ফেরার পর আরও প্রায় ৪ বছর স্বাভাবিকভাবে কেটে যায়। এই সময়ে তিনি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৯ সালে অনেক কষ্ট এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই হাসপাতালের একটি পরিত্যাক্ত গুদাম ঘর পান। এখানেই প্রথম একেবারে ছোট আকারে প্রতিষ্ঠা করেন ফিজিওথেরাপির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিআরপি। প্রতিষ্ঠার পর অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকেন এর উন্নতির জন্য। সাইকেলে চেপে বিভিন্নজনের ঘরে ঘরে যেতেন সাহায্যের জন্য। এজন্য তাকে অনেক গঞ্জনাও সহ্য করতে হয়েছিল। এভাবে এই প্রতিষ্ঠানটি একসময় নিজের পায়ে দাঁড়াতে সমর্থ হয়। পরিণত হয় ৪০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি দাতব্য ক্লিনিকে। এই প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রার এক পর্যায়ে তাকে নেতৃস্থানীয় পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে এটি দাতব্য থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বর্তমানে অবশ্য তার পদ তিনি ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু এর উদারনৈতিক স্বেচ্ছাসেবার অভিযান অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে।

একাজেই তার জীবনের অধিকাংশ সময় পার হয়ে যায় যদিও তখনও কোন বিয়ে করেননি। এসময় দুটি পঙ্গু ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত মেয়েকে দত্তক নেন। তাদের নাম জয়তিপপি। তাদেরকে নিজে কাজ শেখান। এদের মধ্যে একজনকে সি.আর.পি.তে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। অন্যজনের অবস্থা খুব খারাপ থাকায় চাকরী করতে পারেনি। সেই মেয়েটি এখনও টেইলরের বাসায় থাকে। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন।[১]

[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র

  1. www.crp-bangladesh.org- এই ওয়েবসাইটের ইতিহাস অংশে প্রাপ্ত টেইলরের জীবনী

[সম্পাদনা] বহিঃসংযোগ

অন্যান্য ভাষা