জিনেদিন জিদান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

জিনেদিন জিদান
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্মতারিখ জুন ২৩ ১৯৭২
জন্মস্থান মার্সেই, ফ্রান্স
উচ্চতা ১.৮৫ মি (৬'১")
ডাকনাম জিজু, ZZ, ইয়াজ
অবস্থান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার
ক্লাব তথ্য
বর্তমান ক্লাব Retired
পেশাদারী ক্লাব*
বছর ক্লাব উপস্থিতি (গোল)
১৯৮৮-১৯৯২
১৯৯২-১৯৯৬
১৯৯৬-২০০১
২০০১-২০০৬
এএস ক্যানস
গিরোন্দিস বোর্দেউ
জুভেন্টাস এফসি
রিয়েল মাদ্রিদ
৬১ (৬)
১৩৯ (২৮)
১৫১ (২৪)
১৫৫ (৩৪)
জাতীয় দল
১৯৯৪-২০০৬ ফ্রান্স ১০৮ (৩১)[১]

* পেশাদারী ক্লাবের উপস্থিতি ও গোলসংখ্যা
শুধুমাত্র ঘরোয়া লিগের জন্য গণনা করা হয়েছে  এবং
জুলাই ৫, ২০০৬ তারিখ অনুযায়ী সঠিক।
** জাতীয় দলে উপস্থিতি ও গোলসংখ্যা
জুলাই ১০, ২০০৬ তারিখ অনুযায়ী সঠিক।


জিনেদিন ইয়াজিদ জিদান (ফরাসি ভাষায় Zinédine Yazid Zidane জ়িনেদিন্‌ জ়িদ্যান্‌, আরবি ভাষায় زين الدين زيدان জ়ীনাদ্দীন্‌ জ়ীদ্যান্‌, জন্ম জুন ২৩, ১৯৭২) ফরাসি ফুটবল খেলোয়াড়। তাঁর জন্ম ফ্রান্সের মার্সেই শহরে। তাঁর পিতা-মাতা আলজেরীয় বংশোদ্ভূত। জিদানের ডাক নাম জিজু।

সূচিপত্র

[সম্পাদনা] ক্লাব ক্যারিয়ার

[সম্পাদনা] প্রারম্ভিক ক্যারিয়ার,কান এবং বোরেদক্স(১৯৯৮-১৯৯৬)

খুব অল্প বয়সে ইউএস সেইন্ট হেনরি ক্লাবের জুনিয়র টিম এ জিদানের ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয়।এটি মারসেই জেলার লা ক্যাস্তেইল্যান এর একটি স্থানীয় ক্লাব।১৪ বছর বয়সে জিদান সেপ্টেমস ত্যাগ করেন এবং লিগ চ্যাম্পিয়নশীপ এর বাছাই পর্বে অংশগ্রহণ করেন।এখানে এসেই তিনি সর্বপ্রথম এ এস কান এর রিক্রুটার জিন ভ্যারার্ড এর চোখে পড়েন।এরপর জিদান ছয় সপ্তাহ থাকার উদ্দেশ্যে কানে যান কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারদের সাথে খেলার জন্য পরবর্তী চার বছর তিনি সেখানেই থেকে যান।সবাইকে তাক লাগিয়ে জিদান মাত্র ১৭ বছর বয়সে প্রথম বিভাগ ম্যাচ খেলেন।এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।কান এ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলা জিদান তার প্রথম গোলটি করেন ৮ফেব্রুয়ারী,১৯৯১ সালে।ঐ একই বছরে তার ক্লাব উয়েফা লিগ এর বাছাই পর্বে উত্তীর্ণ হওয়াতে বছরটি তার জন্য স্মরনীয় হয়ে থাকে। কান এ জিদানের দ্বিতীয় সেসন ততোটা আশাপ্রদ ছিলোনা।কিন্তু খেলোয়াড়ি জীবনের বাইরে এ সময়েই তার জীবন সঙ্গিনী স্প্যানিশ নৃত্যশিল্পী ভেরোনিকার সাথে জিদানের প্রথম দেখা হয়।[২]পরবর্তী ৪বছর জিদান এফসি গিরোন্ডিন্স দ্য বোরডিক্স ক্লাবে কাটান এবং ক্লাবটিকে ১৯৯৫ সালের ইন্টারটোটো কাপ জয় এবং ৯৬ এর উয়েফা কাপে দ্বিতীয় স্থান দখল করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।বোরডিক্স এ খেলার সময়েই প্রথম বিজেন্তে লিজারাজু এবং ক্রিস্টোফার ডুগারির সাথে তিনি মিডফিল্ড এ একসাথে খেলেন।পরবর্তিতে এই মিডফিল্ডারত্রয়ী ফ্রান্স জাতীয় দলেও একসাথে খেলেন এবং ১৯৯৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ে অসামান্য ভুমিকা রাখেন।১৯৯৬ সালে জিদান ৳৩ মিলিয়ন ট্রান্সফার ফির বিনিময়ে ইতালির জুভেন্টাস এফসি ক্লাবে যোগ দেন।

[সম্পাদনা] তুরিন এবং মাদ্রিদ(১৯৯৬-২০০৬)

জুভেন্টাস এ থাকাকালীন সময়ে দিদিয়ের ডেসচ্যাম্পস,আলসেন্দ্রো ডেল পিয়েরোএবং এডগার ডেভিডস এর পাশাপাশি জিদান মার্সেলো লিপ্পির দলটির অন্যতম প্রধান খেলোয়ার এবং প্লেমেকার ছিলেন।তার দল এই সময়ে দুইবার সিরিএ শিরোপা এবং ১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সালে উপর্যুপুরি দুইবার উয়েফা লীগএর ফাইনাল এ ওঠে।কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে দুইবারই স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদএর কাছে তারা হেরে বসে। ২০০১ সালে জিদান জুভেন্টাস থেকে রেকর্ড পরিমাণ ৳৬৬ মিলিয়ন ট্রান্সফার ফির বিনিময়ে ৪ বছর মেয়াদে রিয়াল মাদ্রিদ এ যোগ দেন।গ্লাসগোর হ্যাম্পডেন পার্কে অনুষ্ঠিত ২০০১-২০০২ চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে জার্মান ক্লাব বেয়ার লেভারকুসেনএর বিরুদ্ধে রিয়াল মাদ্রিদ ২-১ গোল ব্যবধানে জয়ী হয় যাতে অসাধারণ ভলি থেকে করা জয়সূচক গোলটি আসে জিদানের পা থেকে। ২০০৬ সালের ৭ মে সান্টিয়াগো বার্নাবু স্টেডিয়ামে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে জিদান তার শেষ ম্যাচটি খেলেন।কালজয়ী এই খেলোয়াড়ের সম্মানে সেদিন তার সতীর্থরা ক্লাব লোগোর নিচে "জিদান ২০০১-২০০৬" লিখা সম্বলিত বিশেষ জার্সি পরে খেলতে নামেন।ভিলারিয়াল ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলা এই ম্যাচটি ৩-৩ গোলে ড্র হয় যার দ্বিতীয় গোলটি ছিলো জিদানের করা।ম্যাচ শেষে জিদান ভিলারিয়াল মিডফিল্ডার ও আর্জেন্টাইন তারকাজুয়ান রোমান রিকুয়েমের সাথে তার জার্সি বদল করেন।খেলার পুরোসময় জুড়ে রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের মুর্হূমুহূ করতালিতে তিনি অভিনন্দিত হন এবং খেলা শেষে হাজারো ভক্তের ভালোবাসায় সিক্ত জিদান অশ্রুসিক্ত নয়নে রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় জানান।[৩]

[সম্পাদনা] আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার

জিদান দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী ছিলেন(ফ্রান্স এবং আলজেরিয়া)।সেই সুবাদে তিনি চাইলে আলজেরিয়া জাতীয় দলের হয়েও খেলতে পারতেন।কিন্তু আলজেরিয়া ফুটবল দলের তদানীন্তন কোচ আবদেল হামিদ কারমালি যথেষ্ট গতিসম্পন্ন নয় এই অজুহাতে তাকে জাতীয় দলে নেয়া থেকে বিরত থাকেন।[৪]

জিদান ১৯৯৪সালের ১৭ আগস্ট ফরাসী জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তার প্রথম ম্যাচটি খেলেন।চেক প্রজাতন্ত্র জাতীয় দলের বিরুদ্বে অনুষ্ঠিত এই প্রীতি ম্যাচটিতে জিদান ৬৩ মিনিটের মাথায় যখন বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন ফ্রান্স তখন ২-০ গোলে পিছিয়ে ছিল।জিদান আসার পর তিনি দুইটি গোল করেন এবং ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলে ড্র হয়।

European Footballer of the Year (Ballon d'Or) awarded to Zidane in 1998
European Footballer of the Year (Ballon d'Or) awarded to Zidane in 1998

এই সময়ে ফরাসী দলের ম্যানেজার আইমে জ্যাক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর ততকালীন ফুটবল তারকা এরিক ক্যান্টোনাকে কেন্দ্র করে দল সাজাতে চেয়েছিলেন।কিন্তু ক্যান্টোনার উপরে তখন একবছরের নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্লেমেকার হিসেবে তিনি জিদানকে খেলান।তার এই খেলোয়ার নির্বাচনের ব্যাপারে ভক্ত এবং ফুটবল বোদ্ধাদের ব্যাপক সমালোচনা স্বত্বেও ফ্রান্স ইউরো ১৯৯৬ এর সেমিফাইনালে ওঠে এবং কিন্তু চেক প্রজাতন্ত্রের কাছে পেনাল্টিতে ৬-৫ গোলে হেরে যায়।

[সম্পাদনা] ১৯৯৮ বিশ্বকাপ

জিদান ১৯৯৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স জাতীয় দলের সদস্য ছিলেন।সৌদি আরবের বিপক্ষে বিশ্বকাপে ফ্রান্সের দ্বিতীয় ম্যাচে সৌদি অধিনায়ক ফুয়াদ আমিনকে থুথু মারার অপরাধে জিদানকে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় এবং পরবর্তী দুই ম্যাচের জন্য তিনি নিষিদ্ধ হন।এ সময়ে যারা তার পাশে ছিলেন তাদের ভাষ্যমতে আমিন জিদানকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করেছিলেন।এই ঘটনাটি ২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইতালীর বিপক্ষে পাওয়া লাল কার্ড এর ঘটনার সাথে যথেষ্ট সাদৃশ্যপূর্ণ।[৫]কোয়ার্টার ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে একটি গোল করার পর জিদান টুর্নামেন্ট ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে তার অপর দুইটি গোল করেন।দুটি গোলই তিনি প্রথমার্ধে কর্নার থেকে পাওয়া বল হেড করার মাধ্যমে করেন।এই ম্যাচটিতে ফ্রান্স ৩-০ গোলে ব্রাজিলকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করে।জিদান ম্যান অব দা ম্যাচ নির্বাচিত হন।]

[সম্পাদনা] ২০০০ ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ

অসাধারন ফুটবল শৈলী ও গুরুত্বপুর্ণ গোল করার মাধ্যমে ইউরো ২০০০ এ ফ্রান্স জাতীয় দলকে ফাইনালে তুলতে জিদান অসামান্য অবদান রাখেন।তিনি স্পেনের বিপক্ষে সরাসরি ফ্রি কিক থেকে একটি এবং সেমিফাইনালে পর্তুগালের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল্ডেন গোল করে দলকে ফাইনালে তোলেন।ফাইনালে ফ্রান্স ইতালিকে পরাজিত করে ফুটবল ইতিহাসে ২৬ বছর পর প্রথমবারের মত একই সাথে বিশ্বকাপ ও ইউরোপীয়ান কাপ উভয় শিরোপা অর্জনের অসামান্য গৌরব অর্জন করে (১৯৭৪ সালে জার্মানী সর্বশেষ এ গৌরব অর্জন করেছিলো)।ফলশ্রুতিতে ফ্রান্স বিশ্ব র‌্যাংকিং এ ১ নম্বর অবস্থানে চলে আসে।

[সম্পাদনা] ইনজুরি,অবসর গ্রহন ও পুনরায় প্রত্যাবর্তন

উরুতে ইনজুরির জন্য জিদান ২০০২ সালে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে নিয়মিত একাদশের বাইরে থাকেন।তার অনুপস্থিতিতে খেলা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ফ্রান্স আফ্রিকার নবাগত দল সেনেগালের বিরুদ্ধে ১-০ গোলে বিস্ময়করভাবে পরাজিত হয়। ইনজুরি থেকে ফিরে জিদান তৃতীয় ম্যাচে খেলতে নামলেও তিনি তার স্বাভাবিক খেলা খেলতে ব্যর্থ হন।ফলশ্রুতিতে জিদান ও তার দল বিশ্বকাপ আসরের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয়।[৬]ফলশ্রুতিতে জিদান ও তার দল কোন গোল না করেই বিশ্বকাপ আসরের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয় এবং বিশ্বকাপ শিরোপা অক্ষুন্ন রাখতে ব্যর্থ হয়।

ইউরো ২০০৪ এ জিদান ও তার দলের শুরুটা ভালোই হয়েছিল।গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমে পিছিয়ে থেকেও জিদানের নৈপুণ্যে ফ্রান্স শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়। এ ম্যাচটিতে জিদান দুটি গোল করেন যার একটি ফ্রি কিক ও আরেকটি পেনাল্টি থেকে করা।২০০৪ সালের ১২ আগস্ট কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্স পরবর্তী সময়ে ইউরো ২০০৪ শিরোপা জয়ী গ্রীস এর কাছে অপ্রত্যাশিত ভাবে হেরে যায়।এর পর পরই জিদান আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষনা দেন।[৭]

পরবর্তীতে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ফ্রান্স যখন চুড়ান্ত পর্বে উঠতে হিমশিম খাচ্ছিল,২০০৫ সালের ৩ আগস্ট জিদান আবার আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রত্যাবর্তনের ঘোষনা দেন এবং ফ্রান্স জাতীয় দলের অধিনায়ক নিযুক্ত হন।[৮]২০০৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জয়ের মধ্য দিয়ে জিদান প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে দ্বিতীয় বারের মতো প্রত্যাবর্তন করেন এবং ফ্রান্স গ্রপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।[৯]

রিয়াল মাদ্রিদে এক মৌসুম ইনজুরিতে কাটানোর পর ২০০৬ সালের ২৫এপ্রিল জিদান ২০০৬ বিশ্বকাপের পর পরই অবসর নেবার কথা ব্যাক্ত করেন।[১০]

২০০৬ সালের ২৭ মে জিদান ফ্রান্স জাতীয় দলের হয়ে তার ১০০ তম ম্যাচ খেলেন।প্যারিসের সেইন্ট ডেনিসের স্টাডে দ্য ফ্রান্স স্টেডিয়ামে মেক্সিকোর বিপক্ষে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচটিতে ফ্রান্স ১-০ তে জয়ী হয়।স্টেডিয়ামটিতে এটিই ছিলো তার শেষ ম্যাচ এবং দিদিয়ের ডেসচ্যাম্প,মার্সেই দেশাই এবং লিলিয়ান থুরামের পরে চতুর্থ ফরাসী খেলোয়ার হিসেবে জিদান ১০০ টি ম্যাচ খেলার গৌরব অর্জন করেন।[১১]

[সম্পাদনা] ২০০৬ বিশ্বকাপ

A French girl celebrating "Zizou"
A French girl celebrating "Zizou"

২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে খেলার একবারে শেষ মুহূর্তে এক কোরিয়ান ডিফেন্ডারকে ধাক্কা দেয়ার অপরাধে জিদান হলুদ কার্ড দেখেন।টুর্নামেন্টের উপর্যুপরি দুই ম্যাচে হলুদ কার্ড পাওয়ায় জিদান গ্রুপের তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচের জন্য সাসপেন্ড হন।[১২] জিদানকে ছাড়াই গ্রুপের তৃতীয় ম্যাচে ফ্রান্স টোগোর বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়ী হয়।এর ফলে ফ্রান্স নকআউট পর্বে উত্তীর্ণ হয় এবং জিদান পরবর্তী ম্যাচগুলোতে দলের জন্য কিছু করার সুযোগ পান।[১৩] রাউন্ডের ১৬তম ম্যাচে জিদান স্পেনের বিপক্ষে খেলায় আবার মাঠে ফেরেন।জিদানের ফ্রি কিক থেকে পেনাল্টি এরিয়াতে পাওয়া বলে প্যাট্রিক ভিয়েরা ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটি করেন।এরপর খেলার অতিরিক্ত সময়ে (স্টপেজ টাইম) জিদান ম্যাচের শেষ গোলটি করেন এবং ফ্রান্স ৩-১ এ জয়ী হয়। এই জয়ের ফলে ফ্রান্স কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ণ হয় এবং বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়।জিদানের ফ্রি কিক থেকে পাওয়া বলে ম্যাচের একমাত্র গোলটি আসে ফরাসী স্ট্রাইকার থিয়েরি অরির পা থেকে এবং ম্যাচটিতে ফ্রান্স ১-০ গোলে জয়ী হয়।খেলার পুরোটা সময়জুড়ে ব্রাজিলিয়ানদের উপর ফরাসীদের একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় থাকে।জিদানের নেতৃত্বে ফরাসী মধ্যভাগ প্রতিপক্ষের সীমানায় যেখানে একের পর এক আক্রমন রচনা করেছে তার বিপরীতে ব্রাজিলিয়ানরা ম্যাচের পুরোসময়ের মধ্যে মাত্র একবারের জন্য বিপক্ষ সীমানায় সত্যিকারের আক্রমণ চালাতে পেরেছিলো।ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জিদান তার পায়ের মায়াবী কারুকার্যে পুরো ফুটবল বিশ্বকে মোহাবিষ্ট করে রাখে। ফিফার টেকনিক্যাল স্টাডি গ্রুপের বিবেচনায় জিদান ম্যাচটিতে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন।[১৪] এর চারদিন পর অনুষ্ঠিত সেমিফাইনালে ফ্রান্স পর্তুগালের মুখোমুখি হয়।জিদান পেনাল্টি থেকে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন এবং পর্তুগালকে হারিয়ে ফ্রান্স ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়।

২০০৬ সালের ৯ জুলাই ফ্রান্স ফাইনালে ইতালির মুখোমুখি হয়।এটি ছিলো জিদানের জন্য দ্বিতীয় এবং শেষ বিশ্বকাপ ফাইনাল।ম্যাচের সপ্তম মিনিটের মাথায় জিদান পেনাল্টি থেকে গোল করে ফ্রান্সকে ১-০ তে এগিয়ে দেন।এরই সাথে পেলে,পল ব্রিটনার এবং ভাভার পরে মাত্র চতুর্থ খেলোয়ার হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করার বিরল সম্মান অর্জন করেন।একই সাথে জিদান বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে যুগ্মভাবে ভাভার সাথে প্রথম স্থানে চলে আসেন।খেলার ১১০ মিনিটের মাথায় জিদান লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন(নিচে দেখুন) ফলে অতিরিক্ত সময়ের পরেও ফলাফল ১-১ থাকায় অনুষ্ঠিত পেনাল্টি শুটআউটে জিদান অংশ নিতে পারেননি।টাইব্রেকারে ইতালি ৫-৩ গোলে ফ্রান্সকে পরাজিত করে ২০০৬ ফুটবল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়।ফাইনালে জিদানের অসংলগ্ন আচরণের জন্য নানা সমালোচনা স্বত্বেও জিদান ২০০৬ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল লাভ করেন।[১৫]

[সম্পাদনা] লাল কার্ড প্রাপ্তি

জিদান ফুটবল বিশ্বে শান্ত,বিনয়ী এবং লাজুক হিসেবেই পরিচিত।তদুপরি খুব অল্প সময়ই তিনি মাঠে উত্তেজিত আচরণ প্রকাশ করেছেন।১৯৯৮ এবং ২০০৬ বিশ্বকাপের দুটো লাল কার্ড প্রাপ্তি ছাড়াও ২০০/২০০১ সালে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জুভেন্টাস বনাম হামবুর্গ এসভি ম্যাচে জোসে কিয়েন্তেকে ঢুঁ মেরে জিদান লাল কার্ড পেয়েছিলেন।[৫]জিদান তার ফুটবল ক্যারিয়ারে সর্বমোট ১৪বার লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। [১৬]

জিদান বিশ্বের চারজন খেলোয়াড়ের একজন যিনি বিশ্বকাপ ফাইনালে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন এবং দুইজন খেলোয়াড়ের একজন যিনি দুটি আলাদা বিশ্বকাপে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন(অন্যজন হচ্ছেন ক্যামেরুনের রিগোবার্ট সং)।[১৭]

[সম্পাদনা] মার্কো মাতারাজ্জির সাথে বিবাদ

চিত্র:Zidane headbut.jpg
২০০৬ সনের বিশ্বকাপে জিদানের সাথে মাতেরাজ্জির বিরোধ। জিদান মাথা দিয়ে মাতেরাজ্জিকে গুঁতো দেন।

২০০৬ বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে ১১০ মিনিটের মাথায় জিদান ইতালিয়ান ডিফেন্ডার মার্কো মাতারাজ্জির বুকে মাথা দিয়ে ঢুঁ মারার অপরাধে লাল কার্ড দেখেন।ঘটনার শুরু হয় জিদান এবং মাতারাজ্জির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মধ্য দিয়ে।এরপর জিদান যখন মাতারাজ্জির কাছ থেকে চলে আসতে শুরু করেন তাকে উদ্দেশ্য করে মাতারাজ্জি আবার কিছু কথা বলেন।এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে জিদান হঠা করে ঘুরে দাড়ান,কিছুটা দৌড়ে এসে সরাসরি মাতারাজ্জির বুকে মাথা দিয়ে ঢুঁ মারেন।ফলশ্রুতিতে মাতারাজ্জি বুক চেপে ধরে মাটিতে পরে যান।ঘটনার পরবর্তীতে খেলা যদিও থেমে যায় কিন্তু ব্যাপারটি ঘটেছিলো রেফারি হোরাসিও এলিযোন্ডোর চোখের আড়ালে।ম্যাচ কর্মকর্তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, চতুর্থ কর্মকর্তা লুইস মেদিনা ক্যান্তালেযো ইয়ারফোনের মাধ্যমে রেফারিকে বিষয়টি অবহিত করেন।পরবর্তীতে সহকারী রেফারির সাথে আলোচনা করে বিষয়টি নিশ্চিত হবার পর এলযোন্ডো জিদানকে লাল কার্ড প্রদর্শন করেন এবং তাকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন।

[সম্পাদনা] প্রতিক্রিয়া

বিশ্বকাপ ফাইনালের পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক জিদানকে জাতীয় বীর হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং উদার হৃদয়ের মানুষ বলে মন্তব্য করেন।[১৮] শিরাক পরবর্তীতে জিদানের উক্ত ঘটনাকে অমার্জনীয় বলে অভিহিত করলেও তিনি আরো বলেন যে এর জন্য জিদানকে প্ররোচিত করা হয়েছিল।[১৯] আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আব্দেল আজিজ বুটেফ্লিকা একটি চিঠির মাধ্যমে জিদানের প্রতি তার সমর্থন ও একাত্ততা ঘোষনা করেন।[২০] ফরাসি পত্রিকা "লা ফিগারো" জিদানের গুতো দেবার ঘটনাটিকে "অমার্জনীয়" বলে আখ্যায়িত করে।[২১] ফ্রান্সে প্রকাশিত খেলাধুলা বিষয়ক দৈনিক পত্রিকা "লা ইকুইপে" এর প্রধান সম্পাদক জিদানকে মুহাম্মদ আলীর সাথে তুলনা করেন। একই সাথে তিনি এও উল্লেখ করেন যে মুহাম্মদ আলী,জেসি ওয়েন্স কিংবা পেলে কখনো জিদানের মত খেলাধুলার নিয়ম ভঙ্গ করেনি।একি সাথে তিনি প্রশ্ন রাখেন যে জিদান পুরো ব্যাপারটিকে সমগ্র বিশ্বের শিশুদের সামনে কিভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন,অবশ্য পরবর্তী দিন উক্ত মন্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমা চান।[২২] এত আলোচনা সমালোচনা স্বত্তেও জিদানের স্পন্সর তার সাথে থাকার কথা ঘোষনা দেন।[২৩]

ফিফার তদন্ত

জিদানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ফিফা ঘটনাটির উপযুক্ত তদন্তের স্বার্থে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।[২৪] তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে ফিফা মাতারাজ্জির বিরুদ্ধে $৪,১১৭ ডলার ক্ষতিপূরণ ধার্য করে এবং দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ব ঘোষনা করে।অন্যদিকে জিদানকে $৬,১৭৬ ডলার জরিমানা এবং পরবর্তী তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ব ঘোষনা করা হয়। ফিফার ভাষ্য অনুযায়ী জিদান ও মাতারাজ্জি উভয়েই বাদানুবাদটিকে নিন্দসূচক বলে স্বীকার করে কিন্তু তা বর্ণবাদমূলক ছিলনা।জিদান যেহেতু বিশ্বকাপ ফাইনালের পরপরই অবসরে চলে যান সেহেতু তিনি তিন ম্যাচের নিষেধাঞার পরিবর্তে তিন দিন ফিফার পক্ষে স্বেচ্ছাসেবীমূলক কাজে অংশ নেন।[২৫]

[সম্পাদনা] দাতব্য কর্মসূচী

২০০৭ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী জিদান উত্তর থাইল্যান্ড এ শিশুদের জন্য এইচ আই ভি/এইডস তহবিল গঠনের স্বার্থে একটি প্রদর্শনী ম্যাচে অংশ নেন যাতে ১০,০০০ এরও বেশি জিদান সমর্থক উপস্থিত ছিল।এই খেলাটি থেকে $7,750 ডলার তহবিলের জন্য জমা হয়।[২৬]

২০০৭ সালের ১৯ মার্চ জিদান অবসর গ্রহনের পর প্রথম বারের মত ইউরোপের মাটিতে একটি প্রদর্শনী ম্যাচে খেলতে নামেন।খেলাটি মার্সেইএর স্টাডে ভেলোড্রোমে অনুষ্ঠিত হয়।"দারিদ্রতার বিরুদ্বে খেলা" শীর্ষক ম্যাচটির আয়োজক ছিলো ইউএনডিপি[২৭]


[সম্পাদনা] পুরস্কার,সম্মননা এবং অন্যান্য কর্মসূচি

২০০৪ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন জিদানকে বিশ্বের ৪২ তম সর্বোচ্চ সম্মানী প্রাপ্ত খেলোয়ার হিসেবে ঘোষনা করে যার বাত"সরিক আয় হলো ইউএস$১.৫ মিলিয়ন ডলার।[২৮] ২০০১ সালে জিদান ইউএনডিপির "দারিদ্রের বিরুদ্বে যুদ্ব" বিষয়ক কর্মসূচির জন্য জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিযূক্ত হন।[২৯] ২০০০ সাল থেকে জিদান নিয়মিত ভাবে দৈনিক পত্রিকার ভোটে অন্যতম জনপ্রিয় ফরাসী ব্যক্তিত্ব হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন।তিনি ২০০০,২০০৩ এবং ২০০৬সর্বাধিক জনপ্রিয় ব্যাক্তিত্ব ,২০০৫ সালে দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং ২০০১ ও ২০০২ সালে চতুর্থ সর্বাধিক জনপ্রিয় সর্বাধিক ব্যাক্তিত্ব হিসেবে নির্বাচিত হন।[৩০]

২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে জিদান নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস এর অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ সফরে যান।[৩১][৩২]

[সম্পাদনা] তথ্যসুত্র

  1. 2006 FIFA World Cup Germany - Player Profile Page - ZIDANE Zinedine - France. FIFA. Retrieved on 2006-07-10.
  2. http://www.socceraddicts.com/zinedinezidane.htm
  3. "Zidane's last show at Bernabeu", People's Daily Online, 2006-05-09. Retrieved on 2007-03-14.
  4. The scarred French messiah
  5. ৫.০ ৫.১ Williams, Richard, "Zidane exits the stage with a walk of shame", Guardian Unlimited, 10 July 2006. Retrieved on 2006-07-10.
  6. Brewin, John, "Arrogant approach finishes favourites", ESPNsoccernet, 2002-06-12. Retrieved on 2006-07-11.
  7. "Zidane quits French national team", CNN International, 2004-08-12. Retrieved on 2006-07-11.
  8. "Zidane & Makélélé back for France", BBC Sport, 2005-08-03. Retrieved on 2006-07-11.
  9. "France 3-0 Faroe Islands: Cisse double strike", ESPNsoccernet, 2005-09-03. Retrieved on 2006-07-11.
  10. "Zidane to retire after FIFA World Cup™", Reuters, 2006-04-25. Retrieved on 2006-07-11.
  11. Pugmire, Jerome, "Malouda leads France past Mexico", Associated Press, 2006-05-27. Retrieved on 2006-07-11.
  12. FRANCE 1-1 KOREA REPUBLIC. FIFA: (2006-06-18). Retrieved on 2006-07-11.
  13. TOGO 0-2 FRANCE. FIFA: (2006-06-18). Retrieved on 2006-07-11.
  14. Man of the Match: Stage 2. FIFA: (2006-07-01). Retrieved on 2006-07-02.
  15. "Zidane wins Golden Ball award", Reuters UK, 10 July 2006. Retrieved on 2006-07-13.
  16. "Fourth Official: I saw Zidane's Headbutt", ESPNsoccernet, 11 July 2006. Retrieved on 2006-07-11.
  17. Buckingham, Mark, "1998 World Cup - France", Sky Sports. Retrieved on 2006-07-11.
  18. Boyle, Jon, "French fans praise Zidane despite red card", The Washington Post, 9 July 2006. Retrieved on 2006-07-11.
  19. "Chirac calls Zidane head-butt 'unacceptable'", MSNBC, 14 July, 2006. Retrieved on 2006-07-14.
  20. "Algerian president backs Zidane over head-butth", Reuters UK, 11 July 2006. Retrieved on 2006-07-11.
  21. "French media condemns Zidane", UTV, 11 July 2006. Retrieved on 2006-07-11.
  22. "France baffled by Zidane's folly", BBC, 11 July 2006. Retrieved on 2006-07-12.
  23. "Sponsors stick with Zidane despite head-butt", USA Today, 11 July 2006. Retrieved on 2006-07-11.
  24. FIFA (2006-07-13). FIFA opens disciplinary proceedings against Marco Materazzi. Press release. Retrieved on 2006-07-13.
  25. "Zidane and Materazzi fined and banned by FIFA", Reuters, 20 July 2006. Retrieved on 2006-07-20.
  26. Zidane big fan of Celtic star Nakamura
  27. [1] "Zidane & Friends win charity game"
  28. "The Best Paid Athletes", Forbes.com, 2004-06-24. Retrieved on 2006-07-19.
  29. United Nations Information Service Vienna (7 March 2001). French Soccer Champion Zinédine Zidane to Be Appointed UNDP Goodwill Ambassador. Press release. Retrieved on 2006-07-20.
  30. See:
  31. "Bangladesh hails 'messiah' Zidane", BBC, 7 November 2006. Retrieved on 2006-11-12. (written in English)
  32. "News on Zidane in Bangladesh", RTV, 12 November 2006. Retrieved on 2006-11-12. (written in Bengali)
পূর্বসূরী:
রোনালদো
ইউরোপীয় বর্ষসেরা ফুটবলার
১৯৯৮
উত্তরসূরী:
রিভালদো