লালন
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লালন শাহ বা লালন ফকির (১৭৭৪- অক্টোবর ১৭, ১৮৯০)[১] লালন শাহ ভারতীয় উপমহাদেশ এর সবচেয়ে প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক সাধকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একাধারে বাউল সাধক, বাউল গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। তাঁকে ‘বাউল সম্রাট’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তার প্রায় সহস্রাধিক গান সংগৃহীত হয়েছে।[২] কিন্তু তাঁর জীবনী সম্পর্কে কোন নির্ভরযোগ্য উপকরণ পাওয়া যায় নি।
লালন শাহের জন্মস্থান যশোর ঝিনাইদাহ মহকুমার হারিশপুর গ্রামে।[৩] লালন শাহের জাতি বা সম্প্রদায় নিয়ে অনেক মতভেদ আছে এবং তা তাঁর জীবিত থাকাকালীন সময়ও বিদ্যমান ছিল। কিন্তু লালনের বেশ কিছু রচনাবলী থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে তিনি গোত্র-বর্ণ-সম্প্রদায় সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না।
সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে। |
কথিত আছে যে, তিনি হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন, কিন্তু ছেলেবেলায় অসুস্থ অবস্থায় তার পরিবার তাকে ত্যাগ করে। তখন সিরাজ সাঁই নামের একজন মুসলিম বাউল তাকে আশ্রয় দেন এবং সুস্থ করে তোলেন।
ব্রিটিশ শাসন আমলে যখন হিন্দু ও মুসলিম মধ্যে জাতিগত বিবেধ সংঘাত বাড়ছিল তখন লালন ছিলেন এর বিরুধ্যে প্রতিবাদী কন্ঠ। তিনি মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ এ বিশ্বাস করতেন না। তাঁর কাছে জাতি, ধর্ম, বর্ণ এসবের কোন দাম ছিলনা। তিনি ছিলেন মানবতাবাদী।
বাউলদের জন্য তিনি যেসব গান রচনা করেন, তা কালে কালে এত জনপ্রিয়তা লাভ করে যে মানুষ এর মুখে মুখে তা পুরো বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও লালনের গানে প্রভাবিত হয়েছিলেন।
লালন কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়াতে একটি আখড়া তৈরি করেন, যেখানে তিনি তার শিষ্য দের শিক্ষা দিতেন। ১৮৯০ সালের ১৭ই অক্টোবর লালন ১১৬ বছর বয়সে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়াতে নিজ আখড়ায় মৃত্যুবরণ করেন। আজও সারা দেশ থেকে বাউলরা অক্টোবর মাসে ছেউড়িয়ায় মিলিত হয়ে লালন এর প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র
- ↑ উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, "বাংলার বাউল ও বাউল গান", ৩য় খন্ড, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৮।
- ↑ এস. এম. লুৎফর রহমান, "লালন শাহ্ জীবন ও গান", ৩য় সংস্করণ, জুন ২০০৬, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২১, ISBN 9845550436।
- ↑ দুদ্দু শাহ, "লালন-জীবনী (পান্ডুলিপি)",পৃষ্ঠা ১।