ডিএনএ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) একটি নিউক্লিক এসিড যা জীবদেহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রনের জিনগত নির্দেশ ধারন করে। সকল জীবের ডিএনএ জিনোম থাকে। একটি সম্ভাব্য ব্যতিক্রম হচ্ছে কিছু ভাইরাস গ্রুপ যাদের আরএনএ জিনোম রয়েছে, তবে ভাইরাসকে সাধারনত জীবন্ত প্রাণ হিসেবে ধরা হয় না। কোষে ডিএনএর প্রধান কাজ দীর্ঘকালের জন্য তথ্য সংরক্ষন। জিনোমকে কখনও নীলনকশার সাথে তুলনা করা হয় কারন, এতে কোষের বিভিন্ন অংশে যেমনঃ প্রোটিন ও আরএনএ অণু, গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী থাকে। ডিএনএর যে অংশ এ জিনগত তথ্য বহন করে তাদের বলে জিন, কিন্তু অন্যান্য ডিএনএ ক্রমের গঠনগত তাৎপর্য রয়েছে অথবা তারা জিনগত তথ্য নিয়ন্ত্রনে ব্যবহৃত হয়।
ইউক্যারিয়ট যেমন প্রাণী ও উদ্ভিদে , ডিএনএ নিউক্লিয়াসের ভিতরে থাকে, তবে প্রোক্যারিয়ট যেমন ব্যাকটেরিয়াতে, ডিএনএ কোষের সাইটোপ্লাজমে থাকে। উৎসেচকের মত ডিএনএ অধিকাংশ জৈবরসায়ন বিক্রিয়ায় সরাসরি অংশ নেয় না; মূলত, বিভিন্ন উৎসেচক ডিএনএর উপর কাজ করে এর তথ্য নকল করে রেপ্লিকেশনের মাধ্যমে আরো ডিএনএ তৈরী করে, অথবা অনুলিপি তৈরী ও রুপান্তর ঘটিয়ে একে প্রোটিনে পরিনত করে। ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিন প্রোটিন যেমন হিস্টোন ডিএনএকে ঘনসন্নিবেশিত ও সংগঠিত করে, যা নিউক্লিয়াসের অন্যান্য প্রোটিনের সাথে এর আচরন নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
ডিএনএ নিউক্লিওটাইড নামক অনু সরল দিয়ে গঠিত একটি লম্বা পলিমার যা চিনি ও ফসফেট গ্রুপ দিয়ে গঠিত মেরুদন্ডের সাথে যুক্ত। এই মেরুদন্ডে চার ধরনের অণু থাকে যাদের বলে ক্ষার, এই চারটি ক্ষারের ক্রমই তথ্য ধারন করে। ডিএনএর প্রধান কাজ জিনগত কোড ব্যবহার করে প্রোটিন থেকে অ্যামিনো এসিড এর ক্রম তৈরী করা। জিনগত কোড পড়ার জন্য কোষ নিউক্লিক এসিড আরএনএতে ডিএনএর কিছু অংশের নকল তৈরী করে। কিছু আরএনএ নকল প্রোটিন জৈবসংশ্লেষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়, বাকীগুলো সরাসরি রাইবোজোম অথবা স্প্লাইসোজোম এর উপাদান হিসেবে থাকে।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম
ডিএনএ নিউক্লিওটাইড অণুর সমন্বয়ে গড়া একটি লম্বা পলিমার।[১][২] ডিএনএ শৃংখল ২২ থেকে ২৪ Å চওড়া, এবং একটি নিউক্লিওটাইড অণু ৩.৩ Å দীর্ঘ।[৩] যদিও এসব অণু খুব ছোট, ডিএনএ পলিমার কয়েক মিলিয়ন নিউক্লিওটাইড নিয়ে অনেক বড় হতে পারে। উদাহরণস্বরুপ, সবচেয়ে বড় মানব ক্রোমোজোম, ক্রোমোজোম নং ১, ২২০ মিলিয়ন ক্ষার জোড়ার সমান দীর্ঘ।[৪]
জীবদেহে ডিএনএ একটি একক অনু হিসেবে থাকে না, বরং চাপাচাপি করে জোড়া-অণু হিসেবে থাকে। [৫][৬] এই লম্বা সূত্র দুইটি আঙ্গুরের মত প্যাচানো থাকে, যা দ্বৈত হেলিক্সের মত হয়। একটি ডিএনএ সূত্রে থাকে নিউক্লিওটাইড যা ডিএনএ মেরুদন্ডকে ধরে রাখে, এবং একটি ক্ষার যা অন্য ডিএনএ সূত্রের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। এই নিউক্লিওটাইড ও ক্ষারের পুনরাবৃত্তিতেই ডিএনএ সূত্র গঠিত। সাধারনভাবে একটি ক্ষার যদি একটি চিনি অণুর সাথে যুক্ত থাকে তাকে বলে নিউক্লিওসাইড এবং একটি ক্ষার যদি একটি চিনি ও এক বা একাধিক ফসফেট অণুর সাথে যুক্ত থাকে তাকে বলে নিউক্লিওটাইড। যদি একাধিক নিউক্লিওটাইড একসাথে যুক্ত থাকে, যেমন ডিএনএতে, তবে এই পলিমার কে বলে পলিনিউক্লিওটাইড।[৭]
ডিএনএ সূত্রের মেরুদন্ড ফসফেট ও চিনি অণুর পুনরাবৃত্তিতে গঠিত।[৮] ডিএনএর চিনি হচ্ছে পেন্টোজ (পাঁচ কার্বন বিশিষ্ট) ২-ডিঅক্সিরাইবোজ। এই চিনি ফসফেট গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে পাশাপাশি চিনির অণুর মধ্যে তৃতীয় ও পঞ্চম কার্বন পরমাণুর স্থানে ফসফোডিয়েসটার বন্ধন গঠন করে। এই অপ্রতিসম বন্ধন বোঝায় যে ডিএনএ অণুর মেরু বা দিক আছে। দ্বৈত হেলিক্সে এক সূত্রের নিউক্লিওটাইডের দিক অন্য সূত্রের ঠিক বিপরীত দিকে থাকে। ডিএনএ সূত্রের এই ধরনের বিন্যাসকে প্রতিসমান্তরাল। ডিএনএর অপ্রতিসম প্রান্তকে বলে ৫' (ফাইভ প্রাইম) এবং ৩' (থ্রি প্রাইম) প্রান্ত। ডিএনএ ও আরএনএর মধ্যকার একটি প্রধান পার্থক্য হলো চিনিতে, যেখানে ডিএনএতে ২-ডিঅক্সিরাইবোজ ব্যবহৃত হয় সেখানে আরএনএতে আরেকটি পেন্টোজ চিনি রাইবোজ ব্যবহৃত হয়।[৬]
ডিএনএর দ্বৈত হেলিক্স হাইড্রোজেন বন্ধনের মাধ্যমে স্থির থাকে, যা দুটি সূত্রের মধ্যে সংযুক্ত থাকে। ডিএনএতে যে চারটি ক্ষার পাওয়া যায় তা হল এডেনিন (সংক্ষেপে A), সাইটোসিন (C), গুয়ানিন (G) এবং থাইমিন (T)। নিম্নে এইচারটি ক্ষার দেখানো হয়েছে যারা চিনি/ফসফেটের সাথে যুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ নিউক্লিওটাইড গঠন করে, যেমনঃ এডিনোসিন মনোফসফেট।
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
এডেনিন | গুয়ানিন | থাইমিন | সাইটোসিন | এডিনোসিন মনোফসফেট |
এই ক্ষারগুলো দুই ভাগে ভাগ করা যায়; এডেনিন ও গুয়ানিন হল পিউরিন নামক ৫- ও ৬- কার্বনচক্রের হেটারোসাইক্লিক যৌগ এবং সাইটোসিন ও থাইমিন হল পাইরিমিডিন নামক কার্বনচক্রের যৌগ।[৭] ইউরাসিল (U) নামে পঞ্চম আরেকটি পাইরিমিডিন ক্ষার আছে যা সাধারনত আরএনএতে থাইমিনের বদলে থাকে। থাইমিনের সাথে এর পার্থক্য হচ্ছে কেবল একটি মিথাইল গ্রুপের অনুপস্থিতি। ডিএনএতে কেবল সাইটোসিনের ভাঙ্গনের ফলে উপজাত হিসেবে ইউরাসিল পাওয়া যেতে পারে, তবে ব্যতিক্রম হচ্ছে পিবিএস-১ নামের একটি ব্যাকটেরিয়াল ভাইরাস যার ডিএনএতে ইউরাসিল রয়েছে।[৯] কিন্তু আরএনএ সংশ্লেষনের সময় উল্লেখযোগ্য পরিমান ইউরাসিল এনজাইমের প্রভাবে একটি মিথাইল গ্রুপ যুক্ত হয়ে থাইমিনে পরিনত হয়। মূলত গাঠনিক ও এনজাইম আরএনএ যেমনঃ ট্রান্সফার আরএনএ ও রাইবোজোমাল আরএনএতেই এই ঘটনা ঘটে।[১০]
ডিএনএর দ্বৈত হেলিক্স ডান-হাতি সর্পিলাকার হয়ে থাকে। ডিএনএ সূত্রগুলো যখন প্যাঁচানো থাকে তখন তাদের ফসফেটের মেরুদন্ডের মাঝে জায়গা রাখা থাকে। এই জায়গাতে ক্ষারগুলো যুক্ত হয় (এনিমেশন দেখুন)। দ্বৈত হেলিক্সের তলে দুই জায়গায় এরকম প্যাচানো খাত (groove) থাকেঃ একটি খাত ২২ Å প্রশস্ত ও অন্যটি ১২ Å প্রশস্ত।[১২] বৃহত্তর খাতটিকে বলে মেজর গ্রুভ ছোটটিকে বলে মাইনর গ্রুভ। মাইনর গ্রুভের সরুতার অর্থ হলো ক্ষারের প্রান্তগুলো মেজর গ্রুভে তুলনামুলক বেশি সহজে প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে কিছু প্রোটিন যা ডিএনএতে কিছু নির্দিষ্ট ক্রমে যুক্ত হতে পারে, তারা ডিএনএতে সেই ক্রম খুজে নেয় মেজর গ্রুভের সাথে থাকা ক্ষারের সংস্পর্শে এসে। [১৩]
![]() |
![]() |
[সম্পাদনা] ক্ষার-জোড়া
[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র
- ↑ Alberts, Bruce; Alexander Johnson, Julian Lewis, Martin Raff, Keith Roberts, and Peter Walters (2002). Molecular Biology of the Cell; Fourth Edition. New York and London: Garland Science. ISBN 0-8153-3218-1.
- ↑ Butler, John M. (2001) Forensic DNA Typing "Elsevier". pp. 14 – 15. ISBN 978-0-12-147951-0.
- ↑ Mandelkern M, Elias J, Eden D, Crothers D (1981). "The dimensions of DNA in solution". J Mol Biol 152 (1): 153 – 61. PMID 7338906.
- ↑ Gregory S, et al. (2006). "The DNA sequence and biological annotation of human chromosome 1". Nature 441 (7091): 315 – 21. PMID 16710414.
- ↑ Watson J, Crick F (1953). "Molecular structure of nucleic acids; a structure for deoxyribose nucleic acid". Nature 171 (4356): 737 – 8. PMID 13054692.
- ↑ ৬.০ ৬.১ Berg J., Tymoczko J. and Stryer L. (2002) Biochemistry. W. H. Freeman and Company ISBN 0-7167-4955-6
- ↑ ৭.০ ৭.১ Abbreviations and Symbols for Nucleic Acids, Polynucleotides and their Constituents IUPAC-IUB Commission on Biochemical Nomenclature (CBN) Accessed 03 Jan 2006
- ↑ Ghosh A, Bansal M (2003). "A glossary of DNA structures from A to Z". Acta Crystallogr D Biol Crystallogr 59 (Pt 4): 620 – 6. PMID 12657780.
- ↑ Takahashi I, Marmur J. (1963). "Replacement of thymidylic acid by deoxyuridylic acid in the deoxyribonucleic acid of a transducing phage for Bacillus subtilis". Nature 197: 794 – 5. PMID 13980287.
- ↑ Agris P (2004). "Decoding the genome: a modified view". Nucleic Acids Res 32 (1): 223 – 38.
- ↑ Created from PDB 1D65
- ↑ Wing R, Drew H, Takano T, Broka C, Tanaka S, Itakura K, Dickerson R (1980). "Crystal structure analysis of a complete turn of B-DNA". Nature 287 (5784): 755 – 8. PMID 7432492.
- ↑ Pabo C, Sauer R. "Protein-DNA recognition". Annu Rev Biochem 53: 293 – 321. PMID 6236744.
[সম্পাদনা] বহিঃসূত্র
- [1] Crick's personal papers at Mandeville Special Collections Library, Geisel Library, University of California, San Diego
- DNA Interactive (requires Adobe Flash)
- DNA from the beginning
- Double Helix 1953 – 2003 National Centre for Biotechnology Education
- Double helix: 50 years of DNA, Nature
- Rosalind Franklin's contributions to the study of DNA
- U.S. National DNA Day — watch videos and participate in real-time chat with top scientists
- Genetic Education Modules for Teachers — DNA from the Beginning Study Guide
- Listen to Francis Crick and James Watson talking on the BBC in 1962, 1972, and 1974
- Template:PDB Molecule of the Month
- DNA under electron microscope
- DNA - উন্মুক্ত নির্দেশিকা প্রকল্প (সাইট প্রস্তাবকরণ)
- DNA Articles — articles and information collected from various sources
- DNA coiling to form chromosomes
- DISPLAR: DNA binding site prediction on protein
- Dolan DNA Learning Center
- Olby, R. (2003) "Quiet debut for the double helix" Nature 421 (January 23): 402 – 405.
- Basic animated guide to DNA cloning