মহাস্থবির শীলভদ্র
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মহাস্থবির শীলভদ্র (৫২৯-৬৫৪) বৌদ্ধশাস্ত্রের একজন শাস্ত্রজ্ঞ- দার্শনিক ছিলেন। তিনি নালন্দা মহাবিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] জীবনী
[সম্পাদনা] জন্ম ও প্রাথমিক জীবন
মহাস্থবির শীলভদ্র ৫২৯ সালে সমতট রাজ্যভুক্ত বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্গত কুমিল্লা জেলার চান্দিনাতে এক ব্রাহ্মন পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি অধ্যয়নপ্রিয় ছিলেন। জ্ঞান-অন্বেষণে ধর্মীয় গুরুর সন্ধানে তিনি তৎকালীন অবিভক্ত ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্য ও স্থান পরিভ্রমণ করেন। একসময় তিনি মগধের নালন্দা মহাবিহার বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন করেন। এখানে তিনি মহাবিহারের অধ্যক্ষ আচার্য ধর্মপালের অধীনে শিক্ষালাভ করেন। তাঁর কাছেই তিনি বৌদ্ধধর্মের সাথে পরিচিতি লাভ করেন। এভাবে তিনি বৌদ্ধধর্মের শাস্ত্রীয় বিষয়ে অনেক জ্ঞান লাভ করেন।
[সম্পাদনা] বিহার গঠন
সে সময়ে দক্ষিণ ভারতের একজন পন্ডিত ধর্মপালের পান্ডিত্য এবং জ্ঞান সাধনায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁকে ধর্মের বিষয়াদি নিয়ে তর্কযুদ্ধে আহবান জানান। স্থানীয় রাজার অনুরোধে গুরু ধর্মপাল এই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেন। কিন্তু শীলভদ্র তাঁর গুরুর পরিবর্তে নিজেই তর্কযুদ্ধে অংশগ্রহন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র তিরিশ বছর ছিল। তবুও তিনি তাঁর অগাধ জ্ঞান এবং প্রতিভা দিয়ে এই যুদ্ধে জয়ী হন। পুরস্কারস্বরুপ রাজা তাকে একটি শহর উপহার দেন। সেখানে শীলভদ্র একটি বিহার গড়ে তোলেন।
[সম্পাদনা] আচার্যের দায়িত্ব গ্রহন
ধর্মপালের মৃত্যুর পর মহাস্থবির শীলভদ্র নালন্দা মহাবিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য নিযুক্ত হন। তাঁর পান্ডিত্য এত অগাধ আর স্বীকৃত ছিল যে, নালন্দা মহাবিহারের অধিবাসীরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাস্বরুপ কখনো তাঁর নাম উচ্চারণ করতেন না। তাঁকে সবাই 'ধর্মনিধি' নামে ডাকতেন।
[সম্পাদনা] পরবর্তী জীবন ও মৃত্যু
শীলভদ্রের জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু ভারতীয় কোন গ্রন্থের মাধ্যমে পাওয়া যায়না। চীনা পর্যটক ও ধর্মশাস্ত্রবিদ হিউয়েন সাঙের বিবরণ থেকেই তাঁর জীবন সম্পর্কে সর্বাধিক তথ্য পাওয়া যায়। হিউয়েন সাঙের মতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যেসব অধ্যাপক মহাবিহারে অধ্যাপনা করতে এসেছিলেন তাঁদের মধ্যে শীলভদ্রই শ্রেষ্ঠ ছিলেন। প্রাপ্ত তথ্যমতে, একদিন শীলভদ্র স্বপ্নে দেখেন মহাবিহারে হিউয়েন সাঙ এসেছেন। তাই হিউয়েন সাঙ সেখানে এলে শীল্ভদ্র তাঁকে সাদরে অর্ভথ্যনা জানান।[১] এখানে হিউয়েনা সাঙ ২২ বছর ধরে শীলভদ্রের কাছে যাবতীয় শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি 'সিদ্ধি' নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন।
শীলভদ্র খুবই বিনয়ী, সজ্জন, প্রজ্ঞাবান, মহাজ্ঞানী এবং নির্লোভী ছিলেন। রাজপুত্র হয়েও অর্থ ও ক্ষমতার প্রতিপত্তি ত্যাগ করেছিলেন। মগধের রাজা তাঁকে নগর উপহার দিতে চাইলে তিনি বিনয়ের সাথে তা প্রত্যাখান করেন। জীবনের পরম অর্থ তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন। আজীবন অবিবাহিত থেকে তিনি শুধু জ্ঞানই আহরণ করে গেছেন এবং তা সমভাবে বিতরণ করেছেন। তিনি একজন শক্তিশালী শিক্ষা সংগঠক ছিলেন। তিনি 'শীলভদ্র সংঘারাম বিহার' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মহাস্থবির শীলভদ্র দীর্ঘজীবন লাভ করেছিলেন। তিনি ৬৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ১২৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
[সম্পাদনা] গ্রন্থাবলী
মহাস্থবির শীলভদ্র তাঁর জীবনে শত শত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। কিন্তু সেসবের কোন নিদর্শন পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর রচিত একটি গ্রন্থ পাওয়া গেছে। গ্রন্থটির নাম "আর্য-বুদ্ধভূমি ব্যাখ্যান"। এই গ্রন্থটি বৌদ্ধধর্ম ও দর্শনের উপর রচিত ছিল।
[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র
- ↑ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ শত বাঙালি মনীষীর কথা-ভবেশ রায়, পৃঃ ১৩