মিশেল ফুকো
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পশ্চিমা দর্শন বিংশ শতাব্দীর দর্শন |
|
---|---|
ডেভিড হরভিজের তোলা ফুকোর ছবি
|
|
নাম: | মিশেল ফুকো |
জন্ম: | অক্টোবর ১৫, ১৯২৬![]() |
মৃত্যু: | জুন ২৫, ১৯৮৪ (৫৭ বছর)![]() |
চিন্তাধারা: | মহাদেশীয় দর্শন, Post-structuralism, Structuralism |
প্রধান কৌতূহল: | আদর্শসমূহের ইতিহাস, Epistemology, নৈতিকতা, রাজনৈতিক দর্শন |
প্রদত্ত বিশেষ ধারণাসমূহ: | ক্ষমতা, প্রত্নতত্ত্ব, Genealogy, Episteme, Biopower Governmentality, Disciplinary institution |
প্রভাব: | ফ্রিডরিক নিটশে, Gilles Deleuze, Althusser, কান্ট, Canguilhem, হাইডেগার, Bataille, Blanchot, Gaston Bachelard, Jean Hyppolite, George Dumezil, কার্ল মার্ক্স, হেগেল |
যার দ্বারা প্রভাবিত: | Giorgio Agamben, জুডিথ বাটলার, হামিদ দাবাশি, আরনল্ড ডেভিডসন, Gilles Deleuze, Hubert Dreyfus, Didier Eribon, আয়ান হ্যাকিং, Guy Hocquenghem, Paul Rabinow, Jacques Ranciere, এডওয়ার্ড সাইদ |
মিশেল ফুকো (অক্টোবর ১৫, ১৯২৬ – জুন ২৫, ১৯৮৪) ছিলেন একজন ফরাসি দার্শনিক। তিনি একসময় কলেজ দে ফ্রান্সের নিয়মতান্ত্রিক ধারণার ইতিহাস বিভাগের প্রধান ছিলেন। বিভাগের নামকরণ তিনিই করেন। সমাজ ও মানবিক বিজ্ঞান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফলিত এবং পেশাদারি ক্ষেত্রে ফুকোর প্রভাব বিস্তৃত। ফুকো বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেমন শারিরিক ও মানসিক চিকিত্সা শাস্ত্র, কারাগার পদ্বতির পর্যালোচনার জন্য বিখ্যাত। যৌনতার ইতিহাসের উপরও তিনি বেশ কিছু প্রভাবশালি লেখা প্রকাশ করেন। তার জ্ঞান ও ক্ষমতার লেখার উপর ভিত্তি করে অনেক গবেষক ও চিন্তাবিদ বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন। পাশ্চাত্য ধারণার ইতিহাস এসব লেখার কেন্দ্রবিন্দু। এবং সর্বোপরি ফুকোর ডিসকোর্স (discourse - আলাপ, বক্তৃতা, কথোপকথন) সংক্রান্ত কাজের অবদান উল্লেখযোগ্য।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] জীবনী
[সম্পাদনা] প্রাথমিক জীবন
মিশেল ফুকো ১৯২৬ সালের অক্টোবর ১৫ তারিখে ফ্রান্সের Poitiers নামক স্থানের এক সম্ভ্রান্ত প্রাদেশিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের সময় তার নাম ছিল পল-মিশেল ফুকো। বাবার নাম পল ফুকো যিনি ফ্রান্সের বিশিষ্ট সার্জন ছিলেন। তার বাবার ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষে ফুকো বাবার পেশাকেই বেছে নেবেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা খুবই স্বাভাবিক গতিতে এগিয়েছে। খুব একটা ভাল বা খারাপ করেননি কখনও। কিন্তু জেসুইট কলেজ সেন্ট-স্টানিসলাসে ভর্তির পর তিনি পড়াশোনায় বিশেষ সাফল্য অর্জন করেন। সে সময় Poitiers অঞ্চলটি Vichy France-এর অন্তর্ভুকত ছিল। পরবর্তিতে তা জার্মানির অন্তর্ভুক্ত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ফুকো École Normale Supérieure-তে প্রবেশের সুযোগ পান। এই প্রতিষ্ঠানটি ছিল ফ্রান্সের মানবিক বিভাগের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মক্ষেত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
[সম্পাদনা] École Normale Supérieure
École Normale Supérieure-এ থাকার সময়টি ফুকোর জন্য ছিল বেশ কষ্টকর। কারণ এ সময়ে তিনি প্রচণ্ড হতাশা ও অবসাদগ্রস্ততায় ভুগছিলেন যা একসময় রোগের আকার ধারণ করে। এ জন্যে মনোচিকিৎসকের কাছেও গিয়েছিলেন। সম্ভবত তখন থেকেই তিনি মনোবিজ্ঞানে বিশেষ আগ্রহী হয়ে উঠেন। মনোচিকিৎসকের সেবা তার মনোবিজ্ঞানপ্রীতির একটি কারণ হিসেবে উল্লেখিত হয়ে আসছে। তিনি মূলত দর্শনের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও মনোবিজ্ঞানে একটি ডিগ্রী লাভে সমর্থ হন। তখনকার সময় ফ্রান্সে এ ধরণের ডিগ্রীর উদাহরণ ছিল বিরল। তিনি মনোবিজ্ঞানের ক্লিনিক্যাল আর্মের সাথে কাজ করতে থাকেন। এ সূত্রেই তার সাথে Ludwig Binswanger-এর মত বিখ্যাত চিন্তাবিদের পরিচয় হয়।
১৯৫০ সালে ফুকো ফরাসি সমাজতান্ত্রিক দলে যোগ দেন। তখনকার সময়ে অধিকাংশ নরমালিয়েনরাই (École Normale Supérieure-এর সদস্যদের এ নামে ডাকা হয়) এ দলে যোগ দিতেন। তাকে এই দলে যোগ দিতে উৎসাহিত করছিলেন তার অন্যতম শিক্ষক ও আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষক Louis Althusser। কিন্তু বেশিদিন রাজনীতি করার কোন আগ্রহ পাননি ফুকো। ১৯৫৩ সালেই দল থেকে সরে আসেন। এই সরে আসার পিছনে অন্যতম কারণ ছিল স্টালিনের অধীনে রাশিয়ায় সংঘটিত কিছু অপকর্ম যা ফুকোর মনে বিশেষ রেখাপাত করে। ঐতিহাসিক Emmanuel Le Roy Ladurie এবং আরও অনেকেই বলেছেন ফুকো কখনই তার অন্যান্য সহকর্মীদের মত সক্রিয়ভাবে দলের কাজ করেননি।
[সম্পাদনা] কর্মজীবনের প্রথমভাগ
ফুকো ১৯৫০ সালে তার agrégation সম্পন্ন করেন। École Normale-তে কিছু সময়ের জন্য কাজ করার পর তিনি লিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পদ পেয়ে যান। এখানে ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত দর্শনের প্রখাষকের পদে চাকরি করেন। ১৯৫৪ সালে তার প্রথম বই প্রকাশিত হয় যার নাম ছিল Maladie mentale et personnalité। পরবর্তিতে তিনি এই বইটি লিখেননি বলে দাবী করেছিলেন। ফুকো তখন বেশ বুঝতে পারছিলেন যে, শিক্ষকতা তার দ্বারা হবেনা। এই চিন্ত থেকেই ফ্রান্স থেকে দীর্ঘকালের জন্য স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান। ১৯৫৪ সালে তিনি সুইডেনের উপশালা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রান্সের একজন সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার জন্য এই কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তার অন্যতম বন্ধু ও আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষক Georges Dumézil। ১৯৫৮ সালে উপশালা ছেড়ে কিছু সময়ের জন্য তিনি পোল্যান্ডের ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয় ও জার্মানির হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন।
১৯৬০ সালে তিনি আবার ফ্রান্সে ফিরে আসেন। উদ্দেশ্য ছিল ডক্টরেট সম্পন্ন করা। এখানকার Clermont-Ferrand-এর বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের একটি পদে চাকরি নেন। এই শিক্ষায়তনেই তার সাথে Daniel Defert-এর পরিচয় হয় যার সাথে তিনি জীবনের বাকি সময়টা কাটিয়েছেন। তাদের পারিবারিক সম্পর্কটি ছিল non-monogamous। ফ্রান্সের প্রথামত তিনি দর্শনের উপর দুইটি পৃথক অভিসন্দর্ভ জমা দিয়ে ১৯৬১ সালে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। তার প্রধান অভিসন্দর্ভের নাম Folie et déraison: Histoire de la folie à l'âge classique এবং অন্য অভিসন্দর্ভটির নাম ছিল "অ্যানথ্রোপলজি ফ্রম অ্যা প্র্যাগমেটিক পয়েন্ট অফ ভিউ"। শেষোক্ত অভিসন্দর্ভটি ছিল মূলত দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের রচনাসমূহের উপর একটি বিশ্লেষণী ভাষ্য ও কিছু অনুবাদ। Folie et déraison নামক মূল অভিসন্দর্ভটি সুশীল সমাজে বিশেষ গুরুত্বের সাথে গৃহীত হয়। এটি "ম্যাডনেস অ্যান্ড সিভিলাইজেশন" নামে ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছিল। এর পর ফুকোর প্রকাশনা সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয় Naissance de la Clinique (ক্লিনিকে জন্ম) এবং Raymond Roussel নামক দুইটি রচনা। একই সাথে ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত তার বই Maladie mentale et psychologie-এর আরেকটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য এবারও তিনি এই বই রচনার দায় অস্বীকার করেন।
ফুকোর সহধর্মিনী Defert তার সামরিক কাজের সুবাদে তিউনিসিয়ায় বদলি হয়ে যাওয়ায় ফুকোও সেখানে চলে যান। ১৯৬৫ সালে তিউনিস বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালে প্রকাশ করেন Les Mots et les choses (বস্তুসমূহের ক্রম) নামক একটি সুদীর্ঘ ও জটিল গ্রন্থ। জটিল ও দীর্ঘ হওয়া সত্ত্বেও পুস্তকটি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এই বই যখন প্রকাশিত হয় তখন পশ্চিমা দর্শনের জগতে structuralism বিষয়ক গবেষণা ও চিন্তাধারা জোয়ার বইছিল। ফুকোও এ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেন। জ্যাঁ-পল সার্ত্র কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অস্তিত্ববাদকে অস্বীকার করেই এই দার্শনিক জোয়ারের সৃষ্টি হয়েছিল। নবীন এই দার্শনিক চান্তার অনুসারী ছিলেন Jacques Lacan, Claude Lévi-Strauss এবং Roland Barthes-এর মত দার্শনিকেরা। ফুকো এদের সাথে জোট গড়ে তুলেন। ফুকো মার্ক্সবাদ সম্বন্ধে বেশ কিছু সংশয়বাদী মন্তব্য করেছিলেন যা বামপন্থী চিন্তাবিদদের দ্বারা সমালোচিত হয়। কিন্তু তিনি অচিরেই এ ধরণের সংশয়বাদী সমালোচনা পরিত্যাগ করে বিশুদ্ধ structuralist হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৮ সালের মে মাসে তিউনিসিয়ায় যখন ছাত্র আন্দোলনের সূত্রপাত হয় তখনও তিনি তিউনিসে ছিলেন। এই বছরেরই প্রথম দিকে তিনি তিউনিসের স্থানীয় এক বিদ্রোহী ছাত্রের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। একই বছরের বসন্তে তিনি ফ্রান্সে ফিরে যান। ফেরার পরপরই ১৯৬৯ প্রকাশ করেন L'archéologie du savoir (জ্ঞানের প্রত্নতত্ত্ব) নামক রচনাটি। এই রচনাটি ছিল তার সমালোচনার জবাব।
[সম্পাদনা] রচনাসমূহ
বছর | মূল ফরাসি | ইংরেজি ভাষা |
---|---|---|
১৯৫৪ | Maladie mentale et personnalité (Paris: PUF, 1954) re-edited as Maladie mentale et psychologie (1995) | Mental Illness and Psychology trans. by A. M. Sheridan-Smith, (New York: Harper and Row, 1976) |
১৯৬১ | Histoire de la folie à l'âge classique - Folie et déraison (Paris: Plon, 1961) | Madness and Civilization: A History of Insanity in the Age of Reason trans. by R. Howard, (London: Tavistock, 1965) - abridged; History of Madness ed. Jean Khalfa, trans. Jonathan Murphy and Jean Khalfa, (London: Routledge, 2006) - unabridged |
১৯৬৩ | Naissance de la clinique - une archéologie du regard médical (Paris: PUF, 1963) | The Birth of the Clinic: An Archaeology of Medical Perception |
১৯৬৩ | Raymond Roussel (Paris: Gallimard, 1963) | Death and the Labyrinth: the World of Raymond Roussel |
১৯৬৬ | Les mots et les choses - une archéologie des sciences humaines (Paris: Gallimard, 1966) | The Order of Things: An Archaeology of the Human Sciences |
১৯৬৯ | L'archéologie du savoir (Paris: Gallimard, 1969) | Archaeology of Knowledge) (first three chapters available here) |
১৯৭১ | L'ordre du discours (Paris: Gallimard, 1971) | 'The Discourse on Language'; translation appears as an appendix to the Archaeology of Knowledge |
১৯৭৫ | Surveiller et punir (Paris: Gallimard, 1975) | Discipline and Punish: The Birth of the Prison |
১৯৭৬-৮৪ | Histoire de la sexualité
|
The History of Sexuality
|