মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ(জুলাই ১০, ১৮৮৫ - জুলাই ১৩, ১৯৬৯) বহুভাষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] জন্ম
পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে ১০ জুলাই ১৮৮৫ সালে ডক্টর মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন।
[সম্পাদনা] শিক্ষা
১৯০৪ সালে হাওড়া জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, ১৯০৬ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ পাশ করেন। ১৯১২-তে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন। ১৯১৪ তে বিএল পাশ করেন। পড়াশোনা শেষ করার আগেই কিছুকাল যশোর জেলা স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
[সম্পাদনা] কর্মজীবন
এন্ট্রান্স পাশের সময় থেকেই মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বিভিন্ন ভাষার প্রতি আগ্রহি হয়ে উঠেন ও একাধিক ভাষা শিক্ষা শুরু করেন। ১৯১৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত চব্বিশ পরগনার বশিরহাটে আইন ব্যবসা করেন। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের সহকর্মী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পাশাপাশি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২২ থেকে ১৯২৪ সালে পর্যন্ত আইন বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। ফ্রান্সের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও রিডার হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখান থেকে ১৯৪৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর তিনি বগুড়া আযিযুল হক কলেজে প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৩-১৯৫৫ সালে তিনি পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ফরাসি ভাষার খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও পালি বিভাগে যোগদান করে ১৯৫৮-তে অবসর গ্রহণ করেন।
বিভিন্ন ভাষায় ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহের দখল ছিল অসাধারণ। উর্দুভাষার অভিধান প্রকল্পেও তিনি সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। পরে পূর্ব পাকিস্তানি ভাষার আদর্শ অভিধান প্রকল্পের সম্পাদক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে যোগ দেন। ১৯৬১-১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির ইসলামি বিশ্বকোষ প্রকল্পের অস্থায়ী সম্পাদক হন। ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক গঠিত বাংলা একাডেমির পঞ্জিকার তারিখ বিন্যাস কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন। তার নেতৃত্বে বাংলা পঞ্জিকা একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত রূপ পায়।
[সম্পাদনা] সাহিত্য
ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সবসময়ই সাহিত্য কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। এমএ পাশ করার পরই তিনি বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির সম্পাদক হন। ১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন। তিনি উর্দু অভিধান প্রকল্পেরও সম্পাদক ছিলেন। ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ অনেক বই লিখেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল --
- ভাষা ও সাহিত্য
- বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত
- দীওয়ানে হাফিজ
- রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম
- বিদ্যাপতি শতক।
- বাংলা সাহিত্যের কথা(২ খন্ড)
- বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
- বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান
[সম্পাদনা] ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা
বহু ভাষাবিদ পন্ডিত ও প্রাচ্যে অন্যতম সেরা ভাষাবিজ্ঞানী ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি, ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান। জাতিসত্তা সম্পর্কে মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর স্মরণীয় উক্তি ছিল " আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙ্গালি। পাকিস্তান প্রতিষ্টার পরই দেশের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার পক্ষে যে কজন মানুষ জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তাদের মধ্যে ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ অন্যতম। তার এই ভূমিকার ফলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ অনেক প্রশস্ত হয়।
[সম্পাদনা] পুরস্কার
ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমেরিটাস অধ্যাপক পদ লাভ করেন। একই বছর ফ্রান্স সরকার তাকে সম্মানজনক পদক নাইট অফ দি অর্ডারস অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার্স দেয়।
[সম্পাদনা] মৃত্যু
১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই ডক্টর মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পাশে সমাহিত করা হয়। ঐ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নামকরন করা হয় শহীদুল্লাহ হল।