মেঘে ঢাকা তারা
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মেঘে ঢাকা তারা (ইংরেজি শিরোনাম: The Cloud-capped Star) ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনায় চতুর্থ চলচ্চিত্র। সাদাকালোয় নির্মিত, ১৩৪ মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬০ সালে। ছবিতে অভিনয় করেন সুপ্রিয়া চৌধুরি (নীতা চরিত্রে), অনিল চট্টোপাধ্যায় (শংকর চরিত্রে), নিরঞ্জন রায় (সনৎ চরিত্রে), গীতা ঘটক (গীতা চরিত্রে), বিজন ভট্টাচার্য (বাবা চরিত্রে), গীতা দে (মা চরিত্রে), দ্বিজু ভাওয়াল (মন্টু চরিত্রে) প্রমুখ।
১৯৭৫ সালের বার্ষিক চিত্রবীক্ষণ পত্রিকায় ঋত্বিক ঘটক জানান, তাঁর মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০), কোমল গান্ধার (১৯৬১) ও সুবর্ণরেখা (১৯৬২) - এ তিন সিনেমা মিলে ট্রিলজি হয়েছে। [1]
ভারতে অঁতর ধারার নিরীক্ষাধর্মী চলচ্চিত্রে ঋত্বিক ঘটকের কাজ উল্লেখযোগ্য। সম্ভবত ঋত্বিক ঘটকের আটটি চলচ্চিত্রের মধ্যে মেঘে ঢাকা তারা সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও আলোচিত। তার এ সিনেমা ভারতে বাণিজ্যিক সাফল্যের মুখ দেখে। ঋত্বিক মারা যাবার পর, এ ছবিসহ তার অন্যান্য কাজ বিশ্বের চলচ্চিত্র দর্শকদের কাছে বেশি পরিচিতি পায়।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] কাহিনী
মেঘে ঢাকা তারা মেলোড্রামা ধাঁচের। কাহিনীর গাঁথুনি রৈখিক। পঞ্চাশ দশকে কলকাতার এক বাঙালি পরিবার ঘিরে কাহিনীর আবর্তন। ১৯৪৭-এর ভারত ভাগের পর এ শরণার্থী পরিবার আশ্রয় নেয় কলকাতা শহরের প্রান্তে। ছবির মূল চরিত্র নীতা, পরিবারের বড় মেয়ে। পড়াশোনার পাঠ চুকানোর আগেই পরিবারের হাল ধরতে হয় তাকে। নীতার বৃদ্ধ বাবা স্কুলে পড়ায়; মা ঘরবাড়ি দেখাশোনা করে। নীতার দুই স্কুলপড়ুয়া ভাই-বোন, গীতা আর মন্টু। নীতার বড় ভাই শংকর; সংসারে মন নেই। শংকরের ধ্যান সুর নিয়ে, শাস্ত্রীয় সংগীত চর্চা করে; বড় মাপের সংগীত শিল্পী হতে চায় সে। আশা ছাড়ে না নীতা; স্বপ্ন দ্যাখে ভাই শংকরকে নিয়ে, প্রেমিক সনৎকে নিয়ে। পিইচডি শেষে ফিরে আসবে সনৎ তার কাছে; বিয়ে করবে তারা।
কাহিনী মোড় নিতে থাকে। নীতার বাবা আর মন্টু দুর্ঘটনায় পড়ে। শংকর চলে যায় বোম্বেতে, গায়ক হবার জন্য। সনৎ ফিরে আসে ঠিকই, নীতাকে বিয়ে করে না, করে গীতাকে। নীতা অসুস্থ হয়ে পড়ে, যক্ষা হয়, শরীর ভেঙে পড়ে, তবু হাল ছাড়ে না পরিবারের।
শংকর ফিরে আসে বোম্বে থেকে, পুরোদস্তুর ক্ল্যাসিকাল গায়ক হয়ে। নীতার চূড়ান্ত অসুস্থতা তার চোখ এড়ায় না। পাহাড়ের ওপর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় নীতাকে। জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে এসে, শংকরকে জানায়, সে বাঁচতে চায়। আকাশে, পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনি হয় নীতার আকুতি।
[সম্পাদনা] তথ্যকণিকা
- নেদারল্যান্ড আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৯১), সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৯৭), চেক প্রজাতন্ত্রের ফেবিও চলচ্চিত্র উৎসবসহ (২০০৫) নানা আন্তর্জাতিক উৎসবে দেখানো হয়েছে এ সিনেমা।
- দক্ষিণ ভারতীয় হংসধ্বনি রাগ, এবং এ রাগভিত্তিক খেয়াল ব্যবহৃত হয়েছে সিনেমার আবহ সংগীতে।
- রবীন্দ্রনাথের যে রাতে মোর দুয়ারগুলি গান ব্যবহৃত হয় ছবিতে।
- ভারতের একটি নিউজ গ্রুপের পরিচালিত সাম্প্রতিক জরিপে প্রকাশ : এ চলচ্চিত্রের শেষ সংলাপ দাদা, আমি বাঁচতে চাই বাংলা চলচ্চিত্রে বহুল পরিচিত লাইন।
[সম্পাদনা] কুশলী
- মূল কাহিনী : শক্তিপদ রাজগুরু
- চিত্রনাট্য : ঋত্বিক কুমার ঘটক
- সিনেমাটোগ্রাফি : দিনেন গুপ্ত
- সম্পাদনা : রামেশ জোশি
- শব্দ : সত্যেন চট্টোপাধ্যায়
- শিল্প নির্দেশনা : রবি চট্টোপাধ্যায়
- সংগীত : জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র
- প্রযোজনা : চিত্রকল্প