সোনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

৭৯ প্লাটিনামসোনাপারদ
Ag

Au

Rg
সাধারণ
নাম, প্রতীক, সংখ্যা সোনা, Au, ৭৯
রাসায়নিক শ্রেণী অবস্থান্তর ধাতু
শ্রেণী, পর্যায়, ব্লক ১১, ৬, ডি
স্বভাবজাত প্রকৃতি ধাতব হলুদ
প্রমিত পারমানবিক ভর ১৯৬.৬৯৯৫৬৯(৪) g·mol−1
ইলেকট্রন বিন্যাস [Xe] 4f14 5d10 6s1
শক্তিস্তর প্রতি ইলেকট্রন সংখ্যা ২, ৮, ১৮, ৩২, ১৮, ১
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ
দশা কঠিন
ঘনত্ব (কক্ষ তাপমাত্রা কাছাকাছি) ১৯.৩ গ্রাম·সেমি−৩
গলনাংকে তরল ঘনত্ব ১৭.৩১ গ্রাম·সেমি−3
গলনাংক ১৩৩৭.৩৩ K
(১০৬৪.১৮ °C, ১৯৪৭.৫২ °F)
স্ফুটনাংক ৩১২৯ K
(২৮৫৬ °C, ৫১৭৩ °F)
ফিউশনের এনথালপি ১২.৫৫ Kj.mol−1
তাপধারণ ক্ষমতা (২৫ °C) ২৫.৪১৮ J·mol−1·K−1
বাষ্প চাপ
P(প্যাসকেল) ১০ ১০০ ১ k ১০ k ১০০ k
T(K) ১৬৪৬ ১৮১৪ ২০২১ ২২৮১ ২৬২০ ৩০৭৮
পারমানবিক বৈশিষ্ট্য
কেলাস গঠন ঘনকীয় ফেস সেন্ট্রেড
জারণ অবস্থা −১, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭
(অ্যমফোটেরিক অক্সাইড)
তড়িৎঋণাত্বকতা ২.৫৪ (পাউলিং স্কেল)
পারমানবিক ব্যাসার্ধ্য ১৩৫ pm
পারমানবিক ব্যাসার্ধ্য (calc.) ১৭৪ pm
সমযোজী ব্যাসার্ধ্য ১৪৪ pm
ভ্যান ডার ওয়াল্‌স ব্যাসার্ধ্য ১৬৬ pm
বিশেষ দ্রষ্টব্য
চৌম্বক ক্রম উপাত্ত নেই
তড়িৎ রোধকত্ব (20 °C) (অ্যামোরফাস)
২২.১৪Ω·m
তাপীয় পরিবাহকত্ব (৩০০ K) (অ্যামোরফাস)
৩১৮ W·m−1·K−1
তাপীয় প্রসারণ ১৪.২ µm/(m·K)
শব্দের দ্রুতি (thin rod) (r.t.) ২০৩০ m·s−1
ইয়ংয়ের গুণাংক ৭৮ GPa
শিয়ার গুণাংক ২৭ GPa
বাল্ক গুণাংক ২২০ GPa
পয়সন অনুপাত ০.৪৪
মোহ্‌স কাঠিন্য ২.৫
ভিকার্‌স কাঠিন্য ২১৬ MPa
ব্রিনেল কাঠিন্য ? ২৪৫০ MPa
সিএএস নিবন্ধন সংখ্যা ৭৪৪০-৫৭-৫
নির্বাচিত সমাণুকসমূহ
মূল নিবন্ধ: সোনা-এর সমাণুকসমূহ
সমাণু এনএ অর্ধায়ু ডিএম ডিই (MeV) ডিপি
১৯৫Au এসওয়াইএন ১৮৬.১০ দিন ε ০.২২৭ ১৯৫Pt
১৯৬Au এসওয়াইএন ৬.১৮৩ দিন ε ১.৫০৬ ১৯৬Pt
β- ০.৬৮৬ ১৯৬Hg
১৯৭Au ১০০% Au ১১৮টি নিউট্রন নিয়ে স্থিত হয়
১৯৮Au এসওয়াইএন ২.৬৯৫১৭ দিন β- ১.৩৭২ ১৯৮Hg
১৯৯Au এসওয়াইএন ৩.১৬৯ দিন β- ০.৪৫৩ ১৯৯Hg
তথ্যসূত্র
This box: প্রদর্শন  আলোচনা  সম্পাদনা

সোনা একটি ধাতব হলুদ বর্ণের ধাতু। বহু প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এই ধাতুর সাথে পরিচিত ছিল। অপরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য, চকচকে বর্ণ, বর্ণ এবং কাঠামোর স্থায়ীত্বের কারণে এটি মূল্যবান ধাতু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। সোনা দিয়ে বিভিন্ন অলঙ্কার তৈরীর প্রথা এখনও সমানভাবে বিরাজমান রয়েছে।

সূচিপত্র

[সম্পাদনা] নামকরণ

সোনার রাসায়নিক নাম নাম Aurum যা লাতিন শব্দ Aurora থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।

[সম্পাদনা] আবিষ্কারের ইতিহাস

ধারণা করা হয় সোনা মানুষের আবিষ্কৃত প্রাচীনতম মৌল। এমনকি নব প্রস্তর যুগেও সোনার তৈরী দ্রব্যাদি ব্যবহৃত হতো। সে যুগের খননকৃত অনেক নিদর্শনে পাথরের জিনিসের সাথে এগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। রাশিয়ার বিখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদ কার্ল মার্ক্সও সোনাকে মানুষের আবিষ্কৃত প্রথম ধাতু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অপরিবর্তনীয় রুপ, সহজ বন্টনযোগ্যতা এবং চকচকে প্রকৃতির জন্য এটি অনেক আগে থেকেই অর্থের মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সোনার সাথে পৃথিবীর অনেক বেদনা বিধুর ও ভয়ংকর কাহিনী জড়িত। সোনা অধিকারের লক্ষ্যে জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ হয়েছে, প্রাণ হারিয়েছে অগুণিত মানুষ। আবার সোনার মালিক হয়েও কেউ শান্তি পায়নি। কারণ পাওয়ার পরই এসে যেতো হারানোর ভয়। যখন থেকে মানুষ সমাজবদ্ধ হতে শিখেছে এবং ধীরে ধীরে সামাজিক শ্রেণীবিভাগের সূচনা হয়েছে তখন থেকেই মানুষ সোনা উত্তোলন করতে শুরু করে। তখন থেকেই অলঙ্কার তৈরীতে সোনা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তখন সোনা বিশুদ্ধিকরণের পদ্ধতিগুলো জানা ছিলনা। এ কারণে তখন মূলত সোনা-রুপার সঙ্কর ধাতু তৈরী করা হতো যা অ্যাজেম নামে পরিচিত ছিল। এছাড়া সোনা-রুপার আরেকটি প্রাকৃতিক সঙ্কর ধাতু বিদ্যমান ছিল যার নাম ইলেকট্রুম।

প্রাচীন সব জাতিতেই স্বর্ণের ব্যবহার ছিল। মিশরীয় সম্রাটদের দ্বারা নির্মীত পিরামিডগুলো খনন করে প্রচুর সোনার অলঙ্কার ও জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অনেক কাল ধরেই মিশরীয়রা সোনা নিয়ে গবেষণা করেছে। চতুর্থ থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত কিমিয়াবিদরা সোনা অনুসন্ধানের আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল পরশ পাথর অনুসন্ধান, তাদের বিশ্বাসমতে যার মাধ্যমে ক্ষার ধাতুকে সোনায় রুপান্তরিত করা সম্ভব। কিমিয়াবিদদের এই ধারণার পিছনে কারণও ছিল। তামার খনিতে অনেকদিন লোহা পড়ে থাকলে তার উপর তামার আস্তরণ পড়তো। কিমিয়াবিদরা মনে করেছিল লোহা তামায় রুপান্তরিত হয়েছে। এ থেকে তারা এ ধারণাও করেছিল যে অন্য ধাতুকেও এভাবে সোনায় পরিণত করা সম্ভব। তারা এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তবে এই কাজে সর্বোচ্চ উন্নতি করতে পেরেছিল মিশরীয়রা। তারা সোনা নিষ্কাষণের গুপ্তবিদ্যা জানতো। মিশরীয় ঐতিহ্যের সাথে সোনার সম্পর্ক সুগভীর।

এছাড়া চীন, ভারত এবং মেসোপটেমিয়ার অন্তর্গত রাজ্যগুলোতে খ্রিস্টপূর্ব দশম শতাব্দীও সোনা ব্যবহৃত হতো। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম-সপ্তম শতাব্দীতে গ্রীসে সোনার টাকা প্রচলিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে আর্মেনিয়ায় সোনার টাকা ব্যবহৃত হতো। ভারত এবং নুরিয়া অঞ্চলে (উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা) প্রাচীনতম সোনার খনির সন্ধান পাওয়া গেছে। কিমিয়াবিদরা ধাতু নিয়ে গবেষণায় বিশেষ প্রসার অর্জন করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবে প্রাপ্ত লেড সালফাইডের সাথে রুপা মিশ্রিত অবস্থায় পাওয়া যায় যাকে কখনও কখনও নিষ্কাশন করা হয়। তারা বুঝতে পেরেছিলেন সীসার উপর রুপা সৃষ্টি হয়না। বরং অভিন্ন উপাদানগুলো বিভিন্ন অনুপাতে সংযুক্ত হয়ে সমস্ত বস্তু উৎপন্ন করে। এই ধারণা কিমিয়াবিদদের মধ্যে বিকাশ লাভ করে। কিমিয়াবিদদের অনেকেই অন্য ধাতু থেকে সোনা তৈরীর জন্য পরশ পাথরের সন্ধান করেছিল, অনেকে জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করেছিল। কিন্তু এর মধ্যে কোন সত্যতা ছিলনা। পরশ পাথর নামে কিছুর অস্তিত্ব বিজ্ঞান স্বীকার করেনি। যাহোক, কিমিয়াবিদ্যার প্রসার এতে থেমে থাকেনি।

দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা বিজয়ের জন্য স্পেনীয়রা অভিযান পরিচালনা করেছিল। সেখানে ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের পর ইনকাতে সোনার প্রাচুর্য দেখে কিমিয়াবিদরা অভিভূত হয়েছিল। ইনকাদের কাছে সোনা ছিল গুপ্ত ধাতু তথা সূর্য দেবতার ধাতু। তাদের মন্দিরগুলোতে বিপুল পরিমাণ সোনা রক্ষিত থাকতো। ইনকাবাসীদের মহান নেতা আটাহুয়ালপাকে যখন স্পেনীয়রা বন্দী করে তখন ইনকারা তার মুক্তিপণ হিসেবে ৬০ ঘনমিটার সোনা দেয়ার প্রতিশ্রুতি করেছিল যা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। এতেও স্পেনীয় সেনানায়ক ফ্রান্সিস্‌কো পিজারো তাকে মুক্তি দেয়নি, বরং পণের অপেক্ষ না করেই তাকে হত্য করে। ইনকারা যখন এই হত্যার সংবাদ জানতে পারে তখন সেই বিপুল পিমাণ সোনা বহন করে নিয়ে আসছিল ১১০০ লামা। তারা সোনাগুলো অ্যাজানগারের পর্বতে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু তারা তাদের সম্পদ বেশিদিন লুকিয়ে রাখতে পারেনি। পেরুর সবচেয়ে সমৃদ্ধ নগরী কুজকো দখল করে স্পেনীয়রা সেখানের অনেক কিছু লুট করে।

১৬০০ সালে রাশিয়ার খনি থেকে সোনা উত্তোলন শুরু হয়। তবে এর পরিমাণ খুব বেশি ছিলনা। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে সোনা উত্তোলনের পরিমাণ বেড়েছে।

[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র

  • রাসায়নিক মৌল: কেমন করে সেগুলি আবিষ্কৃত হয়েছিল: দ. ন. ত্রিফোনভ, ভ. দ. ত্রিফোনভ; বাংলা অনুবাদ: কানাই লাল মুখোপাধ্যায়; মির প্রকাশন, মস্কো এবং মনীষা গ্রন্থালয়, কলকাতা থেকে প্রকাশিত। সোভিয়েত ইউনিয়নে মুদ্রিত; ১৯৮৮

[সম্পাদনা] আরও দেখুন