মোহাম্মদ আবদুল জব্বার (জ্যোতির্বিজ্ঞানী)
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
-
জব্বার নামের অন্য ব্যাক্তিবর্গের জন্য, দেখুন জব্বার (দ্ব্যর্থতা নিরসন)।
মোহাম্মদ আবদুল জব্বার (১৯১৫ - জুলাই ২০, ১৯৯৩) বাংলাদেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার অগ্রদূত। তিনিই প্রথম বাংলায় আকাশের তারাসমূহের ছক তৈরী করেন। তার সার্বিক তত্বাবধানে ও পরিকল্পনায়ই বাংলাদেশের প্রথম খ-গোলক নির্মিত হয়। পেশাগত জীবনে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] জীবনী
মোহাম্মদ আবদুল জব্বার ১৯১৫ সালে পাবনা জেলার সুজানগর থানার গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অসাধারণ মেধাশক্তি ও ফলাফলের জন্য তিনি প্রাথমিক শিক্ষা থেকে একেবারে মাধ্যমিক পর্যন্ত বৃত্তি পান। ১৯৩৮ সসালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিশুদ্ধ গণিতে অনার্সসহ এম.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এ পরীক্ষায় তিনি প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেছিলেন। এরপর ১৯৩৯ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করতে লন্ডন যান। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তাকে ভারত সরকারের নির্দেশেই ফিরে আসতে হয়। দেশে ফিরে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে প্রভাষক হিসেবে চাকরি করেন। এরপর যোগ দেন চট্টগ্রাম কলেজে এবং সেখান থেকে প্রেসিডেন্সি কলেজে।
১৯৪৮ সালে গণিত বিভাগের প্রধান হিসেবে তৎকালীন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমান বুয়েট) যোগ দেন। এখানে প্রায় পনের বছর গণিত বিভাগের প্রধান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। শিক্ষকতার জীবনের শেষদিকে এসে তিনি প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের দায়িত্ব পান। ১৯৬২ সালে আহসানউল্লাহ ইঞ্জনিয়ারিং কলেজ পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হয়। মুহাম্মদ আবদুল জব্বার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৬৮ সালে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক পদে নিযুক্ত হন এবং এই পদ থেকেই ১৯৮০ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮৪ সালে আবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুপান্তরিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক এম. এ. রশীদের নামে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় ডঃ রশীদ ফাউন্ডেশন। প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরুপ আবদুল জব্বারকেই সর্বপ্রথম 'ডঃ রশীদ অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল জব্বার পার্কিনসন্স রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৩ সালের ২০ জুলাই তারিখে মৃত্যুবরণ করেন।
[সম্পাদনা] জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা
বাংলাদেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ এবং উপকরণ তিনিউ প্রথম সৃষ্টি করেন। ১৯৬২ - ৮২ সাল পর্যন্ত তার অঙ্কিত তারা চিত্র রাতের আকাশ নামে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হত। তার সার্বিক তত্ত্বাবধান এবং পরিকল্পনায় বাংলাদেশের প্রথম খ-গোলক (celestial globe) নির্মিত হয়। এই খ-গোলকটি বর্তমানে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশনে সংরক্ষিত আছে।
[সম্পাদনা] পুরষ্কার ও সম্মাননা
- বাংলা একাডেমীর ফেলো নির্বাচিত হন ১৯৮৪ সালে।
- ডঃ কুদরত-ই-খুদা স্মৃতি পদক (১৯৮৫)
- বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩)
- একুশে পদক (১৯৮৫)
- কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, অনুসন্ধিৎসু চক্র ও বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন যৌথভাবে তাকে ১৯৯০ সালে ব্রুনো পদকে ভূষিত করে।
[সম্পাদনা] রচনাবলী
- বিশ্ব রহস্যে নিউটন ও আইনস্টাইন (১৯৪২)
- খ-গোলক পরিচয় (১৯৬৫)
- তারা পরিচিতি (১৯৬৭)
- প্রাচীন জ্যোতির্বিদ্যা (১৯৭৩)
- বিশ্ব ও সৌরজগৎ (১৯৮৬)
- আকাশ পট (১৯৮৯)
- টেক্সট বুক অব ইন্টারমিডিয়েট স্টাটিসটিক্স
- টেক্সট বুক অব ইন্টারমিডিয়েট ডাইনামিক্স
- টেক্সট বুক অব ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস
- টেক্সট বুক অব ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাস