বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমী
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমী (BMA) বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অফিসার-ক্যাডেটদের একটি প্রশিক্ষন কেন্দ্র। এটি চট্টগ্রাম শহরের নিকটবর্তী ভাটিয়ারি নামক স্থানে, যা দক্ষিন-পূর্ব বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা] ইতিহাস
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো সব পশ্চিম পাকিস্তানেই অবস্থিত ছিলো। স্বাধীনতা অর্জনের পরে ১৯৭৪ সালের ১১ই জানুয়ারি প্রথমে কুমিল্লায় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা হয়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর কবিতার একটি পংক্তি "চির উন্নত মম শির" -কে বিএমএ'র মূল মন্ত্র হিসাবে গ্রহণ করা হয়। ভাটিয়ারিতে বর্তমান স্থানে একাডেমীটি সরিয়ে আনা হয় ১৯৭৬ সালে। নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সূচনা হয় ১৯৭৮ সাল থেকে। বিএমএ'র প্রথম অফিসার ব্যাচ পাস করে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করে ১৯৭৯ সালে। ১৯৮৩ সাল থেকে এটি বাংলাদেশ নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
[সম্পাদনা] প্রশিক্ষণ
বিএমএ তে বর্তমানে ২ বছরের লং কোর্সে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। বিএমএ ত্রিমাত্রিক প্রশিক্ষন পদ্ধতি অবলম্বন করে, যার মধ্যে সামরিক প্রশিক্ষন, শিক্ষায়তনিক উৎকর্ষতা এবং চরিত্র গঠন অর্ন্তভূক্ত। এ্যাকাডেমী প্রধানত বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে কমিশন প্রাপ্তির লক্ষে জেন্টালমেন ও জেন্টালওমেন ক্যাডেটদের প্রশিক্ষন দিয়ে থাকে। অধিকন্তু, এই এ্যাকাডেমী বাংলাদেশ জনপ্রশাসন (BCS) কর্মকর্তাগণের জন্য পরিচিতি কোর্স এবং বাংলাদেশ জাতীয় ক্যাডেট কোরের (BNCC) অধ্যাপক/শিক্ষক কর্মকর্তাগণের জন্য প্রাক-কমিশন প্রশিক্ষন প্রদান করে থাকে। লং কোর্সের (সেনা) ক্যাডেটগণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমানুসারে এই এ্যাকাডেমী হতে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।
[সম্পাদনা] প্রশিক্ষণ সূচি
বিএমএ-তে নিম্নলিখিত প্রশিক্ষন সূচি অনুশরণ করা হয়:
ক. লং (দীর্ঘ মেয়াদী) কোর্স- ১০৪ সপ্তাহ।
খ. বিএমএ স্পেশাল রেগুলার কোর্স- ২৩ সপ্তাহ।
গ. বেসিক মিলিটারী ট্রেনিং কোর্স- ২৩ সপ্তাহ।
ঘ. জয়েন্ট সারভিসেস কোর্স- ১০ সপ্তাহ (বাংলাদেশ নৌ ও বিমান ক্যাডেট)।
ঙ. শর্ট সারভিস কমিশন- ৪৯ সপ্তাহ।
চ. গ্রাজুয়েট কোর্স- ৪৯ সপ্তাহ।
ছ. ডাইরেক্ট শর্ট সারভিস কমিশন- ২৩ সপ্তাহ।
জ. পটেনশিয়াল প্ল্যাটুন কমান্ডার্স কোর্স- ০৫ সপ্তাহ।
ঝ. ড্রিল ইনস্ট্রাক্টর কোর্স-০৭ সপ্তাহ।
ঞ. বিসিএস অফিসারস্ অরিয়েন্টরশন কোর্স উইক্স (বিএমএ-তে ০১ সপ্তাহ)- ০৫।
ট. প্রি-কমিশন ট্রেনিং- বিএনসিসি- ০৮ সপ্তাহ।
[সম্পাদনা] প্রশিক্ষণ কর্যক্রম
কৌশলগত প্রশিক্ষণ: এতে যুদ্ধের সকল ধরনের ছোট বড় অপারেশনের বিষয়ে লেকচার, টিউটরিয়াল ডিসকাশন, মডেল ডিসকাশন, সৈন্য বিহীন কৌশলগত প্রশিক্ষন, ডেমনেস্ট্রেশন এবং ফিল্ড ট্রেনিং এক্মারসাইজ অন্তর্ভূক্ত। ফিল্ড ট্রেনিং এক্মারসাইজ গুলো হলো:
ক. অনুশীলন পদক্ষেপ-১: দুঃসাধ্য ভূমির উপর দিয়ে দ্রুততর অগ্রগমনের মাধ্যমে ক্যাডেট/প্রশিক্ষণার্থী অফিসারগণের শারীরিক ও মানসিক সহ্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
খ. অনুশীলন পদক্ষেপ-২: x-country route/ terrain দিয়ে দ্রুততর অগ্রগমনের মাধ্যমে ক্যাডেটগণের শারীরিক ও মানসিক সহ্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
গ. অনুশীলন ধুমকেতু: ক্যাডেট/প্রশিক্ষণার্থী অফিসারগণকে ঝটিকা হামলার (raid) পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও পরিচালনা বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা দেওয়া।
ঘ. অনুশীলন পূর্বকোন: ক্যাডেট/প্রশিক্ষণার্থী অফিসারগণকে অতর্কিতে আক্রমণের (ambush) পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও পরিচালনা বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা দেওয়া।
ঙ. অনুশীলন লৌহকপাট: ক্যাডেটগণকে পদাতিক ব্যাটালিয়ন কাঠামোয় কম্পানি পর্যায়ে অবস্থানগত আত্মরক্ষার কৌশল ও কার্যসাধন-পদ্ধতি বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা দেওয়া।
চ. অনুশীলন রণগতি: প্লাটুন কার্যক্রমকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কম্পানি পর্যায়ে ক্যাডেটগণকে দিনে অগ্রসর হওয়া ও আক্রমণ বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা দেওয়া।
ছ. অনুশীলন লালঘোড়া: ক্যাডেটগণকে শত্রু সীমারেখার অভ্যন্তরে নিজ বাহিনীর সরবরাহ ও সাহায্য ছাড়া ক্ষুদ্রায়তনে আক্রমন পরিচালনার পদ্ধতি বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা দেওয়া।
জ. অনুশীলন কষ্ঠিপাথর: ক্যাডেটগণকে যুদ্ধে সকল প্রকার ব্যাপক আক্রমন পরিচালনার পদ্ধতি বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা দেওয়া।
অস্ত্র প্রশিক্ষণ: বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র চালনা ও ব্যাবস্থাপনা বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা দেওয়া এবং লক্ষ্যভেদের উৎকর্ষতা সাধন করা হয়।
শারীরিক প্রশিক্ষণ: শারীরিক দক্ষতার সর্বোচ্চ মান অর্জন করা।
সিগন্যাল প্রশিক্ষণ: তারবিহীন ও সিগন্যাল যন্ত্রপাতি সম্বন্ধে কার্যকর জ্ঞান অর্জন করা।
ইঞ্জিনিয়ার প্রশিক্ষণ: ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান অর্জন করা।
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ: সরাসরি কম্পিউটার পরিচালনার জ্ঞান অর্জন করা যার মধ্যে এমএস ওয়ার্ড, পাওয়ার পয়েন্ট এবং ইন্টারনেট ব্যবহার অন্তর্ভূক্ত।
শিক্ষায়তনিক প্রশিক্ষণ: এই প্রশিক্ষণ প্রধানত পরিচালিত হয় লং কোর্স ক্যাডেটগণকে বিএ/বিএসসি (পাস কোর্স) পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার প্রস্তুতি হিসাবে। অধিকন্তু, শিক্ষায়তনিক প্রশিক্ষণের আরও লক্ষ্য হলো বাংলা ও ইংরেজীতে কথা ও লেখার মাধ্যমে ভাব বিনিময়ের উৎকর্ষতা সাধন, চলমান জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রবহ সম্বন্ধে সচেতনতা তৈরী করা এবং মানসিকতা ও উপলব্ধি ক্ষমতার সম্প্রসারণ।
ট্রেনিং ভিজিট: প্রতি টার্মে ফাইনাল টার্ম ক্যাডেটদের জন্য ট্রেনিং ভিজিট পরিচালিত হয়।
[সম্পাদনা] অধিভূক্তিকরণ
এ্যাকাডেমী তিন বৎসরের শিক্ষায়তনিক পাঠক্রমের সাথে সামরিক শিক্ষা দিয়ে থাকে। এটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভূক্ত এবং তারা ৩ বছরের স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করে থাকে।