স্তন ক্যান্সার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

স্তন ক্যান্সারে নারীদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। সাধারনত ৫০ বছরের বেশী বয়সীদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে এতোদিন এই ক্যান্সারের ব্যাপারে নারীদের সচেতন করার জোরটা ছিল বেশি, কিন্তু এখন পুরুষদেরকেও সচেতন করার জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কারণ, পুরুষদের মধ্যেও স্তন ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। যদিও পুরুষদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার খুবই কম। এক হিসেবে দেখা যায় যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর ৪১ হাজার মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, সেই তুলনায় মাত্র ৩০০ জন পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হন।

সূচিপত্র

[সম্পাদনা] লক্ষণ বা উপসর্গ

  • স্তনের কোন অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া অথবা কোন লাম্প দেখা যাওয়া
  • স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন
  • স্তনবৃন্তের আকারে পরিবর্তন
  • স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ বের হওয়া
  • স্তনবৃন্তের আশেপাশে রাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যাওয়া
  • বগলে ফুলে যাওয়া বা চাকা দেখা দেয়া
  • স্তনের ভেতরে গোটা ওঠা বা শক্ত হয়ে যাওয়া

[সম্পাদনা] স্তন সচেতনতা

নিজের স্তনের ব্যাপারে প্রত্যেকটি নারীকে সচেতন হওয়ার ব্যাপারে জোর দেন চিকিৎসকরা। আগে প্রত্যেকদিন আয়নার সামনে দাড়িয়ে হাত দিয়ে নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করতে বলা হতো। কিন্তু এখনকার গবেষকরা বলছেন যে সেটার আর প্রয়োজন নেই। তার বদলে তারা ৫টি ধাপ অনুসরন করতে বলছেন:

[সম্পাদনা] ১: আপনার স্তনের স্বাভাবিক অবস্থা কি সেটা জানুন

একেকজনের স্তন একেক রকম। এমনকি নিজের দুই স্তনও পুরোপুরি একরকম নয়। স্তনের আকার, ধরন, রং ইত্যাদিতে বিভিন্নতা থাকতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। তাই প্রত্যেকটি নারীকে জানতে হবে যে তার নিজের স্তনের আকার, ধরন, রং কি। কারো স্তনে জন্ম থেকেই একটু চাকা বা ফোলা ভাব থাকতে পারে। তার জন্য সেটাই স্বাভাবিক।

[সম্পাদনা] ২: কোন ধরনের পরিবর্তন অনুভব এবং লক্ষ্য করতে হবে সেটা জানুন

  • স্তনের আকার পরিবর্তন - স্তন বড় হয়ে যাওয়া বা ঝুলে পড়া
  • অন্য জায়গার তুলনায় স্তনের কোন জায়গায় চাকা হয়ে ওঠা অথবা স্তনের ত্বক পুরু বা মোটাভাব অনুভব করা।
  • স্তনের ত্বক ভেতরের দিকে চলে যাওয়া বা ত্বকে ভাঁজ পরা
  • স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে চলে যাওয়া অথবা তার আকার বা আকৃতির পরিবর্তন দেখা দেয়া
  • এক বা উভয় স্তনবৃন্ত থেকে তরল পদার্থ বের হওয়া

ঋতুস্রাবের সময় অনেকের স্তনের আকার বা স্তনবৃন্তের রঙ পরিবর্তন, স্তন ফোলা ইত্যাদি হতে পারে। এসময় অনেকের স্তনে ব্যাথাও করে। তার জন্য সেটা স্বাভাবিক। তাই সেগুলো নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।

[সম্পাদনা] ৩: লক্ষ্য করুন এবং অনুভব করুন

আগে চিকিৎসকরা যেমন প্রতিদিন স্তন পরীক্ষা করতে বলতেন, সেটার আর এখন প্রয়োজন নেই। এটা অনেকের কাছে যেমন বিব্রতকর, তেমনি সময়সাপেক্ষও। তার বদলে এখন বলা হচ্ছে যখনই সময় বা সুযোগ পাবেন কোন পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সেটি দেখার এবং অনুভব করার চেষ্টা করুন।

[সম্পাদনা] ৪: কোন পরিবর্তন দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন

কারন যতো প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়, এটি থেকে সেরে ওঠার সম্ভাবনাও ততো বেশি বেড়ে যায়।

[সম্পাদনা] ৫: আপনার বয়স যদি ৫০-র উপর হয় তাহলে নিয়মিত ব্রেস্ট স্ক্রিনিং করান

কারন বয়স যতো বাড়তে থাকে, শুধু স্তন ক্যান্সার নয়, যে কোন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ততো বেশি বাড়তে থাকে।

[সম্পাদনা] ব্রেস্ট স্ক্রিনিং বা ম্যামোগ্রাফি

৫০ থেকে ৭০ বছর বয়সী নারীদের প্রতি তিনবছর পর পর ব্রেস্ট স্ক্রিনিং বা ম্যামোগ্রাম করানো উচিত। ম্যামোগ্রাম হচ্ছে এক্স-রে’র মাধ্যমে নারীদের স্তনের অবস্থা পরীক্ষা করা। সাধারনত প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার এতো ছোট থাকে যে বাইরে থেকে সেটা বোঝা সম্ভব হয় না। কিন্তু ম্যামোগ্রামের মাধ্যমে খুব ছোট থাকা অবস্থাতেই বা প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পরলে ক্যান্সার থেকে সুস্থ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রচুর থাকে। আর এই পরীক্ষার জন্য মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে।


[সম্পাদনা] ঝুঁকির মাত্রা কাদের বেশি

৫০ বছরের বেশি বয়সীদের ঝুঁকির মাত্রা সবচেয়ে বেশি। স্তন ক্যান্সারে যতোজন আক্রান্ত হন তাদের ৮০ ভাগেরই বয়স হচ্ছে ৫০-এর ওপর। সেই সাথে যাদের পরিবারে কারোর স্তন ক্যান্সার রয়েছে তাদেরও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর।

[সম্পাদনা] কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে

উপরের লক্ষণগুলোর এক বা একাধিকটি যদি আপনার মধ্যে দেখা যায় তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। তবে প্রথমেই চিন্তার কোন কারন নেই। কারন বেশিরভাগ ক্ষেত্রই স্তনের আকার, আকৃতি বা ইত্যাদি পরিবর্তন যা দেখা যায় তা ক্যান্সার হওয়ার জন্য নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো সাধারন কোন সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত এগুলো সারিয়ে ফেলা যায়। তবে যদি সত্যিকার অর্থেই কোন সমস্যা খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে ডাক্তার আপনাকে আরো ভালো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পরামর্শ দেবেন। এগুলো হয়তো সাধারন কোন টিউমারের কারনেও হতে পারে, তখন সেটা নিয়েও তেমন ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর যদি ক্যান্সার ধরা পরে, তাহলে ঠিকমতো চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

[সম্পাদনা] তথ্যসূত্র

ব্রেস্ট ক্যান্সার কেয়ার

অন্যান্য ভাষা