নিঝুম দ্বীপ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

নিঝুম দ্বীপ
নিঝুম দ্বীপ

নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অর্ন্তগত নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিল চর-লোকমান, লোকমান নামের লোকটি প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসত গড়ে বলে এই নামেই এর নামকরন হয়েছিল পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির এই নাম বদলে নিঝুম দ্বীপ নামকরন করেছেন। বাংলাদেশের বনবিভাগ ৭০ এর দশকে বনবিভাগের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া হরিণ ছাড়ে। নিঝুম দ্বীপ এখন হরিণের অভয়ারণ্য। বর্তমানে হরিণের সংখ্যা ২২০০০, ১৯৯৬ সালের হরিণশুমারী অনুযায়ী। নোনা পানিতে বেস্টিত নিঝুম দ্বীপ কেওড়া গাছের অভয়ারণ্য। ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সুন্দর বনের পরে নিঝুম দ্বীপকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বলে অনেকে দাবী করেন।[এই তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

সূচিপত্র

[সম্পাদনা] আয়তন ও জনসংখ্যা

নিঝুম দ্বীপে ৯টি গুচ্ছ গ্রাম রয়েছে। এই গুচ্ছ গ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোট-খাট ঝুপড়ি ঘর। নিঝুম দ্বীপ ১৯৯৬ সালের হিসাব অনুযায়ী ৩৬৯৭০.৪৫৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত।

[সম্পাদনা] মাছ, পশু, পাখি ও উদ্ভিদ

নিঝুম দ্বীপে হরিণ এবং মহিষ ছাড়া অন্য কোন হিংস্র প্রাণী নেই। বর্তমানে হরিণের সংখ্যা ২২০০০। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে ৩৫ প্রজাতির পাখি। এছাড়াও শীতের মৌসুমে অজস্র প্রজাতির পাখির অভয়ারণ্য হয় নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপে বিশাল এলাকা পলিমাটির চর। জোয়ারের পানিতে ডুবে এবং বাটা পড়লে শুকোয় এই স্থানগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের বসবাস। জোয়ারের পানিতে বয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এদের একমাত্র খাবার। এখানে রয়েছে মারসৃপারি নামে একধরনের মাছ যাদেরকে উভচর প্রাণী বলা হয়। ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে এই মারসৃপার ৬-৯ ইঞ্চি লম্বা হয়। বর্ষা মৌসুমে ইলিশের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। এই সময় ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা নিঝুম দ্বীপে আসে মাছ কিনতে। এছাড়া শীত কিংবা শীতের পরবর্তী মৌসুমে নিঝুম দ্বীপ চেঁউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এই মাছ ধরে সুঁটকি তৈরী করে। এই সুটকি ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর সহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারদের কাছে বিক্রি হয় ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে। আবার এই সুটকি হাঁস মুরগীর খাবারেও ব্যবহার করা হয়। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে কেওড়া গাছ। এছাড়াও রয়েছে ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির অন্যান্য গাছ।

[সম্পাদনা] যাতায়ত ব্যবস্থা

অন্যান্য অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ করতে হলে জোয়ার বাটার উপর নির্ভর করতে হয় নিঝুম দ্বীপের মানুষদের। হাতিয়া, ভোলা কিংবা ঢাকার সাথে যোগাযোগ করতে হলে তাদেরকে পুরোপুরি জোয়ার বাটা মেনে চলতে হয়। ঢাকায় যেতে হলে তাদেরকে সকাল ৯ টার (জোয়ার আসার)পর হাতিয়ার উদ্দেশ্য যাত্রা করতে হবে। প্রায় ২-৩ ঘন্টা সময় পর ট্রলার হাতিয়া পৌঁছাবে। অতঃপর পাওয়া যাবে ঢাকাগামী লঞ্চ, যেটি প্রতিদিন বেলা ১২:৩০ মিনিটে ঢাকার উদ্দ্যেশে যাত্রা করে। এই লঞ্চটি বরিশাল এবং ভোলা হয়ে ঢাকায় পৌঁছায় বিধায় নিঝুম দ্বীপের মানুষজন ভোলা কিংবা বরিশালে যেতে পারেন এই লঞ্চে করেই। এছাড়া হাতিয়া কিংবা ঢাকায় আসার জন্য রয়েছে বিকল্প পথ। বন্দরটিলা থেকে ৫ টাকা দিয়ে নদী পার হয়ে হাতিয়ায় পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে বিভিন্ন যানবহন পার করে প্রথমে হাতিয়া শহরে তারপর লঞ্চ পর হয়ে মাইজদি অতঃপর ঢাকায় পৌঁছতে হবে।

[সম্পাদনা] শিক্ষা ব্যবস্থা

নিঝুম দ্বীপে রয়েছে ৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো সাইক্লোন সেন্টারে অবস্থিত।

[সম্পাদনা] চিকিৎসাসেবা

[সম্পাদনা] বনভূমির কার্যক্রম

বনভূমি নিঝুম দ্বীপের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। বন্যপ্রাণী (হরিণ) নিধনে নিষেদাজ্ঞা আরোপ করেছেন। বনভুমির পদক্ষেপে নতুন জেগে উঠা চরে লাগানো হচ্ছে কেওড়া গাছের চারা। বনভূমি এটিকে ন্যাশনাল পার্ক করার পরিকল্পনা শুরু করেছে।

[সম্পাদনা] পর্যটন নিবাস

নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের জন্য রয়েছে অবকাশের নিঝুম রির্সোট। যেখানে রয়েছে সাপ্লাই পানি এবং জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা। খাবারের জন্য রয়েছে স্থানীয় হোটেল। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চাল, মাছ, মুরগী, ডিম ইত্যাদিই খাবারের একমাত্র ভরসা। তবে বর্ষার মৌসুমে রয়েছে ইলিশের জয়জয়কার।

[সম্পাদনা] কিভাবে যাবেন নিঝুম দ্বীপ

রাজধানী ঢাকার কমলাপুর টিটিপাড়া কিংবা সায়েদাবাদ বাসটার্মিনাল থেকে নোয়াখালীর বাসে করে জেলা শহর মাইজদী এসে নামতে হবে। পথে জ্যাম না থাকলে সময় লাগবে চারঘন্টা। মাইজদী থেকে বেবী টেক্সী করে যেতে হবে চরবাটা স্টিমার ঘাট। স্টিমার ঘাট থেকে সী-ট্রাকে যেতে হবে হাতিয়ার নলচিরা ঘাট পর্যন্ত। সেখান থেকে আবার বেবী টেক্সী, টেপু অথবা বাসে যেতে হবে ওছখালি বাজার। সেখানে একরাত যাপন করতে হবে। এর জন্য রয়েছে উপজেলা পরিষদের সরকারী ডাকবাংলো, আবাসিক হোটেল ও দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার উন্নতমানের রেষ্ট হাউজ। ওছখালি থেকে বেবী টেক্সিতে যেতে হবে জাহাজমারা হয়ে আমতলী ঘাটে। এবার আমতলী ঘাট থেকে ট্রলারে নিঝুম দ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু ।

[সম্পাদনা] গ্যালারী