নবুওয়তের পূর্বে মুহাম্মদ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একটি ধারাবাহিক রচনার অংশ যার বিষয় |
|
|
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা করুন] হেরাগুহায় ধ্যান
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: হেরা গুহা
নবীর বয়স যখন চল্লিশের কাছাকাছি তখন তিনি অত্যন্ত নিঃসঙ্গতাপ্রিয় হয়ে উঠেন এবং ধ্যান শুরু করেন। মূলত মানুষের নোংরা জীবনযাপন এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অরাজকতা আর নৈতিক অধঃপতন তাকে মর্মাহত করে এবং তিনি সর্বদাই এর সমাধান খোঁজায় তত্পর থাকার ফলেই এই ধ্যানে অংশ নেন। তিনি ব্যবসা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে গিয়েছিলেন এবং কোন সমাজেই মুক্তি ও আদর্শ নেতৃত্বের কোন নির্দেশনা লাভ করতে সক্ষম হননি। এসব নিয়ে চিন্তার পাশাপাশি বিশ্বস্রষ্টার স্বরুপ নিয়ে চিন্তাও তার নিঃসঙ্গ জীবনের ভাবনার খোরাক হয়ে দেখা দেয়। পরম চিন্তার পরিবেশ তৈরির সুবিধার্থে তিনি মক্কা থেকে ২ মাইল দূরে অবস্থিত হেরা গুহার অভ্যন্তরে ধ্যান করা শুরু করেন। এসময় তার স্ত্রী খাদিজা নিয়মিত তার খাবার দিয়ে যেতেন। আর তিনি পুরো রমজান মাস এখানে কাটাতেন; এছাড়া অন্যান্য সময়এ এখানে ধ্যানে নিমগ্ন থাকতেন, পাশাপাশি তিনি পথচারী মিসকিনদের খাওয়াতেন।
[সম্পাদনা করুন] প্রত্যাদেশ অবতরণ
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: মুহাম্মদের (সাঃ) উপর প্রত্যাদেশ অবতরণ
[সম্পাদনা করুন] প্রথম প্রত্যাদেশ
মুহাম্মদের বয়স যখন ৪০ বছর তখন হেরাগুহায় ধ্যানমগ্ন থাকা অবস্থায়ই একদিন তার উপর প্রত্যাদেশ (ওহী) অবতীর্ণ হয়। চল্লিশ বছর বয়সেই প্রকৃতপক্ষে একজন ব্যক্তির চিন্তাজগতে পরিপূর্ণতা আসে। তাই এ সময় ছিল যথোপযুক্ত। তাছাড়া এ সময়ের মধ্যে নবী হেরাগুহায় ধ্যানের তৃতীয় বছর সমাপ্ত করেন। আয়েশার বর্ণনা উরওয়া হয়ে আয যুহুরী বর্ণনা করেছেন। এ অনুসারে প্রথম প্রত্যাদেশ অবতরণের পটভূমি ও ঘটনা নিম্নরুপ: (সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত)
- প্রথমে স্বপ্নের মাধ্যমে মুহাম্মদের কাছে ওহী অবতরণের সূচনা হয়। এরপর তিনি নির্জনতাপ্রিয় হয়ে যান এবং হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকা শুরু করেন। এমনি করে এক পর্যায়ে তার কাছে ফেরেশতা জিবরাইল আসে এবং তাকে বলে اقر (পড়)। তিনি বলেন "আমি পড়তে জানিনা"। ফলে ফেরেশতা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সজোরে চাপ দেন। তবুও তিনি বলেন একই কথা বলেন। এভাবে তৃতীয়বার চাপ দেয়ার পর ছেড়ে দিয়ে বলেন, "পড় সেই প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন" এবং নবী তা হবুহু পাঠ করেন। প্রথমে সূরা আল আলাক্বের প্রথম ৫ আয়াত অবতীর্ণ হয়।
- এই আয়াতগুলো অবতরণের পর নবী প্রচন্ড ভীত হয়ে পড়েন এবং ঘরে ফিরে আসেন। তার কথামত খাদিজা তাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়ার পর তিনি নির্ভয়ে ঘটনাটির কথা উল্লেখ করে বলেন যে তিনি তার জীবনের আশংকা করছেন। কিন্তু খাদিজা বলে যে, "আল্লাহ আপনাকে অপমান করবেন না। আপনি আত্মীয় স্বজনের হক আদায় করেন, বিপদগ্রস্ত লোকদের সাহায্য করেন, মেহমানদারী করেন এবং সত্য প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন"। এরপর খাদিজা নবীকে তার আপন চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের কাছে নিয়ে যান যিনি একজন ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ এবং হিব্রু ভাষায় ইঞ্জিল লেখায় পারদর্শী ছিলেন। ওয়ারাকা সব শুনে বলেন যে "তিনি (জিবরাইল) সেই নামূস (গোপন রহস্যজ্ঞানী ফেরেশতা) যিনি মূসার কাছে এসেছিলেন। হায় আমি যদি সেই সময়ে থাকতাম যখন তোমার জাতি তোমাকে বের করে দিবে।"
[সম্পাদনা করুন] পরবর্তী প্রত্যাদেশ
প্রথম প্রত্যাদেশ অবতরণের পর কয়েকদিন প্রত্যাদেশ অবতরণ বন্ধ থাকে। একটি কথা অনেকেই বলেন যে আড়াই বা তিন বছর প্রত্যাদেশ অবতরণ বন্ধ ছিল; তবে তা সত্য নয়। প্রত্যাদেশ স্থগিত থাকার সময় নবী অত্যন্ত বিষণ্ণ ও চিন্তাযুক্ত থাকতেন। হাফেজ ইবনে হাজারের মতে প্রত্যাদেশ স্থগিত থাকার কারণ ছিল নবীর মনে থেকে যাতে ভয় কেটে যায় এবং তিনি পরবর্তী প্রত্যাদেশের জন্য উত্সুক হয়ে উঠেন। প্রকৃতপক্ষেই একসময় মুহাম্মদ বুঝতে পারেন যে তিনি আল্লাহ'র নবী মনোনিত হয়েছেন এবং তাকে এই দায়িত্ব অবশ্যই পালন করতে হবে; তাই তিনি শক্ত হন এবং পরবর্তী প্রত্যাদেশের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। বুখারী শরীফে জাবির ইবনে আবদৃল্লাহ থেকে এ নিয়ে একটি ঘটনা বর্ণীত আছে যার সারকথা হচ্ছে:- রাসূল পথ চলছিলেন, এমন সময় একটি আওয়াজ শুনে আকাশের দিকে তাকান এবং সেই ফেরেশতাকে বিকট আকারে দেখতে পান। এতে ভীত হয়ে তিনি ঘরে ফরেন এবং খাদীজা তাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়। তারপরই সূরা আল মুদ্দাস্সিরের ওয়ার রুজযা ফাহজুর পর্যন্ত অবতীর্ণ হয়। সূরা মুদ্দাস্সিরের (৭৪ নং সূরা) ব্যখ্যা হতে জানা যায় যে এই আয়াত কয়টিতেই নবীকে প্রথম ইসলাম প্রচার এবং এর দিকে সবাইকে আহ্বান করার নির্দেশ দেয়া হয়। আর এই প্রচারের মূলমন্ত্র ছিল তাওহীদ তথা স্রষ্টার একত্ববাদ। ইসলামের মূল আদর্শ এই সময়েই নবীকে জানিয়ে দেয়া হয় আর তা এই যে, পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহরই শাসন থাকবে এবং মানুষ আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করবেনা।