বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী
যেসব রাষ্ট্রে প্রচলিত: বাংলাদেশ, ভারত মায়ানমার ও অন্যান্য কিছু দেশ 
অঞ্চল: দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চল
মোট ভাষাভাষী সংখ্যা: ৪৫০,০০০
ভাষা পরিবার: ইন্দো-ইউরোপীয়
 ইন্দো-ইরানীয়
  ইন্দো-আর্য
   শৌরসেনী প্রাকৃত
    অপভ্রংশ
     বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী 
লিপি: বাংলা লিপি ও দেবনাগরী লিপি
ভাষা কোডসমূহ
ISO 639-1: none
ISO 639-2: inc
ISO/FDIS 639-3: bpy 

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী একটি মণিপুরী জাতি ভুক্ত সম্প্রদায় ও ভাষার নাম।

সূচিপত্র

[সম্পাদনা করুন] ভাষা

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সম্প্রদায়ের ভাষার নামও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা নিজেদের ভাষাকে ইমার ঠার বলে থাকে। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা প্রধানত বাংলা লিপি এবং অসমীয়া লিপি থেকে ২টি লিপি (ৰ, ৱ) লেখার কাজে ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়াও অনেকে [দেবনাগরী লিপি]] ব্যবহার করে থাকে।

[সম্পাদনা করুন] বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় অন্যান্য ভাষার প্রভাব

  • তৎসম শব্দ প্রায় ১০,০০০
  • অর্ধ-তৎসম প্রায় ১,৫০০
  • হিন্দী, বাংলা ও অসমীয়া শব্দ প্রায় ৮,০০০
  • তৎভব শব্দ প্রায় ২,০০০
  • মৈতৈ শব্দ প্রায় ৩,৫০০
  • আরবী-পার্শি শব্দ প্রায় ২,০০০
  • ইংরেজী শব্দ প্রায় ২,০০০
  • দেশী শব্দ প্রায় ২,০০০

[সম্পাদনা করুন] ইতিহাস

ভারতেরর মণিপুর রাজ্য থেকে এ সম্প্রদায়ের উৎপত্তি। ১৭শ খ্রীষ্টাব্দের মাঝামাঝি মণিপুর রাজ্যে বার্মিজদের সঙ্গে ৭ বৎসর স্থায়ী যুদ্ধে মণিপুরের অন্যান্য আরো জাতি ও উপজাতির ন্যায় বর্তমান বাংলাদেশ সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা ছড়িয়ে পরে।

[সম্পাদনা করুন] বাংলাদেশর বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সম্প্রদায়

মণিপুর থেকে ছড়িয়ে পরার পরপরই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মণিপুরীরা বসতি স্থাপন শুরু করে। তার মধ্যে সর্ব প্রথম ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় মণিপুরীরা বসতি স্থাপন করে, যেটি বর্তমানে মণিপুরী পাড়া (বাংলাদেশর বর্তমান জাতীয় সংসদের পূর্ব পাশ) নামে খ্যাত। সেখান থেকে দেশের সবর্ত্র বিশেষ করে সিলেট বিভাগে মণিপুরীদের প্রধান বসতি গড়ে উঠে।

বাংলাদেশের সংবিধানে বাঙালী ব্যতীত অন্য জাতির স্বীকৃতি না থাকায় মণিপুরীরা আটকে পড়া বিহারীদের মত ভাগ্য বরন নাকরার মানসে নিজেরা উপজাতি না হওয়া সত্ত্বেও উপজাতি শব্দটিকে স্বীকার করে বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষা, চাকুরী ও বেতার টিভিতে অনষ্ঠান করার সুযোগ গ্রহন করে আসছে। উল্লেখ্য মণিপুরীরা ভারতে উপজাতি হিসাবে পরিচিত নয় এবং ভারতের অসম ও ত্রিপুরা রাজ্যে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা দান করা হয়।

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা বাংলাদেশর বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন (ভানুবিল কৃষক প্রজা আন্দোলন), ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করে। বাংলাদেশর স্বধীনতা আন্দোলনে শহীদ গিরীন্দ্র সিংহ, রবীন্দ্র সিংহ সহ আরো আনেকে বীরত্ব প্রদর্শন করে বাংলাদেশর জাতীয় ইতিহাসে অবদান রাখার সুযোগ লাভ করেন।

বর্তমানে এ সম্প্রদায় থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একজন বিচারক বিচারপতি এস কে সিনহা নিযুক্ত রয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার এ সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি বিকাশে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানায় একটি "মণিপুরী ললিত কলা একাডেমী" স্থাপন করেন।

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীর ভাষায় বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত "পৌরি পত্রিকা" নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়ে আসছে। তাছাড়াও "ইথাক" পত্রিকা নামে অপর একটি সংবাদপত্র বর্তমানে কিছুদিন অপ্রকাশিত অবস্থায় রয়েছে, যেটি শিঘ্রই পুনঃ প্রকাশিত হবে বলে স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছে।

[সম্পাদনা করুন] সাহিত্য

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা মণিপুর ছাড়ার পরপরই নিজেদের ভাষা প্রায় ভুলতে শুরু করেছিল। বর্তমানে এ ভাষায় প্রচুর সাহিত্য চর্চ্চা শুরু হয়েছে। উল্লেখ যোগ্য সাহিত্যিকদের তালিকা:

[সম্পাদনা করুন] ভারত

  • অধ্যাপক ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহ - বাংলা ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী
  • ডঃ কালি প্রসাদ সিংহ - সংস্কৃত ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী
  • বরুণ কুমার সিংহ -ইংরেজী ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী
  • দিল্স লক্ষীন্দ্র কুমার সিংহ - অসমীয়া ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী
  • দিল্স দেবজ্যোতি সিংহ - ইংরজী, অসমীয়া ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী

[সম্পাদনা করুন] বাংলাদেশ

  • শুভাশীষ সমীর - বাংলা ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী
  • অধ্যাপক রনজিত সিংহ - বাংলা ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী
  • অসিম সিংহ - ইংরেজী, বাংলা ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী

[সম্পাদনা করুন] সাংস্কৃতি

সাংস্কৃতিক দিক থেকে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা অনেক উন্নত। মণিপুরী নৃত্য ভারতীয় নৃত্যকলার এক বিরাট স্থান দখল করে রয়েছে। ভারতীয় ৫ টি শাস্ত্রীয় নৃত্যের মধ্যে মণিপুরী নৃত্য অন্যতম।

[সম্পাদনা করুন] শিল্প

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের বস্ত্র শিল্প ভারত ও বাংলাদেশের সর্বত্র সমাদৃত।

[সম্পাদনা করুন] ওয়েব সংযোগ

[সম্পাদনা করুন] তথ্য নির্দেশিকা

  1. ভাষা তত্তের রূপরেখা, ১৯৭৭ - ডঃ কালী প্রসাদ সিংহ
  2. মণিপুরী জাতিসত্তা বিতর্ক: একটি নিরপেক্ষ পাঠ, ২০০১, সিলেট, বাংলাদেশ - অসিম কুমার সিংহ
  3. Tribals and Their Culture in Manipur and Nagaland, 1982 - জি. কে. ঘোষ
  4. The Background of Assamese Culture, 2nd edn, 1978 - রাজ মোহন নাথ
  5. Linguistic Survey of India, Vol-5,1903 - স্যার জি. এ. গিয়েরসন
  6. An Etymological Dictionary of Bishnupriya Manipuri, ১৯৮২ - ডঃ কালী প্রসাদ সিংহ
  7. Religious developments in Manipur in the 18th and 19th centuuy, ইম্ফল, ১৯৮০ - ডঃ এম কীর্ত্তি সিংহ
  8. The Bishnupriya Manipuris & Their Language, শিলচর, ১৯৭৬ - জগত মোহন সিংহ ও বীরেন্দ্র সিংহ