রিচার্ড ফাইনম্যান
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
![]() "যা আমি তৈরি করতে পারি না, তা আমি বুঝি না।" —রিচার্ড পি. ফাইনম্যান |
|
জন্ম | মে ১১, ১৯১৮ কুইন্স, নিউ ইয়র্ক |
---|---|
মৃত্যু | ফেব্রুয়ারি ১৫, ১৯৮৮ লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া |
জাতীয়তা | মার্কিন |
কর্মক্ষেত্র | পদার্থবিজ্ঞান |
এর্ডশ সংখ্যা | 3 |
কর্মপ্রতিষ্ঠান | কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালটেক |
পঠিত বিদ্যাপীঠ | ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় |
অধিস্নাতক পরামর্শদাতা | জন আর্চিবাল্ড হুইলার |
অধিস্নাতক ছাত্রবৃন্দ | আল হিবস, মার্ক কিসলিঞ্জার, রিচার্ড লাইপ্স, ফিন র্যাভন্ডাল |
যে জন্যে পরিচিত | কোয়ান্টাম ইলেকট্রো-গতিবিদ্যা, কণা তত্ত্ব, ফাইনম্যান চিত্র |
পুরস্কার | ওয়েরস্টেড পদক (১৯৭২), নোবেল পুরস্কার (১৯৬৫) |
জীবনসঙ্গী | আর্লিন গ্রীনবম, ম্যারি লুসি বেল, গিনেথ হাওয়ার্থ |
সন্তানাদি | কার্ল রিচার্ড (জ. এপ্রিল ২২, ১৯৬২), মিশেল ক্যাথেরিন (পালিত, জ. আগস্ট ১৩, ১৯৬৮), সর্বশেষ স্ত্রী গিনেথের গর্ভে |
ধর্ম | নাস্তিক |
কোন হাতি | বাঁ হাতি |
রিচার্ড ফিলিপ্স ফাইনম্যান (১১ই মে, ১৯১৮, ফার রকাওয়ে, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র - ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮) একজন নোবেল বিজয়ী মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী, "কোয়ান্টাম ইলেকট্রো-গতিবিদ্যা" ভাবনার অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৪২ সালে পিএইচ. ডি. ডিগ্রী অর্জনের পর অন্যান্য অনেক তরুণ পদার্থবিদের সাথে নিউ মেক্সিকোর লস আলামোসে পারমাণবিক বোমা তৈরীতে সাহায্য করেন। যুদ্ধশেষে প্রথমে তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং তারপর যান ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে।
চল্লিশের দশকের শেষদিকে ফাইনম্যান কোয়ান্টাম ইলেকট্রো-গতিবিদ্যা (Qunatum electrodynamics) নামের আপেক্ষিক-কোয়ান্টাম তত্ত্বে (Relativistic quantum theory) (যা কিনা আহিত কণাসমূহের মধ্যকার তাড়িৎ-চৌম্বক মিথষ্ক্রিয়ার (Electromagnetic interaction) ব্যাখ্যা দেয়) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এই তত্ত্বের একটা বড় সমস্যা হলো অসীম রাশিসমূহের উপস্থিতি যেগুলো পুনর্স্বাভাবিকীকরণ (Renormalization) পদ্ধতিতে অন্যান্য অসীম রাশি থেকে বিয়োগ করে দূর করা হয়। যদিও এই ধাপটি গাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সন্দেহজনক এবং বহু পদার্থবিদদের অস্বস্তির কারণ, তবু চূড়ান্ত তত্ত্বটির প্রতিটি অনুমানই দারণভাবে নির্ভুল। সদা অননুতপ্ত ফাইনম্যান মন্তব্য করেছিলেন, "আমরা দর্শনের পিছনে ছুটছি না, আমরা ছুটছি বাস্তব জিনিস কিভাবে আচরণ করে তার পিছনে।" তিনি কোয়ান্টাম ইলেকট্রো-গতিবিদ্যা এবং পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের মধ্যকার অদ্ভুৎ মতৈক্যকে নিউইয়র্ক থেকে লস আলামোসের দূরত্ব একটিমাত্র চুলের বেধের সমান নির্ভুলতায় পরিমাপ করার সাথে তুলনা করেছিলেন।
অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই পদার্থবিজ্ঞানী ১৯৬৫ সালে কোয়ান্টাম ইলেকট্রো-গতিবিদ্যার আরো দুই পুরোধা ব্যাক্তিত্ব মার্কিন বিজ্ঞানী জুলিয়ান সুইংগার এবং জাপানি বিজ্ঞানী সিন-ইতাইরো টোমোনাগার সাথে নোবেল পুরস্কার ভাগাভাগি করে নেন।
ফাইনম্যানের অন্যান্য অবদানসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পরমশূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি তরল হিলিয়ামের আচরণের ব্যাখ্যাদান এবং মৌলিক কণিকাসংক্রান্ত অবদানসমূহ। ১৯৬৩ সালে তিন খন্ডে প্রকাশিত তাঁর 'পদার্থবিজ্ঞানের উপর বক্তৃতাগুচ্ছ' (Lectures on Physics) আদ্যন্ত ছাত্র-শিক্ষক উভয় মহলে ব্যাপক উদ্দীপনার উৎসরূপে পরিগণিত হয়ে আসছে।
[সম্পাদনা করুন] উক্তিসমূহ
[সম্পাদনা করুন] ফাইনম্যানের উক্তি
- "প্রিয় মিসেস. চাউন, আপনাকে পদার্থবিজ্ঞান শেখানোর জন্য আপনার ছেলের প্রচেষ্টাকে আপনি খুব একটা আমলে নিয়েন না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু পদার্থবিজ্ঞান নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভালোবাসা। শুভেচ্ছান্তে, রিচার্ড ফাইনম্যান।"
- "হস্তমৈথুনের কাছে যৌণ-সঙ্গম যেমন, গণিতের কাছে পদার্থবিজ্ঞান সেরকম।"
- "পদার্থবিজ্ঞান হলো যৌণ-সঙ্গমের মতন: সন্দেহ নাই যে এতে কিছু ব্যবহারিক ফল লাভ হতে পারে, কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানে কাজ করার কারন সেটা নয়।"
- "গণিত বাস্তব নয়, তবে এটাকে বাস্তব বলে মনে হয়। তাহলে এটা আসলে কি?"
- "কোন সমস্যা সমাধান করার সময়টাতে দুশ্চিন্তা কোরো না। যখন সমাধান করা শেষ হলো তখনই আসলে দুশ্চিন্তা করার উপযুক্ত সময়।"
- "বিজ্ঞানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, এটি জীবন্ত।"
- "সব মৌলিক প্রক্রিয়াকেই উল্টোদিকে চালনা করা সম্ভব।"
- "কোন কিছু বোঝা-র অর্থ কি? ... আমি জানি না।"
- "যা আমি তৈরি করতে পারি না, তা আমি বুঝি না।" (মৃত্যুর পর তাঁর চকবোর্ড থেকে নেয়া হয়েছে।)
- "যে সব সমস্যা সমাধান করা হয়েছে তাদের প্রতিটির সমাধান প্রক্রিয়া জানতে হবে।" (মৃত্যুর পর তাঁর চকবোর্ড থেকে নেয়া হয়েছে।)
- "যারা গণিতে অজ্ঞ তাদের জন্য প্রকৃতির নিগূঢ়তম সৌন্দর্যকে সত্যকারভাবে উপলব্ধি করাটা কষ্টকর। ... প্রকৃতিকে জানতে হলে, তার সৌন্দর্যকে অনুধাবন করতে হলে প্রকৃতির ভাষা জানা চাই।"
- "সত্যকার সমস্যাটা আমি সংজ্ঞায়িত করতে পারছি না, তাই আমার সন্দেহ হচ্ছে সত্যকার কোন সমস্যা আদৌ আছে কি-না, কিন্তু কোন সত্যকার সমস্যা যে নেই এটাও আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।" (কোয়ান্টাম বলবিদ্যা সম্পর্কে)
- "দুইবার মরতে হলে ব্যাপারটাকে আমি ঘৃণা করতাম। কারন মৃত্যুটা খুউবই বোরিং একটা ব্যাপার।" (শেষ উক্তি).
[সম্পাদনা করুন] ফাইনম্যানের সম্মন্ধে উক্তি
- ফাইনম্যানের সহকর্মী নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিদ মুরে জেল-ম্যান নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ সরসভাবে বর্ণনা করেছেন যে, ফাইনম্যানের সমস্যা সমাধানের এলগরিদমটি ছিল এরকমঃ
- সমস্যাটা লিখে ফেলুন;
- খুব করে ভাবুন;
- সমাধানটি লিখে ফেলুন।
- নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতবিদ ই. পি. উইগনার ফাইনম্যান সম্পর্কে বলেছেন, "তিনি হলেন দ্বিতীয় ডিরাক। পার্থক্য শুধু, এবারের জন একজন মানুষ।"
- নোবেল পুরস্কার বিজয়ী তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী হান্স বিদে বলেছেন, "দুই রকমের জিনিয়াস আছেন। সাধারণ জিনিয়াসেরা মহান সব কাজ করে থাকেন, কিন্তু সবসময়েই এটা চিন্তা করার সুযোগ থেকে যায় যে, যথেষ্ট পরিমাণে খাটলে আপনিও বুঝি ওটা করতে পারতেন। আরেকরকমের জিনিয়াস অনেকটা যাদুকরের মতন, আপনি কিছুতেই ভেবে উঠতে পারবেন না, তারা সেটা কিভাবে করল। ফাইনম্যান ছিলেন একজন যাদুকরী জিনিয়াস। "