এলবার্ট মিকেলসন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

চিত্র:Albert Abraham Michelson.jpg
এলবার্ট আব্রাহাম মিকেলসন
চিত্র:Albert Abraham Michelson signature.jpg
তাঁর স্বাক্ষর

এলবার্ট আব্রাহাম মিকেলসন (ডিসেম্বর ১৯, ১৮৫২ - মে ৯, ১৯৩১), ছিলেন জার্মানিতে জন্মগ্রহণকারী মার্কিন পদার্থবিদ। ইথার মাধ্যমে পৃথিবীর গতি নির্ধারণমূলক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জন্য তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। এই পরীক্ষার সমসময়ে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে, মহাবিশ্বের সবখানে ইথার পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে। মিকেলসনের পরীক্ষাটি ইথারের অনস্তিত্ব প্রমাণে সাহায্য করেছিল।

মিকেলসন স্ট্রেলনোতে(বর্তমানে স্ট্রেজেলনো, পোল্যান্ড) জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু মাত্র দুই বছর বয়সে বাবা-মায়ের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। তাঁরা নেভাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। তিনি এন্নাপোলিসে অবস্থিত নৌ-শিক্ষায়তনে পড়াশুনা করেন। সমুদ্রে দুই বছর দায়িত্বপালনের পর তিনি সেখানকার বিজ্ঞান বিষয়ের একজন নির্দেশক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন।

চিত্র:Michelson - Experimental Determination of the Speed of Light, p 1.jpg
মার্কিন নৌবাহিনীতে থাকাকালীন তাঁর লেখা আলোক দ্রুতির পরীক্ষামূলক পরিমাপ এর প্রথম পাতা।
চিত্র:Michelson - Experimental Determination of the Speed of Light, conclusion.jpg
উপরের চিত্রে প্রদর্শিত গবেষণাপত্রটির শেষ পাতা।


আলোকবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার মানসে, জ্ঞানবিস্তারের লক্ষ্যে তিনি ইউরোপে যান এবং বার্লিন ও প্যারিসে পড়াশুনা করেন। এরপর তিনি নৌ-শিক্ষায়তনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ওহাইওতে অবস্থিত কেইজ স্কুল অব এপ্লাইড সাইন্সে যোগ দেন। তারপর কাজ করেন ম্যাসাচুসেটসের ক্লার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবং সবশেষে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসাবে ১৮৯২ সাল থেকে শুরু করে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

অতিসূক্ষ্ম পরিমাপে মিকেলসনের পারদর্শিতা ছিল অসাধারন। তিনি আলোর দ্রুতির যে মানগুলি পর্যায়ক্রমিকভাবে প্রকাশ করেন, বেশ কয়েক দশক জুড়ে সেগুলিই ছিল সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। তিনি দৈর্ঘ্যের একক মিটারকে নির্দিষ্ট বর্ণালী রেখার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সাহায্য নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেন। শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্রেও যেখানে নক্ষত্রগুলিকে অতিক্ষুদ্র আলোকবিন্দু হিসাবে দেখা যায়, সেখানে তিনি এমনই সূক্ষ্ম এক ব্যাতিচারমাপণ যন্ত্র(Interferometer) উদ্ভাবণ করেন যার সাহায্য নক্ষত্রের ব্যাস পরিমাপণ সম্ভবপর হয়ে ওঠে।

মিকেলসনের সবচেয়ে বড় অবদান হলো এডওয়ার্ড মর্লির সাথে ১৮৮৭ সালে সম্পাদিত ইথার মাধ্যমে পৃথিবীর গতি নির্ধারণমূলক পরীক্ষা। ইথার হলো সমস্ত মহাবিশ্বে পরিব্যাপ্ত এক কাল্পনিক মাধ্যম যার মধ্য দিয়েই আলোক তরঙ্গ অগ্রসর হয়। আলোকে তাড়িৎ চৌম্বক বিকিরণ(Electromagnetic radiation) হিসাবে সনাক্ত করার অনেক আগে থেকেই ইথারের এই জুজু পদার্থবিদদের কাঁধে চেপে থাকলেও, মিকেলসন-মর্লির বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাটির সমকালে কেউই আলোর বিস্তারের জন্য একটি পরম প্রসঙ্গ কাঠামোর অপরিহার্যতাকে অস্বীকার করতে এগিয়ে আসেন নি।

তাঁদের পরীক্ষাটি ইথারজনিত যে কোন বিচ্যুতি সনাক্ত করার মতো যথেষ্ট সূক্ষ্ম হওয়া সত্ত্বেও ফলাফলটি ছিল যে কারো জন্য আশ্বর্যজনক। কারণ, এমন কোন বিচ্যুতিই প্রদর্শিত হয়নি। এই ঋণাত্মক ফলাফলের ছিল দ্বিমুখী তাৎপর্য। প্রথমতঃ এতে প্রমাণিত হয় যে, ইথার এর কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই এবং ফলশ্রুতিতে পরম গতি বলে কিছু নেই, সব গতিই আপেক্ষিক। ইথার যেহেতু নাই কাজেই কোন পরম প্রসঙ্গ কাঠামোও নাই যার সাপেক্ষে সব গতিকে বর্ণনা করা যায়। বরং সব গতিকেই কোন না কোন নির্দিষ্ট প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে বর্ণনা করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ পরীক্ষালব্ধ ফল এটাই নির্দেশ করে যে, আলোর দ্রুতি যেকোন পর্যবেক্ষকের জন্য এক এবং নির্দিষ্ট। অথচ তরঙ্গসমূহের (যেমনঃ শব্দতরঙ্গ এবং জলতরঙ্গ) জন্য এটা সত্য নয় কারন তাদের চলাচলের জন্য চাই একটি বস্তুগত মাধ্যম।

মিকেলসন-মর্লি পরীক্ষাটি ১৯০৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন প্রদত্ত আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের পটভূমি রচনা করে থাকলেও মিকেলসন নিজে এই অভিনব তত্ত্বটিকে স্বীকৃতি জানানোর ব্যাপারে গররাজি ছিলেন। সত্যি বলতে কি, আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম তত্ত্ব পদার্থবিদ্যার জগতে বিল্পবের সূত্রপাত ঘটানোর অনতিপূর্বে এই মিকেলসনই ঘোষণা দিয়েছিলেন, পদার্থবিদ্যার ভবিষ্যৎ আবিষ্কারগুলি আসলে দশমিকের পর ষষ্ঠ ঘর আবিষ্কার করার সামিল। এটা তখনকারদিনের একটি প্রচলিত ধারনা ছিল।

১৯০৭ সালে দারুণরকম নিখুঁত সব যন্ত্রপাতি নির্মাণ ও তাদের সাহায্য সম্পাদিত গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পাদন করার জন্য তাঁকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তিনিই মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে সর্বপ্রথম এই বিরল সম্মাননা পান।

মিকেলসনের লেখা উল্লেখযোগ্য বইগুলি হলো, ‘আলোর বেগ(১৯০২)’(Velocity of Light) এবং ‘বিশদ আলোকবিদ্যা(১৯২৭)’(Study in Optics)।

অন্যান্য ভাষা