র্যাব
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
[সম্পাদনা করুন] RAB এর প্রকৌশল ব্যবস্থা
শুরুর দিকের কথা আজ থেকে আরো কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাস দমনের জন্য এদেশে আর্মি, নেভী, এয়াফোর্স ও পুলিশ থেকে অভিজ্ঞ লোকবল নিয়ে সম্পূর্ন ভিন্নধর্মীর তড়িত্ গতির এক টিম তৈরি করার চিনত্মাভাবনা করেন; যার ফলশ্রুতিতে তৈরি হয়েছে আজকের রেপিড একশন ব্যাটেলিয়ান বা সংক্ষেপে রেব৷ ধন্যবাদ সরকারকে; এজন্য যে তারা ভুল সিদ্ধান্ত নেইনি৷ দলে কঠিন ভিত্তি প্রস্তর তৈরি করার জন্য এই রেব-এ আছে শক্তিশালী এবং অত্যন্ত মেধাবী কিছু প্রকৌশলী৷ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও সুসংগঠ, কঠিন ও মজবুত করার জন্য সারা দেশে এরা ডেভেলপ করে যাচ্ছে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং আশ্চর্যকর প্রকৌশল ব্যবস্থা৷
আশ্চর্যকর প্রযুক্তি এভিএল বেশিরভাগ সময়ে যা ঘটে- হঠাত্ আপনি বিপদে পড়ে ফোন করলেন পুলিশকে৷ পুলিশ তাদের অফিস থেকে লোক পাঠাতে পাঠাতে আপনার সব শেষ! হয়তোবা খুব কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলো পুলিশের কোন পেট্রোল কার, যদি অফিস থেকে লোক না পাঠিয়ে উক্ত পেট্রোল কারকে জানানো হতো, তবে হয়তো আপনি বিপদ থেকে বেঁচে যেতেন৷ কিন্তু উক্ত ঘটনাটি বোধহয় আর ঘটবে না৷ কেননা এবার র্যাব ব্যবহার করা শুরম্ন করেছে এভিএল প্রযুক্তি৷ যার দ্বারা তারা তাদের হেডকোয়ার্টারে বসেই বাংলাদেশের সমস্ত র্যাবের পেট্রোল কারগুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে৷ তাদের প্রতিটা পেট্রোল কারেই আছে একটি করে কম্পিউটার৷ যেখানে সংরৰিত করা হয়েছে শহরের সমস্ত খুঁটিনাটিসহ পূর্নাঙ্গ ডিজিটাল ম্যাপ৷ যার সাহায্যে অফিসারগণ খুব সহজেই জেনে ফেলতে পারছে কোথায় কখন কোন পেট্রোল কারকে পাঠানো ঠিক হবে৷ ফলে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড জানার সাথে সাথে সবচেয়ে কাছের পেট্রোল কারটিকে পাঠানো সম্ভব হবে৷ এবার চলুন দেখি এভিএল আসলে কিভাবে কাজ করে- এভিএল প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেকোন যানের যেকোন সময়ের অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব৷ অটোমেটেড ভিহাইকল লোকেটর ব্যবহার করার পূর্বশর্ত হল সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখার জন্য ডিজিটাল ম্যাপ প্রতিস্থাপন করতে হবে৷ সাধারনত, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) এর মাধ্যমে উক্ত ডিজিটাল ম্যাপ তৈরীর কাজটি সম্পন্ন করা হয়৷ প্রাপ্ত সঠিক তথ্য কনটিনিয়াস পজিশন সিস্টেম (সিপিএস) এর মাধ্যমে ডিজিটাল ম্যাপ ডাটাবেজে রাখা হয়৷ ডিজিটাল ম্যাপিং ছাড়াও বস্তুর সঠিক অবস্থান নির্ণয়ে আংশ, দ্রাঘিমাংশ, স্থানাংক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়৷ কৌশলগত দিক থেকে আরো স্বচ্ছতা আনার জন্য গাড়ীর গড় ঘূর্ণন গতি পরিমাপ করা হয়ে থাকে৷ গাড়ীর গড় ঘূর্ণন গতির পরিমাপের তথ্য, জিআইএস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সাথে মিল রেখে গাড়ীর সঠিক অবস্থান ডিজিটাল ম্যাপে নির্ণয় করা হয়৷ এৰেত্রে রেডিও অথবা ওয়্যারল্যাস কমিউনিকেশন এমনভাবে স্থাপন করা প্রয়োজন হয় যেন শহরের দশ তলা উঁচু ভবনের বাধা পেরিয়ে, দূরবর্তী গ্রাম,গহীন অরণ্য থেকে সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করা যায়৷ জানা গেছে, বর্তমানে বড় শহরগুলোতে ডিজিটাল ম্যাপিং এর কাজ শেষ করা ছাড়াও আরও ২৩ টি জেলায় ম্যাপিং এর কাজ চলছে৷ একইভাবে সারা দেশের অন্যান্য স্থানের ম্যাপিং খুব তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করবেন বলে আশা করছেন রেবের সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সাথে জড়িত কর্তাব্যাক্তিরা ৷
ট্রাংকিং কমিউনিকেশন প্রচলিত পদ্ধতিতে ওয়াকিটকি দিয়ে একজন আরেক জনের সাথে একই সময়ে যোগাযোগ (সিমপ্লেঙ্) করতে চাইলে বোতাম চেপে একমুখী তরঙ্গ পাঠিয়ে কথা বলত৷ এর ফলে অন্য একজন কথা বলা শেষ না করা পর্যনত্ম অন্যজন কোন কথা বলার সুযোগ পেত না৷ বর্তমানে র্যাবের সদস্যগণ অত্যাধুনিক ট্রাংকিং কল সিস্টেম ব্যবহার করে সঠিক সময়ে তথ্য আদান প্রদান করতে সম৷ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রচলিত সিমপ্লেঙ্ পদ্ধতি ছাড়াও একজন একইসময়ে দুইজন (ডুপ্লেঙ্ পদ্ধতি) বা ততোধিক লোকের সাথে (মাল্টিপ্লেঙ্ পদ্ধতি) যোগাযোগ করতে সম৷ ট্রাংকড রেডিও কমিউনিকেশনের "ট্রাংকড লাইন" এর মাধ্যমে দুই বা ততোধিক প্রান্তে কমিউনিকেশন পাথ সৃষ্টি করে টাইম শেয়ারিং দ্বারা একই সময়ে বিভিন্ন ব্যবহারকারী নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে চলে৷ কন্ট্রোল চ্যানেল (যেখানে শুধুমাত্র ডেটা থাকে) ডিজিটাল তথ্য কম্পিউটার চালিত রেডিও ইউনিটে পাঠায়৷ ট্রাফিক চ্যানেল (ভয়েস ডাটা) মূলতঃ ভয়েস ও ডেটা একই সাথে রেডিও চ্যানেলের দুই বা ততোধিক প্রানত্মে তথ্য আদান প্রদান করে থাকে৷ ডিজিটাল মেসেজ ছাড়াও নিরাপদ ও সতর্কতার সাথে তথ্য আদান প্রদান ও রেকর্ডিং এর মত কাজ করা সহজ করে দিয়েছে এই প্রযুক্তি৷ এখানে একটি কথা না বললেই নয়; উক্ত প্রযুক্তিটিতে এনালগ ও ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন দু'টোরই সমন্বয় সাধন করা হয়েছে৷ আরও একটি মজার কথা হলো, জিপ প্রোগ্রামের সাহয্যে যে কোন পুরোনো কথা হিষ্টোরী থেকে তুলে আনা যাবে৷ এর জন্য প্রতি মাসের রেকর্ড হয়ে যাওয়া কথাগুলোকে আলাদা ভাবে একটি সিডিতে রাইট করে ফেলা হয়৷ ট্রাংকিং কমিউনিকেশনের কারনে র্যাব -এর যেমন টিএন্ডটির প্রতি নির্ভরতা কমে যাবে তেমনই র্যাবের নিজস্ব একটি শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিস্থাপিত হবে৷
এমডিটি ডেটা ট্রান্সফার এটি শক্তিশালী সফটওয়্যার/হার্ডওয়্যার সিস্টেম৷ তথ্য আদান প্রদান এবং গোপনীয়তা রা করার জন্য এ ধরনের কৌশল প্রয়োগ চমত্কার ভূমিকা রাখে৷ ওয়্যারল্যাস বা রেডিও কমিউনিকেশন -এর মাধ্যমে ডাটা আদান প্রদান করা হয়ে থাকে৷ টহলরত র্যাব সদস্যদের খবরাখবর এবং পরস্পরের মধ্যকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সুরতি করার জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে৷ তথ্য অনুসন্ধানের জন্য তৈরি করা হয়েছে রিমোট ডাটাবেজ৷ শুনলে হয়তো অবাক হবেন, এখানে ফ্রী টেঙ্ট মেসেঞ্জিংয়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে! যেটা কিনা আমার সাধারনত এসএমএস বলে চিনি৷ ওয়েবভিত্তিক মেসেঞ্জিংয়ের ডাটাবেজ তৈরী করা হয়েছে বিভিন্ন কাসটোমাইজ সফটওয়্যারের সাহায্য৷ এক নজরে এমডিটি ব্যবহারের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক- ১. গতিশীল অবস্থায় বিভিন্ন অবস্থান থেকে সঠিক তথ্য আদান প্রদান৷ ২. সহজেই ডাটাবেজ থেকে তথ্য পাওয়া সম্ভব৷ ৩. ফ্রি টেঙ্ট মেসেনজিংয়ের ব্যবস্থা ৷ ৪. তথ্য পূর্ণাঙ্গ রূপে সংরণ৷
মাইক্রোওয়েভ লিঙ্ক যেহেতু বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ; তাই রেব-এর তুখোড় প্রকৌশলীদের প্রথমেই ভাবতে হয়েছে ভালো সার্ভিসের মধ্য দিয়ে কিভাবে খরচ কমানো যায়৷ যার ফলশ্রুনতি তারা ব্যবহার করা শুরু করে মাইক্রোওয়েভ লিঙ্ক৷ মাইক্রোওয়েভ লিঙ্ক প্রযুক্তিতে রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করা হয়৷ যার ফলে বিশাল একটা এলাকা তারবিহীনভাবে কভার করা যায়৷ আর এই প্রযুক্তিতে খুব দ্রুততার সাথে ডাটা আদান প্রদান করা যায়৷ এর মাধ্যমে একই সময়ে একই তথ্য সবার ট্রাঙ্কিং রেডিও ফোনে চলে যায়৷ শক্তিশালী এই প্রযুক্তিটির কারনে রেব বাহিনীতে এখন তারবিহীন উন্নত ইন্টারনেট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে৷
ভিডিও কনফারেন্সিং ভিডিও কনফারেন্সিং এর মতো চমত্কার ব্যপারটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এতোদিন পর্যন্ত কাগজপত্র বা সিনেমাতেই সীমাবদ্ধ ছিলো৷ কিন্তু র্যাব উক্ত প্রযুক্তিটিকে নিজেদের সময় বাঁচানো ও কোন বিষয়ে কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে দ্রম্নত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তাদের অফিসে স্থাপন করেছে৷ একই সাথে অনেক জন ব্যাক্তি উক্ত সিস্টেমে একে অপরকে দেখতে পারেন ও কথা বলতে পারেন৷ যথেষ্ট শক্তিশালী ডেটা ট্রান্সফার রেটসহ উক্ত ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমে সাবলীলভাবে যে কোন একটি মিটিং অনায়াসে শেষ করা যায়৷
সারা দেশে কাজ হবে একই সময়ে একই সাথে র্যাব অফিসেই আছে বিশাল বিশাল সব সার্ভার৷ তারা তাদের উত্তরার প্রধান কার্যালয়ে স্থাপন করেছে যোগাযোগ ও ব্যবস্থাপনা তথ্য সার্ভিস (এমআইএস)৷ এখান থেকেই র্যাব বাহিনী দরকার হলে সরাসরি র্যাব, পুলিশ অথবা আর্মির বিভিন্ন ইউনিটের সাথে যে কোন সময়ে যোগাযোগ করতে পারে৷ দরকার হলে তারা ল্যান্ড থেকে হ্যালিকপ্টারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে৷ এছাড়াও সারা দেশেকে র্যাবের নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হচ্ছে৷ বর্তমানে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাকে ঢাকার সাথে যুক্ত করার জন্য একটি অভিন্ন ডিজিটাল হাইওয়ে স্থাপন করা হয়েছে৷ সিলেট ও বরিশালকেও এর আওতায় আনার জন্য দ্রম্নত কাজ এগিয়ে চলেছে৷ জানা গেছে সম্পূর্ণ বাংলাদেশকে এক নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে আনতে প্রায় আরও পাঁচ বছরের মতো লেগে যেতে পারে৷ অন্যদিকে বিআরটিএ, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন বিভাগ, এসবি মন্ত্রণালয়সহ সংশিস্নষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সাথেও নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে র্যাব যোগাযোগ বিভাগের৷
অপরাধী সনাক্তকরনের জন্য ডেটাবেজ প্রচলিত পদ্ধতি তথা খাতাপত্রে অপরাধী সম্পর্কিত তথ্য জমাতে গেলে বিশাল এক ঝামেলার সৃষ্টি হয়৷ যেটা খুব শক্তভাবে অনুভব করছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী৷ আর তাই রেব এবার এদিক দিয়ে খুব সজাগ৷ অপরাধী সনাক্ত করার জন্য তৈরি করা হচ্ছে এক বিশাল ডেটাবেজ; যেখানে অপরাধীদের অপরাধমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডসহ তাদের বিভিন্ন বায়ো-তথ্য থাকবে৷ সাথে আরও থাকবে প্রশাসন, নিরাপত্তা কোড ও ওয়েবসাইট এবং যানবাহন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যসমূহ৷ এই মূহুর্তে র্যাব অবশ্য তথ্যসমূহ হাতে লিখে রাখছে, তবে সফটওয়্যারটি তৈরি হয়ে যাওয়ার পর এগুলো ডেটাবেজ সফটওয়্যারে উঠে যাবে৷ ২০০৬ -এর জুন নাগাদ সফটওয়্যারটি তৈরির সমস্ত কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে কর্তৃপ আশা করছেন৷ অন্যদিকে সাধারন অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে লিন্যাক্স।
আলোচিত বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পূর্ন ভাবে স্থাপন করতে বাজেটের প্রয়োজন হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকার৷
রেব এর অফিশিয়াল ওয়েব সাইট হচ্ছে: http://www.rab.gov.bd